কক্সবাংলা ডটকম(৪ আগস্ট) :: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে কেউ দলীয়ভাবে সমর্থন দিয়েছেন, এটাকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চেয়েছে।’
ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক অপশক্তি মদদ দিচ্ছে, সেটা আমরা খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করছি, আমাদের বিভিন্ন সংস্থা লক্ষ্য করছে। শেষ পর্যন্ত আমরা ধৈর্য ধরে যাবো। আমাদের বিশ্বাস ছাত্রছাত্রীরা আস্তে আস্তে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। আরো দুই একদিনের মধ্যে হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
শনিবার (৪ আগস্ট) দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে থেকে কেউ যাতে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে তার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের গতিবিধি গোয়েন্দাবাহিনী লক্ষ্য রাখছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবি আমলে নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। মালিক-চালক-হেলপার বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। আমরা মনে হয়, এর মধ্য দিয়ে এ পরিস্থিতিতে সরকার তার জরুরি কাজটি করে ফেলেছে। দুই পরিবারকে ডেকে সান্ত্বনা দিয়েছে, সহায়তা করেছে। দুই পরিবারের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। ওই দুই পরিবারও শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এরমধ্যেদুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় আন্ডারপাস করার কাজও করা হচ্ছে, এটি সেনাবাহিনী করছে। স্পিড ব্রেকারের দাবির প্রেক্ষিতে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রাম্বলস্ট্রিটও করা হবে। ফিটনেসবিহীন সব গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করা হবে। ইতোমধ্যে বিআরটিএ এর কাজও শুরু করেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছি। এগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। তাদের প্রতিবাদের কণ্ঠকে স্বাগত জানিয়েছি। এখানে কোনও গোপনীয়তা নেই।’
যারা শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরতে বলেছেন, তাদের শুভবোধকে স্বাগত জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা কোমলমতিদের আন্দোলনে ঢুকে রাজনীতির বিষবাষ্প দিতে চেয়েছেন, নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছেন, এদের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।’
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দমন না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ ধৈর্যধারণ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শান্তির স্বার্থে শিক্ষার্থীদের বাড়ি/ক্যাম্পাসে ফেরাতে অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপি ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগের যে দাবি করেছে তার জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মতো নালিশ পার্টির টপ টু বটম নেতারা পদত্যাগ করলে দেশের মানুষ স্বস্তি পাবে।’
বাস চালক ও শ্রমিকদের অঘোষিত আন্দোলনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শঙ্কায় চালকরা নামতে চাইছে না। আমরা নামাতে চেষ্টা করছি।’
এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ অংশ নেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো রাস্তায় নেমেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, মতিঝিলের শাপলাচত্বর, আইডিয়াল স্কুল মোড়, শান্তিনগর ও মিরপুরের একাধিক এলাকায় যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করছে শিক্ষার্থীরা।
শুধু তাই নয়, তারা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে মিরপুর দুই নম্বর সেকশন ও দশ নম্বর সেকশনের রাস্তায়।
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরের দিন ৩০ জুলাই থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে একত্রিত হয়ে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও সড়ককে নিরাপদ করতে ৯ দফা দাবি জানায় তারা।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণ করা হয়েছে। এখন তাদের উচিৎ দ্রুত ক্লাসে ফিরে যাওয়া। শুধু তাই নয়, এ আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হতে পারেও বলে আশঙ্কা সরকারের।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া ও রাজীব।
ওই সময় কুর্মিটোলা ফ্লাইওভারের কাছে শিক্ষার্থীরা বাসের জন্য ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলে। দুটি বাসের রেষারেষিতে একটি বাস শিক্ষার্থীদের উপর উঠে যায়। ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হয়।
এঘটনার পর ফুঁসে ওঠে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে রাজপথে নামতে থাকে তারা।