মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

অ্যাকশনে সরকার : কোণঠাসা হেফাজত

রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১
389 ভিউ
অ্যাকশনে সরকার : কোণঠাসা হেফাজত

কক্সবাংলা ডটকম(১১ এপ্রিল) :: ২০১১ সালে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ ঘোষিত হওয়ার পর আলোচনায় আসে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।

২০১৩ সালের ৫ মে তাদের ভাষায় নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তি, ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন, নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করা, নারী নীতি ও শিক্ষা নীতি বাতিল করাসহ ১৩ দফা দাবিতে শাপলা চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ওই রাতে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে শাপলা চত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা এবং দমনপীড়ন নিয়ে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের দূরত্ব তৈরি হয়। পরে অবশ্য সরকার ও হেফাজতের মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা তৈরি হয়।

কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় হেফাজতে ইসলাম ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়। সংবর্ধনার ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দেয় হেফাজতে ইসলাম। তবে সম্প্রতি নানা ইস্যুতে হেফাজত ও সরকারের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে হেফাজত নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

দেশের বর্তমান রাজনীতিতে বেশ আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সম্পর্ক। হেফাজতকে কাছে টানতে এক সময় কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি এবং তাদের সমন্বিত শিক্ষাবোর্ড করে দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। হেফাজতের নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একই টেবিলে কথাবার্তাও বলে ক্ষমতাসীনরা। জবাবে নির্বাচনের আগে শুকরানা সমাবেশ করে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি দিয়ে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয় হেফাজত। এই ইতিবাচক অতীত ছাপিয়ে এখন সে সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে চলে গেছে। বলা যায়, মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ-হেফাজত।

গত মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় হেফাজতের অবস্থানকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের শেষ কোথায়? এ নিয়ে কী ভাবছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ? হেফাজতেরইবা ভাবনা কী? রাজনীতিতে এর প্রভাব কতটুকু? রাজনীতি-সচেতন সবার মুখে মুখে এখন এসব প্রশ্ন।

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাদের সামনে দুটো পথ—কওমি মাদরাসার বিশাল ছাত্রগোষ্ঠীর প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের মূলস্রোতে নিয়ে আসা। যেন তাদের ওপর হেফাজত নেতাদের নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে আনা যায়। পাশাপাশি ছাত্রদের নানাভাবে উসকে দিয়ে যারা রাজনৈতিক ফায়দা লোটে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা। ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি আর তৈরি না হয়।

ইতোমধ্যে এ ইস্যুতে অ্যাকশনে নেমে গেছে সরকার । বিভিন্ন জায়গায় হেফাজতে নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি হচ্ছে তালিকাও। মোদির আগমনকে ঘিরে যে হরতাল-সংঘাত হয়েছে , সেসবে উসকানিদাতাদের ধরে ধরে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি করা হবে। চিরুনি অভিযানেরও আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত এবং ক্ষুব্ধ হেফাজত। অস্বস্তি ও দুশ্চিন্তায় ভর করেছে সংগঠনটির বেশিরভাগ নেতার ওপর। একটি অংশ সরকারের সঙ্গে আপস না করে ‘লড়ে যাওয়ার’ পক্ষে। আরেকটি অংশ চায়, ভেবে-চিন্তে পথ চলতে। তাদের টার্গেট; সরকার এবং বিরোধী—উভয়পক্ষের সঙ্গে সখ্য রেখে হাজার হাজার কওমি মাদরাসা হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখা। রাজনীতির মাঠে লড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়ে মসজিদ-মাদরাসা আর খানকাহ রক্ষায় সচেষ্ট এই পক্ষ।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে হেফাজতের বিরোধিতাকে ঘিরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের এই মুখোমুখি অবস্থান সংঘাতে রূপ নিয়েছে। মোদির বিরোধিতায় প্রথমে ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভে সহিংসতা হয়, তার জেরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাণঘাতী সংঘাত হয়। যার জেরে ২৮ মার্চ হরতাল ডাকে হেফাজত, ওই হরতালকে ঘিরে চরম নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয় সারাদেশে। সর্বশেষ হেফাজত নেতা মুহাম্মাদ মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ড ও তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এবং শিশুবক্তা খ্যাত রফিকুল ইসলামের গ্রেফতারে আওয়ামী লীগ-হেফাজতের নেতিবাচক সম্পর্কে তুষ ছড়িয়েছে।

ক্ষমতাসীন নেতারা বলছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্ম থেকে যে সম্পর্ক, সেটিকে আরও সুদৃঢ় করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দুই দেশ নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষা, দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর সমাধান ও বাণিজ্য বাড়াতে নানামুখী তৎপরতাও চালাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে করোনা মহামারি সত্ত্বেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ প্রতিবেশী পাঁচ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে জাঁকালো আয়োজন করেছে সরকার। আওয়ামী লীগ মনে করছে, এতে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ নিয়ে জলঘোলাকারীদের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।

এদিকে, প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতাকারী হেফাজত নেতাদের দাবি, মোদি সাম্প্রদায়িক নেতা। ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের জন্য তিনি দায়ী। এ ইস্যুতে নানা সময়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশও করেছে হেফাজত। মূলত এই বিক্ষোভকে ঘিরেই পরিস্থিতি সংঘাতমূলক হয়েছে।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজত নিকট অতীতে আওয়ামী লীগের মিত্র শক্তি হিসেবেই কাজ করেছে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সরকারের সখ্য সবার জানা। শফীর জীবদ্দশায়ও মাঝে মধ্যে এই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। আবার উন্নতিও হয়েছে। শফীর মৃত্যুর পর সম্পর্কের টানাপোড়েন বেশ প্রতিভাত হয়েছে। রাজনীতির মাঠে হেফাজত নানা সময়ে নানাজনের কাছে ব্যবহার হয়েছে। বিগড়ে গেলে নিয়ন্ত্রণে আনতে ‘একটু এদিক-সেদিক’ করতে হয়। এখন সেই পরিস্থিতিতেই পড়েছে তারা।

হেফাজতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আদর্শিক দিক থেকে আওয়ামী লীগ-হেফাজতের অবস্থান দুই মেরুতে। আওয়ামী লীগের যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের চার মূলনীতি থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। তেমনি হেফাজতও তাদের ধর্মীয় অবস্থান থেকে সরে আসতে চায় না।’

‘তবে, হেফাজত যেহেতু নিজেদের রাজনৈতিক দল দাবি করে না, আমরাও তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভাবছি না। সরকারে থাকার কারণে জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। হেফাজত তথা দেশের কওমি মাদরাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও তারই অংশ। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার সে দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি সম্প্রতি যারা সহিংসতা উসকে দিয়েছে, তাদেরও কঠোরভাবে দমন করবে। সারাদেশে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

সরকারপক্ষের দাবি, মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যে পরিবেশে থেকে এবং যে শিক্ষা নিয়ে বড় হয়; সেখান থেকে দিনের পর দিন হেফাজতেই ভিড়বে, আর বিপথগামীই হবে। তাদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও যুগোপযোগী কারিকুলাম দিতে হবে। তাতে ওই সব শিক্ষার্থীর চোখ খুলবে, তারা দেশ ও বিশ্বকে জানবে। দেশপ্রেম তৈরি হবে, ঘুচবে বর্তমান অন্ধত্ব।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ইতোমধ্যে কওমি মাদরাসার ছাত্রগোষ্ঠীকে মূলধারায় আনতে তাদের সনদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাদের `আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামে সমন্বিত শিক্ষাবোর্ডও করে দেয়া হয়েছে। এই বোর্ডের অধীন কওমি মাদরাসার শিক্ষাস্তর ও কারিকুলাম নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। একটি যুগোপযোগী কারিকুলামও করে দিতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

অপরদিকে, ঢাকার বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাণঘাতী সংঘাতের ঘটনায় সম্পৃক্ত ও উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে একাধিক মামলাও হয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উসকানিদাতাদের তালিকা প্রস্তুত করে এদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন’। গত ৭ এপ্রিল তিনি বলেন, ‘যারা দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে বা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সতর্ক করছি। দেশের জনগণের ধৈর্য ও সহনশীলতার একটা সীমা আছে। সীমা অতিক্রম করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সারাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নানা কৌশলে মোকাবিলা করেছি। বেশিরভাগ এলাকায় এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে। সম্প্রতি ঢাকার বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, এতে আমরা ব্যথিত। সাম্প্রদায়িক শক্তি আওয়ামী লীগের কার্যালয়, নেতাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করেছে। কার্যালয় ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দিয়েছে সরকারি বহু নথি। এগুলা সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত এগুলো কঠোর হস্তে দমন করা। ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

জানা গেছে, আকস্মিক সৃষ্ট এ পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম নয় হেফাজত। সংগঠনটির বেশিরভাগ নেতাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সেজন্য তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যে কারণে এ বিষয়ে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা এখনই মুখ খুলছেন না। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে। তবে হেফাজত নেতারা কওমি মাদরাসায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ চান না, চান না মামলায় ফাঁসতেও।

এ বিষয়ে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লাহ আমিন বলেন, ‘হেফাজত দ্বীনি আন্দোলন করে। কোনো সরকারের বিরোধিতা করে না। হেফাজত কোনো দলকে সরকার থেকে নামানোর জন্য বা কোনো দলকে সরকারে বসানোর জন্য আন্দোলন করে না। আমাদের আন্দোলন ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে। সরকার হয়তো বুঝতে ভুল করে, এজন্য অনেক সময় আমাদের বিরুদ্ধে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে আহত, অনেক নিহত হয়েছে। অনেকে জেলে আছে। অনেক মাদরাসায় গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব নিয়ে ১১ এপ্রিল বৈঠক আছে। সেখানে আমরা করণীয় ঠিক করবো, ইনশাআল্লাহ।’

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুইপক্ষ তৈরি হয়েছে হেফাজতে। অবশ্য এমন দুইপক্ষ আল্লামা শফীর জীবদ্দশায়ও ছিল। সেটি তার মৃত্যুর পর প্রকাশ্য হয়েছে। সেসময় হেফাজতে ভাঙনের সুরও শোনা গিয়েছিল। এখন আবার সে পক্ষটিই ভেতরে ভেতরে সক্রিয় হয়েছে। ওপরে থু থু দিলে নিজের ঘাড়ে আসে—এ চিন্তায় অনেক কথা প্রকাশ্যে না বললেও তারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে চায়।

হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর প্রচার সেলের সদস্য ওয়ালী উল্লাহ আরমান বলেন, ‘২০১৩ সালের (হেফাজতের আত্মপ্রকাশের সময়) চেয়ে এখন পরিস্থিতি বেশ নাজুক। বর্তমান হেফাজতের অদূরদর্শী সব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলেম-ওলামা, মাদরাসা ও দ্বীনি সংগঠনগুলোকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে। বিশেষ করে ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে মাঠে ময়দানে অপরিকল্পিত তৎপরতায় হঠাৎ আমরা কঠিন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে গেছি। সরকারও সুযোগ পেয়ে এমন আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে বা নিতে যাচ্ছে, যা থেকে বের হওয়া সহজসাধ্য হবে না।’

তিনি মনে করেন, ‘ওই অদূরদর্শী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের কষ্টের সঙ্গে সঙ্গে এখন যুক্ত হচ্ছে মামলায় তালিকাভুক্তদের পেরেশানি। আলোচনার মাধ্যমে ধৈর্যসহকারে এখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি যেদিকেই যাক, কওমি শিক্ষা সংস্কার করে ওই অঙ্গনের শিক্ষার্থীদের মূলধারায় আনতে সরকারের যে চিন্তা, সেটি বাস্তবায়ন করে এগুনোই মঙ্গল। মুখোমুখি অবস্থানে উভয়পক্ষেরই কমবেশি ক্ষতি হবে। দেশের রাজনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে হিসাবে মঙ্গলজনক সিদ্ধান্তই সবার জন্য ভালো হবে

হেফাজতের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার ছাত্রদের বিদ্রোহ

হেফাজতের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার ছাত্রদের বিদ্রোহ 

দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসাগুলোতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। কওমি আবাসিক মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে এই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা হেফাজতের নেতাদের কে ঘেরাও করেছেন এবং এই মাদ্রাসা বন্ধ হওয়ার জন্য হেফাজতের নেতাদের উগ্রবাদী আচরণ, সরকারবিরোধী অবস্থানকে দায়ী করছেন।

একাধিক সূত্র বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসাগুলোতে কওমী শিক্ষার্থীরা জড়ো হচ্ছেন এবং তারা হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন।

হেফাজতের নেতাদের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে যে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গত কিছুদিন ধরেই হেফাজতের নিয়ন্ত্রনে নেই। তারা তাদের মতো করে কাজ করছে এবং নির্দেশ অমান্য করছে। হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ২৬ এবং ২৭ মার্চে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাণ্ডব হয়েছে, বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হাটহাজারীতে যে তাণ্ডব হয়েছে সেটি হেফাজতের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো না। হেফাজতের নেতারা শিক্ষার্থীদেরকে মাদ্রাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো।

তবে হেফাজতের নেতারা এটাও মনে করেন যে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তাদের বড় শক্তি। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী না থাকলে হেফাজতকে আর কেউ পাত্তা দেবে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে হেফাজতের নেতাদের দূরত্ব এবং বিরোধ তৈরি হচ্ছে।

বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিলেন তখন থেকেই কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মনে করছেন তাদের একটা ভবিষ্যৎ ভিত্তি হলো এবং তারা এখন উগ্রবাদী পথ থেকে সরে এসে আস্তে আস্তে নিজেদের ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে মনোনিবেশ করেন। আর এ কারণেই অধিকাংশ মাদ্রাসার ছাত্ররা চায় যে, সরকারের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রেখে তাদের ভবিষ্যতে পেশাগত জীবন যেন মসৃণ হয় এবং তারা যেন মুলধারার চাকরি-বাকরিতে ঢুকতে পারে তা নিশ্চিত সেটি যেন নিশ্চিত হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর জুনায়েদ বাবুনগরীর হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই হেফাজত কিছু উগ্রবাদী অবস্থানে চলে যায়। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করা নিয়ে তারা যে তাণ্ডব সৃষ্টি করে তার ফলে কওমি মাদ্রাসার ব্যাপারে সরকারের যে সহানুভূতির জায়গা ছিলো সেটি নড়বড়ে হয়ে গেছে।

এখন কওমি মাদ্রাসাগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হেফাজতের শিক্ষার্থীরা কোথায় থাকবেন এটি তাদের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা মনে করছে যে, হেফাজতের নেতারা তাদেরকে ব্যবহার করে নিজেরা রাজনৈতিক ফায়দা লুটেতে চেয়েছে। হেফাজতের নেতাদের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

দেশের অন্তত ১২ টি মাদ্রাসায় এখন পর্যন্ত হেফাজতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। তাদের কথা একটাই হেফাজত যেন সরকারের কাছে ক্ষমা চায় এবং মাদ্রাসাগুলো খোলা রাখার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতার চেষ্টা করে। এই সমঝোতা না হলে হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করবে এমন হুমকি দিচ্ছে।

হেফাজতের একাধিক নেতা বলছেন যে, কওমি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করার ফলে কিছু কিছু শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এজন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানাবেন। তবে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মনে করছেন যে, সরকারের সাথে সহিংসতা বা সরকারকে হুমকি-ধামকি দিয়ে এই সমস্ত দাবি আদায় করা যাবে না। বরং সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতার মাধ্যমেই কওমি মাদ্রাসাগুলোকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। এজন্য তারা অপেক্ষাকৃত নমনীয় এবং সরকার যাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এমন নেতৃত্ব হেফাজতে থাকা উচিত বলে মনে করছেন। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ হেফাজতকে নুতন সংকটের মধ্যে ফেলেছে।

389 ভিউ

Posted ৩:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com