বুধবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত উপাত্তে দেখা গেছে, সর্বশেষ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ভারতের অর্থনীতির বার্ষিক সম্প্রসারণের গতি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। একে ‘২০১৭ সালের প্রথমার্ধে অর্থনীতিতে বড় ধরনের পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর’ পরিষ্কার লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই সময়ে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পৃথক তথ্যে দেখা গেছে, সর্বশেষ প্রান্তিকে ভারতের অর্থনীতি সাড়ে ৬ শতাংশ হারে প্রসারিত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুদ্রা রহিতকরণ কর্মসূচির প্রভাবে এর আগে টানা পাঁচ প্রান্তিক ভারতের অর্থনীতি শ্লথগতির মধ্যে ছিল।
প্রাথমিক হিসাবে ধারণা করা হয়েছিল, গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। মূলত নির্মাণ খাতের সুবাদেই ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে ভারতের অর্থনীতি গতি পেয়েছে। ২০১৬ সালের সর্বশেষ তিন মাসে ভারতের অর্থনীতিতে মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।
ভারতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের মাত্র এক বছর বাকি রয়েছে। ঠিক এ সময়ে অর্থনীতির ইতিবাচক খবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বেশ অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্নীতি বন্ধের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে দেশের বড় দুই ব্যাংক নোট রহিতকরণের পদক্ষেপ নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এক বছরের মধ্যেই কর ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনে ভারত।
মুদ্রা রহিতকরণ ও কর ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার— পরপর এ ধরনের দুটি বড় পদক্ষেপ ভারতের অর্থনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু সে ধাক্কা সামলে আবার এগোচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। আসছে বছরগুলোয় চীনের অর্থনীতির সঙ্গে ব্যবধান আরো কমে আসবে বলে আশা করছে দেশটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যমতে, আগামী ১০ বছরে ভারতের অর্থনীতি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে।
এদিকে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত উপাত্তে দেখা গেছে, গত বছরের সর্বশেষ তিন মাসে দেশটির অর্থনীতি ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সম্প্রসারণ হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে যা ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া তৃতীয় প্রান্তিকের ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় এটি অনেক কম। শক্তিশালী ভোক্তা চাহিদা পূরণে আমদানি বেশি হওয়াতেই প্রবৃদ্ধির গতিতে ভাটা সৃষ্টি হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকেও মার্কিন অর্থনীতি কিছুটা গতি হারিয়েছে বলে সাম্প্রতিক কিছু উপাত্তের মাধ্যমে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জানুয়ারিতে খুচরা বিক্রি, বাড়ি বিক্রয়, টেকসই পণ্যের ক্রয়াদেশ ও শিল্পোৎপাদন কমেছে।
এর ওপর রফতানি কমে যাওয়ায় গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি আরো বেড়েছে। আর এ সবকিছুর সঙ্গে মৌসুমভিত্তিক হিসাব যোগ করার পর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতিতে নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কর কর্তন ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির সুবাদে বছরের বাকি সময়ে প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য অনুযায়ী চলতি বছর মার্কিন অর্থনীতিতে বার্ষিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকবে।