কক্সবাংলা ডটকম :: ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলছে সবকিছু। চারপাশে সাইরেনের শব্দ। ধোঁয়ায় অন্ধকার আকাশে চক্কর দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের হেলিকপ্টার।
চারিদিকে হন্যে হয়ে ছুটে চলেছেন লোকজন। কে কোথায় যাবেন বুঝতে পারছে না। সবার চেহারায় আতঙ্ক ছেয়ে গিয়েছে। বাড়ি-গাড়ি ফেলে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা।
এদিকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল নিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক দলীয় গভর্নরের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। ট্রাম্প পানি সংকটের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ইতিহাসের ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি। এই বিধ্বংসী দাবানলে এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বহুমূল্যের ঘর ও গাড়ি। এরই মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের। সেইসঙ্গে চলছে লুটপাট।
আগুনের ভয়ংকর লেলিহান শিখার হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে লস অ্যাঞ্জেলেসের ১ লক্ষ ৭৯ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রয়োজনে সময় আরও বাড়ানো হতে পারে। এদিকে ৬ টি দাবানলের মধ্যে ৩ টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের দল। তাই ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে মনে করছে তাঁরা।
প্রাথমিকভাবে দাবানলে পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানা গেলেও, শুক্রবার বিধ্বংসী দাবানলে পুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০ জনে। হতাহতের শঙ্কা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, যেসব ব্যাংক, ক্যাফে, সুপারমার্কেটে তাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেগুলার সবই পুড়ে গেছে।
মাইকেল পায়টন নামের এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসকে বলেন, পুরো প্যালিসাদেস ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো শহরটি শেষ। এটি পুরোপুরি একটি বিপর্যয়।
গত কয়েকদিন ধরেই সেখানকার আবহাওয়াবিদরা দাবানলের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছিলেন।
তারা বলছিলেন, আবহাওয়া বেশ শুষ্ক হয়ে পড়েছে। তাদের সেই সতর্কতা সত্যি হয়ে এখন সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে, বাড়ির পর বাড়ি, গাছপালা সবকিছু দাবানলে দাউদাউ করে জ্বলছে। এই আগুন নেভাতে সেখানে বর্তমানে ৭ হাজার ৫০০ ফায়ারকর্মী কাজ করছেন।
দাবানলের কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছে পোষা প্রাণীরাও। এসব প্রাণীর জন্য নিরাপদ আশ্রয় পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকদের। এরমধ্যে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে।
তারা তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রাণীদের রাখতে দিচ্ছে। এছাড়া কিছু হোটেল বিপদগ্রস্ত মানুষকে কমমূল্যে রুম ভাড়া দিচ্ছে। সঙ্গে পোষা প্রাণীদেরও রাখার সুযোগ দিচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার অগ্নি বিশেষঞ্জ শেড হ্যানসন বিবিসিকে বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটি তাকে বেশ অবাক করেছে।
আগুন এতটাই ছড়িয়েছে যে কোনো কোনো জায়গার সব ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ফায়ার ফাইটাররা যখন দাবানলটির তীব্রতা দেখল তখন তারা এটি নিয়ন্ত্রণ করার বদলে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কাজটি করলো।
এখন পর্যন্ত দাবানলের আগুনে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে যদি শুরু থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে না নেওয়া হতো তাহলে সংখ্যাটি কয়েকশ হতে পারত।
লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলের কারণে ইতালি সফর বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত তিনি এই বিপর্যয়ের ওপর নজর রাখবেন।
বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত সহায়তা করবেন।
এদিকে দাবানলের আগুনের কারণে সেখানে স্বাস্থ্যগত ঝুকিও তৈরি হয়েছে। অন্তত দুটি পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষকে কলের বদলে বোতলজাত পানি পানের আহ্বান জানিয়েছে।
অ্যান রিমিয়ন নামের এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, আগুনের দাহ থেকে যে সূক্ষ্ম কণা পদার্থ বের হয়, সেটি অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে।
তিনি সতর্কতা দিয়ে বলেছেন, দাবানল থেকে যারা দূরে আছেন তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আগুনের এসব কণা ফুসফুস এমনকি ধমনীতে পর্যন্ত প্রবেশ করে যে কাউকে অসুস্থ করে দিতে পারে।
Posted ১:৪২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta