বৃহস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

শিক্ষাপঞ্জির পাঠ্যবই বিতরণ লেজেগোবরে

রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫
19 ভিউ
শিক্ষাপঞ্জির পাঠ্যবই বিতরণ লেজেগোবরে

কক্সবাংলা ডটকম(৫ জানুয়ারি) :: পাঠ্যবই বিতরণে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রতিষ্ঠানটি চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪১ কোটি পাঠ্যবই ছাপিয়ে বিতরণের কথা বললেও বছর শুরুর প্রথম পাঁচ দিনে ছাপিয়েছে মাত্র ৯ কোটি বই।

বাকি পাঠ্যবইয়ের ছাপা কবে নাগাদ শেষ হবে এবং কবে বিতরণ হবে তারও কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দিতে পারেনি এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠানটির এমন অদক্ষতার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এবার প্রায় ৮শ কোটি টাকা বেশি খরচ করে বই ছাপানো শুরু করলেও বছরের প্রথম সপ্তাহে কোনো শিক্ষার্থী একটি বই, কোনো শিক্ষার্থী তিনটি বই পেয়েছে। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী একটি বইও পায়নি। বই না পাওয়ায় বছরের প্রথমদিন থেকে স্কুলে ক্লাসও শুরু হয়নি।

অথচ সরকারের ঘোষিত শিক্ষাপঞ্জিতে বছরের প্রথমদিন থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। বছরে প্রতিটি বিষয়ে গড়ে ৭৫ থেকে ৯২টি ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু বই না থাকায় বছরের শুরু থেকেই এলোমেলো অবস্থায় শিক্ষাপঞ্জির যাত্রা শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বছরের প্রথমদিনে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে।

৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিক স্তরের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির সব বই, ১০ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের প্রায় আটটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাবে।

গতকাল এনসিটিবিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির নির্ধারিত সময় অর্থাৎ আজ চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই শিক্ষার্থীরা সব পাবে না। এর ফলে ঘোষিত বাকি সময়গুলোতেও শিক্ষার্থীরা বই পাবে না।

সবমিলিয়ে বই বিতরণের সবশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এনসিটিবির ঘোষিত ২০ জানুয়ারি কেন, আগামী এপ্রিল মাসের আগে শিক্ষার্থীরা সব বই হাতে পাবে না।

এরফলে প্রশ্ন উঠেছে, বই পেতে শিক্ষার্থীর চার মাস সময় লাগলে শিক্ষাপঞ্জি ১১ মাসে শেষ হবে কী করে? অর্থাৎ শিখন ঘাটতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা চলতি বছরও শেষ করবে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, প্রাথমিকে গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১১ কোটি বইয়ের মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে পৌনে পাঁচ কোটি বই বিভিন্ন উপজেলায় চলে গেছে।

মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি স্তরে প্রায় ৩১ কোটি বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে মাত্র ৪ কোটি বই। এর মধ্যে পৌনে চার কোটি বই বিভিন্ন উপজেলায় চলে গেছে।

এনসিটিবি ঘোষিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা বই পাচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাপাখানার (প্রেস মালিক) মালিকরা খুব খারাপ আচরণ করছে। নানা অজুহাতে তারা বই ছাপাতে চাচ্ছে না। তবু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাতে বই ছাপা শেষ হয় তার জন্য এনসিটিবির চেষ্টা অব্যাহত আছে।

অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বই ছাপাতে টাকার পরিমাণও বেশি, তবু কেন বই দেয়া গেল না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (ছাপাখানার মালিকরা) আমাদের দেয়া কথা রাখেননি।

শিক্ষাপঞ্জির বিষয়ে তিনি বলেন, মুদ্রিত পাঠ্যবই না হলেও অনলাইনে বইগুলোর পিডিএফ কপি আপলোড করা হয়েছে। সেখান থেকে ডাউনলোড করে পড়াশুনা চালিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা আছে। এর ফলে শিক্ষাপঞ্জিও এলোমেলো হওয়ার কথা নয়।

তবে ছাপাখানা মালিকদের সংগঠনের সহ সভাপতি জুনায়েদ আর মাহফুজ বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বইয়ের সংখ্যাও বেশি। অন্যান্য বছর বই ছাপাতে ৮ মাসে যে পরিমাণ কাজ হতো; তা এবার ২৪ ঘণ্টা কাজ করে ৩/৪ মাসে হচ্ছে। এখন ২৪ ঘণ্টাকে আমরাতো ৪৮ ঘণ্টা করতে পারব না। সবমিলিয়ে এনসিটিবি আমাদের দায় দিয়ে যে কথা বলছে, তা সঠিক নয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন বইয়ের গন্ধ দেশের প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী এখনো পায়নি। গত ১৫ বছর ঘটা করে বছরের প্রথম দিন শিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন বই। প্রতি বছর বই উৎসবে নতুন বই পেতে শিশুরা স্কুলে হাজির হতো। এ বছর এই চিত্র ছিল অনুপস্থিত। খরচ কমানোর অজুহাত দেখিয়ে বই উৎসব বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে এবার বছরের প্রথম দিনে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল কম।

এছাড়া এ বছর আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, সবাই বছরের প্রথম দিন বই পাচ্ছে না। শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে একটি বা দুটি করে নতুন পাঠ্যবই। তাও সব শ্রেণির না। আবার কোথাও কোথাও পাঠ্যবই না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা।

এ দিন নতুন বই পেয়েছে যেসব শিক্ষার্থী, তাদের মুখে হাসি ফুটলেও যারা পায়নি তাদের মলিন বদনে ফিরে যেতে হয়েছে।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন খারাপের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এ বইগুলো ছাপাতে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো অবস্থা হয়েছে। বিদেশে বই ছাপানো হবে না। অনিবার্য কারণে শিক্ষাক্রমও পরিবর্তন করা হয়েছে, এতে বইয়ের

