কক্সবাংলা ডটকম(১৬ এপ্রিল) :: কডিভ-১৯-এর কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, ভেঙে পড়ছে অর্থনৈতিক কাঠামো, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-ইন্ডাস্ট্রি লকডাউন, বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, দেশে দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সীমান্ত, স্থবির হয়ে গেছে বিনোদন ও খেলাধুলার জগৎ। এমনকি ধর্মীয় প্রার্থনাস্থলগুলোও এখন খালি পড়ে আছে। কোনো কোনো দেশে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলেও একেবারে থেমে যায়নি। পাশাপাশি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও সমানভাবে বিদ্যমান।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এপিডেমিওলজিস্ট মার্ক লিপসিথস বলেন, আমরা জীবনকে কোনোভাবে ভেলায় ভাসিয়েছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত না কীভাবে তীরে পৌঁছাব। এর মাঝে আক্রান্ত দেশগুলোর সরকারকে তিন ভাগে ভাবতে হচ্ছে। সেগুলো হলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য, জনমানুষের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। পাশাপাশি প্রশ্ন হচ্ছে, স্কুল, রেস্টুরেন্ট ও অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো কবে নাগাদ খোলা যেতে পারে? বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সমাজকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াটা এখনো অনেক দূরের পথ। এটা করতে হবে ধীর কদমে। এ নিয়ে বিশেষ কোনো সাহসী পরীক্ষার পরিণাম হতে পারে ভয়ংকর।
এদিকে করোনায় একজন থেকে অন্যজনের আক্রান্ত হওয়ার যে হিসাব ‘জ’ দিয়ে বিষয়টা বুঝতে চাইছেন এপিডেমিওলজিস্টরা। ‘জ’ যদি এক এর বেশি হয়, তবে ধরে নিতে হবে প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। অন্যদিকে ১-এর নিচে গেলে বুঝতে হবে এটা সংকুচিত হচ্ছে। এখন ‘জ’-কে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারকে তিনটি বিষয়ের গাঁট বাঁধতে হবে বলে মনে করছেন গ্যাব্রিয়েল লিউং। সেগুলো হলো আক্রান্তদের আইসোলেটেড করা ও তাদের সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করা, সীমান্তে কড়াকড়ি বজায় রাখা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা।
সিঙ্গাপুর, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়া মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে শুরু থেকেই আগ্রাসী অবস্থানে গিয়ে। তারা পরীক্ষা করে আক্রান্তকে আইসোলেট করেছে এবং তাদের সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে। এ সময় সমাজের বাকি অংশের ওপর বিধিনিষেধ ছিল হালকা। তবে এ কৌশল নির্ভর করছে আপনি কত বেশি পরীক্ষা করে দেখতে পারছেন তার ওপর। কিন্তু সর্বত্র এটি বিরল। কারণ টেস্টিং কিটসহ অন্যান্য উপকরণের স্বল্পতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতি সপ্তাহে লাখের ওপর পরীক্ষা করছে। শেষ কয়েক সপ্তাহ ধরে এটি আরো বেড়েছে। তার পরও যেখানে তাদের থাকা উচিত, সেখানে নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে আরেকটি কঠিন কাজ। এর জন্য বেশ পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য এ কাজটি করার জন্য ৫০০ জনকে ভাড়া করেছে। কিন্তু এক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে সব মিলিয়ে এক লাখ ট্রেকারকে তৈরি করা দরকার।
অবশ্য মোবাইল ফোনের অ্যাপস এ বিষয়টিতে মানুষকে সাহায্য করতে পারে। যেখানে জানা যাবে কারা কারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছে। কিন্তু এর সঙ্গে মানিয়ে নেয়া ও প্রয়োগ করা খুব সহজ না। বেশ কয়েকটি দেশে অবশ্য গুগল ও অ্যাপল একত্রিত হয়ে কাজটি পরিচালিত করছে। যেটাকে তারা নাম দিয়েছে প্যান-ইউরোপিয়ান প্রাইভেসি প্রিসার্ভিং প্রক্সিমিটি ট্রেকিং।
অবশ্য এর অন্য জটিলতাও আছে। কীভাবে একটি দেশের যথেষ্টসংখ্যক লোক বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রদানের জন্য এ অ্যাপসটি ডাউনলোড করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে? এছাড়া কীভাবে সংস্পর্শে আসাদের প্রকৃত সংখ্যা সঠিকভাবে গণনা করা যাবে? তাই আশার আলো দেখালেও এখনই এ প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা কঠিন।
এরপর আসে সীমান্তে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি। অনেক দেশ এরই মধ্যে সীমান্তগুলোতে ভিনদেশীদের প্রবেশ আটকে দিয়েছে। দেশীয়দের আসার সঙ্গে সঙ্গে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে কয়েক সপ্তাহ ধরে এটি চলছে। যার ফলে ভাইরাস নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কিছুটা কমে আসে। এ ব্যবস্থা একটি জায়গায় ভাইরাসটিকে আটকে রাখা যেতে পারে।
সামাজিক দূরত্ব হচ্ছে বর্তমান সময়ে কৌশলগত দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা কিনা ভাইরাসের বিস্তৃতি কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এটি সম্ভব হয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে। অনেক দেশ আশা করছে কন্টাক্ট ট্রেকিং করে আইসোলেশনের বিধিনিষেধ শিথিল করা যেতে পারে। ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়া ছোট দোকানগুলো খুলে দিয়েছে। অন্যগুলো ১ মে থেকে খোলা হবে। কয়েক সপ্তাহ পর রেস্টুরেন্টগুলোও খুলে দেয়ার কথা ভাবছে তারা। অবশ্য ফ্রান্সসহ অনেকেই লকডাউন বাড়িয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞ মত হচ্ছে, এখানে কোনো নিরাপদ পথ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। কারণ কোনো নিয়ন্ত্রিত নিরীক্ষাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার সঙ্গে তুলনীয় নয়। যেহেতু নিশ্চিত কোনো প্রমাণ এখন আমাদের কাছে নেই। পাশাপাশি এ মুহূর্তে প্রমাণভিত্তিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়াও কঠিন। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বিভিন্ন দেশ নানা ধরনের নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে যাবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
তবে এ মুহূর্তে সম্ভাব্য উদাহরণ হতে পারে সিঙ্গাপুর ও হংকং। যারা কিনা সম্ভাব্য সুযোগ বুঝে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। আবার যখনই পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তারা নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে এনেছে। ‘দমন ও উত্তোলন’-এর এ নীতিতে সাফল্য পেয়েছে তারা। এভাবে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ, অসন্তোষ হ্রাস ও অর্থনৈতিক ক্ষতিও কমিয়ে রাখতে পেরেছে।
সায়েন্স ম্যাগাজিন
Posted ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy