
বিশেষ প্রতিবেদক :: ১৯৫৬ সালে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দর যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালে মুত্তিযুদ্ধের সময় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।পরে সংস্কার করে আবার সচল করা হয়। এর পর ধাপে ধাপে কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন করা হয়।৪টি এয়ারলাইন্স এখন এ বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে। যেটি কক্সবাজার শহর থেকে দেড় কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে ৩৯৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে এ বিমানবন্দরে। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে জলভাগের ওপরে রানওয়ে নির্মিত হচ্ছে।
নতুন রানওয়ে ও উন্নতমানের এ টার্মিনাল ভবন নির্মাণসহ বর্তমান ৩ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে এ বিমানবন্দরে। এর কাজও শেষের দিকে।
২০২৪ সালের বছরের মাঝামাঝি সমুদ্রের ওপর নির্মিত রানওয়েতে আন্তর্জাতিক সুপরিসর বিমান ওঠানামা করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্রের জলরাশি ভেদ করে রানওয়ের নির্মাণ এ অঞ্চলে এটিই প্রথম। গোটা বিশ্বে হাতেগোনা এ ধরনের রানওয়ে রয়েছে। মালদ্বীপ, কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের বিমানবন্দরের রানওয়ের চেয়েও দীর্ঘ হবে কক্সবাজারের এই রানওয়ে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে সমুদ্রের ওপর ১ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে নির্মাণের কাজ। মহেশখালী চ্যানেলের দিকে এ বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট।
এর পরের অবস্থান হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের; যার দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট। কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের এ প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে প্রায় ৭৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) ইউনুছ ভূঁইয়া জানান, পৃথিবীর উপকূলীয় শহরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে এই বিমানবন্দর। সমুদ্রের ভেতরেই থাকবে ১ হাজার ৩০০ ফুট।
সমুদ্রের নীলাভ জলরাশি ভেদ করে অবতরণ করবে এ-৩৮০-এর মতো বিশালাকৃতির উড়োজাহাজ। বিশ্বের উন্নত দেশের আদলেই বিমানবন্দর গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বেবিচক।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০২১ সালে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বেবিচক।
এই কোম্পানি চীনের আরেক প্রকৌশল কোম্পানি চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরোকে সঙ্গে নিয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে কাজ শুরু করছে। এর আগে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছিল ৯ হাজার ফুট।
বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক বলেন, ২০১২ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে সম্প্রসারণ করে ৯ হাজার ফুট করা হয়। সে সময় প্রস্থ ১২০ ফুট থেকে বাড়িয়ে ২০০ ফুট করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের লোড ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল।
পাশাপাশি আলোরও ব্যবস্থা করা হয়। নতুন করে রানওয়ে বিস্তৃত করা নির্মাণ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পথ প্রশস্ত করবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা। ২০১৯ সালে সরকার ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। যার লক্ষ্য ছিল বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে নির্ঝঞ্ঝাট ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়া।
প্রসঙ্গত,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য প্রথম কক্সবাজার বিমানবন্দরটি নির্মাণ করেছিল। যুদ্ধ শেষ হবার পর এটির ব্যবহার বন্ধ হয় এবং বহুদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার এর সংস্কার করে এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য চালু করে। এ সময় কিছু দিনের জন্য কক্সবাজারে পিআইএর বিমান চলাচল শুরু করে তবে অনতিবিলম্বে এই ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়, এভাবে দুই দফা পিআইএর ফ্লাইট চালু হয় এবং আবার বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সংস্কার করে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালনা শুরু হয়। ওই সময় বিমানের ফ্লাইট যাতায়াত করত সপ্তাহে একদিন। পর্যটনের খরা-মৌসুমে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকত। ২০১২ সালের ৩০শে জুন বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট পুরাপুরি বন্ধ হবার আগ পযন্ত পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ বিমান প্রথমে সপ্তাহে দুটি এবং তারপর সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করত। বাংলাদেশে বেসরকারি বিমান সংস্থা আসার পর জিএমজি এয়ারলাইন্স কক্সবাজার বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে । বর্তমানে সেই ধারাবাহিকতায় বেসরকারি চারটি এয়ারলাইনস সপ্তাহের প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে (২রা অক্টোবর ২০১৪ পযন্ত তথ্য মতে )। গত দশ বছর ধরে প্রতিদিনই কার্গো বিমান এই এয়ারপোর্ট ব্যবহার করছে। কার্গো বিমানে মূলত চিংড়ি পোনা পরিবহন করা হয়।[৫][৩]
সিভিল অ্যাভিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করেছিল। ওই সময় সরকার দ্রুত বিমানবন্দরটি আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করেছিল, যাতে প্রয়োজনে যুদ্ধবিমান অবতরণ করতে পারে।


Posted ১:৩১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৭ আগস্ট ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta