কক্সবাংলা ডটকম(১৩ জুন) :: সরকারি দপ্তরগুলোয় মোট পদের এক-চতুর্থাংশই খালি রয়েছে। এসব পদ খালি থাকায় প্রশাসনের কাজের গতি যেমন কমেছে, তেমনি সেবা পেতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এসব শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে একাধিকবার নির্দেশনা দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ নেই।
জাতীয় সংসদে গতকাল প্রশ্নোত্তর পর্বে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগসহ সরকারি দপ্তরগুলোয় মোট শূন্য পদের সংখ্যা ৩ লাখ ২৮ হাজার ৩১১। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুমোদিত পদসংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার ৭০৪। এ হিসাবে সরকারি দপ্তরগুলোয় মোট পদের এক-চতুর্থাংশই খালি রয়েছে।
সরকারি দপ্তরগুলোয় পদ খালি থাকলেও দেশে ২৬ লাখ পূর্ণ বেকার কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে দেশে পূর্ণ বেকারের এ সংখ্যা উঠে এসেছে। জরিপে জানা যায়, শতাংশের হিসাবে দেশে পূর্ণ বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। নারী জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। পুরুষের বেকারত্বের হার ৩ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হলে পূর্ণ বেকারের সংখ্যা কমবে। ফলে সাধারণ শিক্ষিত যারা সুযোগের অভাবে চাকরি পাচ্ছেন না, তারা উপকৃত হবেন।
এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এত শূন্য পদের কারণে সরকারের কাজের ক্ষতি হচ্ছে, সাধারণ জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। অন্যদিকে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী চাকরি পাচ্ছে না। সব দিক থেকেই ক্ষতি হচ্ছে। যারা নিয়োগের দায়িত্বে আছেন, খালি পদগুলো তাদের অদক্ষতার পরিচয় বহন করছে।
নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া যত দ্রুত করা যায়, তত দ্রুত এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। তবে শুধু অদক্ষতাই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে এ বিষয়টিকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করা হচ্ছে, কোনো কোনো সময় নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অকারণে জটিল করে ফেলা হচ্ছে। চলমান এ প্রক্রিয়াকে তাই আরো দক্ষ করতে হবে। এর মাধ্যমে অব্যাহতভাবে নিয়োগ দেয়াটাই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায়।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারি অফিসগুলোয় শূন্য পদে লোক নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ওইসব শূন্য পদে জনবল নিয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে।’
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতার কারণ খুঁজে বের করতে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক অনুসন্ধান চালায়। এতে দেখা যায়, পদ সৃজন থেকে শুরু করে পদ পূরণ পর্যন্ত একেকটি নিয়োগে সর্বোচ্চ সাত বছরের বেশি সময় লাগে। এ সময় কমিয়ে আনতে সচিব কমিটি ১১ দফা সুপারিশ করে। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ রয়েছে যথাক্রমে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৩ ও ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৪৫টি। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর অনুমোদিত পদ রয়েছে সবচেয়ে বেশি ১০ লাখ ৭৭৬টি। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৬২০। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে অনুমোদিত পদসংখ্যা ১৪ হাজার ৩৮৭, বিভিন্ন অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ১৩ লাখ ১৮ হাজার ২৫৭ এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৬০টি।
অনুমোদিত এসব পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৯৩ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৬৫ জন। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পদে নিয়োগপ্রাপ্তের সংখ্যা ৮ লাখ ৪০ হাজার ২৩৭।
পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে কর্মরত ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭২ জন। নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয় রয়েছেন ১০ হাজার ৭৮০ জন, বিভিন্ন অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ১১ লাখ ৪ হাজার ২৩২ এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮১ জন।
সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বিভিন্ন অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে। এসব দপ্তরে মোট পদ খালি রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৫টি। বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনে শূন্য পদ রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৭৯টি। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পদ খালি রয়েছে ৩ হাজার ৬০৭টি।
শূন্য পদগুলোর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ ৪৪ হাজার ৫৪৪টি। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৯ ও চতুর্থ শ্রেণীর ৭০ হাজার পদ শূন্য রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভিন্ন পদে নিয়োগের এখতিয়ার সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি)।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ৫৫ শতাংশ পূরণ হয় বিভিন্ন কোটার মাধ্যমে। অবশিষ্ট ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় পুরোপুরি মেধাভিত্তিক। নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অন্যদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধা তালিকা থেকে ৩০ শতাংশ নিয়োগ দেয়া হয়। বাকি ৭০ শতাংশ পদ পূরণ করা হয় কোটা থেকে। কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে ওইসব পদ শূন্য রাখতে হয়।
Posted ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta