হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ :: গেল বছরগুলোতে বর্ষা মৌসুমে এমন তই তই পানি টেকনাফে আর তেমনটা দেখা মিলেনি। অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে টেকনাফে তই তই পানি। প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তই তই করছে টেকনাফ। ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এতে দুদিনে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত সোমবার রাত থেকে টানা বর্ষণে নাফ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানিতে নিচু এলাকা প্লাবিত ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে মাইকিং এর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদে সরে যেতে তাগাদাও দিয়ে আসছিল তথ্য অফিস। তবে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হলেও, কিছু পরিবার নিরাপদে কিংবা আত্নীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও বেশিরভাগই সরে যায়নি।
পৌরসভা এলাকা. টেকনাফ সদর, হ্নীলা, হোয়াইক্যং, সাবরাং, বাহার ছড়া এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে বলে জানান স্থানীয়রা। অতি বৃষ্টির ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু কিছু নিচু এলাকায় প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে উপজেলার পাহাড়ি ঝিরি, খাল ও নাফ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার টেকনাফ কক্সবাজার আঞ্চলিক সড়ক হ্নীলা মাইন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ এলাকা প্লাবিত হয়ে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল জনজীবন।
সূত্র জানায়, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। এতে নাফ নদীসহ বিভিন্ন খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পৌরসভা এলাকার কলেজ পাড়া, দক্ষিণ জালিয়া পাড়া, ইসলামাবাদ ও সদর ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছিল উপজেলা জুড়ে। বুধবারেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উপজেলার বিভিন্ন খাল ও নর্দমার পানি বিপদ সীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাজাহান মিয়া, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৌলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, বাহার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন জানান, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে মাইকিং ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের মাধ্যমে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছিল। পানি বন্দী হয়ে পড়া পরিবার ও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান রত পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক সুবিধা অসুবিধার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
এদিকে পৌরসভা এলাকায় যারা পাহাড়ে কিংবা সমতলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং এর মাধ্যমে তাগাদা দেয়া হয়েছিল বলে জানান টেকনাফ সিপিপি’র আবদুল মতিন। এছাড়া সরকারি এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মায়মুনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র খোলার পাশাপাশি আশ্রয়গ্রহিতাদের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে শুকনো খাবার, খিচুড়ি ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে জানান পৌরসভার মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলাম।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও পারভেজ চৌধুরী বলেন, দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত ছিল।উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ে ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং এর মাধ্যমে তাগাদা দেওয়ার পাশাপাশি জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।
এছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যাতে দূর্যোগকালীণ সময়ে মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী সহ অর্থ সহায়তা করা হয়েছে।
Posted ৮:৩৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta