কক্সবাংলা রিপোর্ট :: ঢাকা থেকে আসা নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীদের একটি প্রতিনিধিদল টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের উত্তরপাড়ায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের ৩০০ বছরের পুরোনো বৌদ্ধবিহার পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছে।
২৩ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর আয়োজনে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক মুজিব মেহদী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও আদিবাসী ফোরামের নেতা-কর্মীরা।
এসময় উপস্থিত প্রতিনিধিদল হ্নীলার ওই বিহার পরিদর্শন শেষে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের উত্তরপাড়ায় ছিল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের ৩০০ বছরের পুরোনো একটি বৌদ্ধবিহার। সাত বছর আগে বিহারের জমি দখল শুরু করে। অবৈধ বসতি গড়ে ওঠার পর একাধিকবার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বিহারে। বর্তমানে এটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রশ্রয়ে বিহারের জমি দখল করে তৈরি হয়েছে ৪০টির বেশি বসতি।
এসময় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রোবায়েত ফেরদৌস জানান,মঙ্গলবার কয়েক দফায় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বৌদ্ধবিহার নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিহারটি রক্ষায় তাঁরা চার দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন। এই চার দফা হলো দ্রুত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের কাছে বিহার ভূমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া, ধ্বংসপ্রাপ্ত বিহার পুনঃস্থাপন এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষের নির্ভয়ে বিহারে যাতায়াত নিশ্চিত করা। ‘আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও অবৈধ দখলদারদের খপ্পর থেকে ৩০০ বছরের পুরোনো বৌদ্ধবিহারের ভূমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে এ বিষয়ে পৃথক বৈঠক করেছি। দুজনই আশ্বাস দিয়েছেন।’
২০০১ সালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সেন প্রু ক্যাং নামে পরিচিত রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌদ্ধবিহারটির তৎকালীন ভিক্ষু উ পঞঞা বংশ মহাথেরোর সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সাংসদ মরহুম মোহাম্মদ আলী। বিহারের ১১ একর ভূমির ওপর রোপণকৃত বৃক্ষের লাভের অংশ ভাগ করার উদ্দেশ্যে চুক্তিটি করা হয়েছিল। চুক্তিতে উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী মহল গাছ কাটা শুরু করে। পাশাপাশি বিহারের ভূমি দখল করে গড়ে তোলা হয় বসতঘর।
বৌদ্ধবিহার রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলা কমিটির সহসভাপতি ক্যা জ অং বলেন, বর্তমানে বিহারের জমিতে ৪০টির বেশি অবৈধ বসতি রয়েছে। এগুলো উচ্ছেদ করে বিহারের ভূমিটি পরিচালনা কমিটির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা থাকলেও বিগত সাত বছরে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। ফলে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মকর্ম করতে পারছেন না।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী,সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম,প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক আয়াছুর রহমান সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদকর্মীরা।
Posted ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Chy