সংখ্যা বেড়েছে। যে সময় থেকে এই কাজ শুরু করা হয়েছে, তখন সময়ও খুব কম ছিল। তার মধ্যে আবার অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে; যাতে দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে যেন বইয়ে থাকে। তারপর আবার উন্নত মানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ, উন্নত মানের মলাটের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।

আরেকটি বড় সমস্যা হলো, এনটিসিবিতে যারা এত দিন ধরে কাজ করেছেন, তাদের অনেককে অনিবার্য কারণে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে আগে অভিজ্ঞতা ছিল এমন মানুষদেরই বসানো হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়া করতে হয়, এটি তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। মূলত এসব কারণে নির্ধারিত সময়ে সব বই ছাপা যায়নি বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন উপদেষ্টা।

শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শনিবার অন্তত ৫ জন ছাপাখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনসিটিবিতে এখন যারা কর্মরত তাদের অধিকাংশই নতুন। তারা জানেনই না কীভাবে প্রেস মালিকদের কাছ থেকে বই ছাপানোর কাজ আদায় করে নিতে হয়। তাদের এই অনভিজ্ঞতায় প্রেস মালিকরা সুযোগ নিচ্ছে।

কীভাবে এই সুযোগ নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রেস মালিক বলেন, বই ছাপানোর জন্য এনসিটিবি প্রেসের সঙ্গে চুক্তি করে। এই চুক্তি যেদিন হবে সেদিন থেকে আইন মোতাবেক একজন প্রেস মালিক বই ছাপানোর জন্য জরিমানা ছাড়া ২৮ দিন সময় পাবেন। এই ২৮ দিন শেষ হলে জরিমানাসহ আরো ২৮ দিন সময় পাবেন।

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বেশির ভাগ প্রেস মালিকের সঙ্গে এনসিটিবির চুক্তি হয়েছে। কিন্তু পাঠ্যবই ছাপানো, নোট-গাইড বই ছাপানো এবং ফেব্রুয়ারিতে বই মেলাকে কেন্দ্র করে নতুন বই ছাপার কারণে কাগজের দাম মাত্রাতিরক্তি চড়া।

এই চড়াদামে কাগজ কিনে নোট-গাইড এবং বইমেলার বই ছাপালে ভালো মুনাফা পাওয়া যাবে। কিন্তু চড়াদামে কাগজ কিনে পাঠ্যবই ছাপালে মুনাফা পাওয়া যাবে না। একারণে প্রেস মালিকরা কাগজ সংকট দেখিয়ে সেই ৫৬ দিনের (২৮ গুন ২) অপেক্ষায় আছেন।

অর্থাৎ আইন অনুযাযী হাতে ৫৬ দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে কাগজের দামও কমবে। তখন তারা দ্রুতগতিতে কম দামে কাগজ কিনে পাঠ্যবই ছাপিয়ে দিয়ে পুরো মুনাফা করবে। আবার অন্যদিকে বেশি দামে কাগজ কিনে নোট-গাইড ও বইমেলার বই ছাপিয়ে দিয়ে বেশি দামে বই বেচে মুনাফা করবে। দুদিক থেকেই তারা লাভবান হতে চান। প্রেস মালিকদের এই কৌশলের কাছে কুপোকাত হয়ে গেছেন এনসিটিবিতে বর্তমানে কর্মরতরা। আর পাঠ্যবই না পেয়ে এর খেসারত দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এনসিটিবির এক দল কর্মকর্তা শনিবার রাজধানী ঢাকার বাংলাবাজারে বিভিন্ন প্রেস পরিদর্শনে যান।

পরিদর্শন শেষে শনিবার সন্ধ্যায় ওই দলের একাধিক সদস্য (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ৭০ থেকে ৯০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপিয়ে দেবে এমন একাধিক প্রেস পরিদর্শনে দেখেছি, পাঠ্যবই না ছাপিয়ে ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত বই মেলার বই ছাপাচ্ছে।

প্রশ্নের উত্তরে ওই প্রেস মালিকরা বলেছেন, সংকটের কারণে তৈরি হওয়া কাগজের মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে না। কাগজ আসার পরই পাঠ্যবই ছাপানো হবে।

এ অবস্থায় আপনারা কিছু বললেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী প্রেসগুলো জরিমানা ছাড়া ২৮ দিন এবং জরিমানা দিয়ে আরো ২৮ দিন সময় পাবে। এই ৫৬ দিনের মধ্যে আমরা কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারব না।

তাহলে পাঠ্যবইয়ের কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ৫৬ দিনের শেষ দিকে এসে প্রেস মালিকরা বই ছাপার কাজ শুরু করবে। আমরাও পরিদর্শনে গিয়ে দেখব, বই ছাপা চলছে। ছাপার জন্য কিছু বই বাকি থাকলে প্রেস মালিকরা এনসিটিবিতে চিঠি দিয়ে বাড়তি এক সপ্তাহ সময় চেয়ে নেবে।

প্রতিবছরই তারা বই ছাপিয়ে দেয়, সেই হিসেবে এনসিটিবি থেকে প্রেসগুলোও এক সপ্তাহ সময় পাবে। সবমিলিয়ে নির্ধারিত সময়ে বই না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি তৈরি হবে শিখন ঘাটতি। এরফলে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত হবে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পড়াশোনা করে ওই শিক্ষার্থী জাতিকে কী সেবা দেবে?

19 ভিউ

Posted ১:৩১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com