কক্সবাংলা ডটকম(২৫ জুলাই) :: আওয়ামী লীগে এখন হেলেনা জাহাঙ্গীর নিয়ে তোলপাড় চলছে। হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের একটি উপ-কমিটির সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। এই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই তিনি এত বড় বড় পদ কিভাবে পেলেন তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে কারা তাকে আওয়ামী লীগের আনলো। আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ করার আগ পর্যন্ত হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে তেমন কোন কথাবার্তা ছিল না। এমনকি হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন টকশোতে অংশগ্রহণ করতেন।
এখন আওয়ামী লীগের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর কিভাবে আওয়ামী লীগে এলেন? আর এই প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর নাম এসেছে যার সুপারিশে তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু কুমিল্লা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা তিনি হলেন কিভাবে, তার নেপথ্যে কে ছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও রহস্যেই ঢাকা রয়ে গেছে।
হেলেনার ইস্যু শুধু নয়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুপ্রবেশকারী যখন অপকর্ম করে তখন তাকে নিয়ে শোরগোল হয়, তাকে আইনের আওতায় আনা হয় কিন্তু তার নেপথ্যের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম আড়ালেই থেকে যায়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয় না। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণ করে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে।
এই শুদ্ধি অভিযানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রভাবশালী দুই নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং খালেদ গ্রেপ্তার হন ক্যাসিনো বাণিজ্যের অভিযোগে। এই সময় আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানে অনেক নেতাই পদ হারান। কিন্তু তাদের নেপথ্যে কারা ছিল, কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা আওয়ামী লীগে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল সে ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান হয়নি।
এই সময়ে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের দুই নেতার বাড়ীতে টাকশাল পাওয়া গিয়েছিল। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু কারা তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিল সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই শুদ্ধি অভিযানের সময়ই জিকে শামীমকে পাওয়া গিয়েছিল। তিনি যুবলীগের নেতা হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু জিকে শামীমকে আইনের আওতায় আনা হয়েছিল তার পেছনে কে ছিল, কারা তাকে যুবলীগের নেতা বানিয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।
ওয়েস্টিন হোটেলের কেলেঙ্কারিতে পাপিয়ার নাম আসে। সেই সময় যুব মহিলা লীগের নেত্রী হিসেবে পাপিয়া বিভিন্ন রকম অপকর্ম করতেন। পাপিয়া এখন জেলে। কিন্তু যারা পাপিয়াকে আওয়ামী লীগে এনেছিল, পদ দিয়েছিল তাদের ব্যাপারে কি হলো এই প্রশ্নের উত্তর জানেনা আওয়ামী লীগের তৃণমূল। শাহেদ আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিত। এই পরিচয়ে শাহেদ বিভিন্ন টকশোতে অংশগ্রহণ করত। করোনার সময় ভুয়া করোনার রিপোর্ট এবং প্রতারণার দায়ে শাহেদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। শাহেদ এখন জেলে। কিন্তু শাহেদকে যারা আওয়ামী লীগে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল তাদের কিছুই হয়নি, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
আর এভাবেই বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রবেশকারীরা যখন কোনো অপকর্ম করে তখন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয় বটে কিন্তু তাদের নেপথ্যে যারা থাকে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। আর এটির কারণেই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার মনে করেন যে, যারা এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঢুকাচ্ছে তাদেরকে প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন যে অনুপ্রবেশকারীদের দলে কোন জায়গা দেওয়া যাবে না এবং অনুপ্রবেশকারীদের যেন নেওয়া না হয়। কিন্তু তারপরেও তাদের কাদের মদদে পৃষ্ঠপোষকতায় অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকছেন দলের ভেতর সেই প্রশ্নের উত্তরের মীমাংসা খুব জরুরী। তা না হলে আওয়ামী লীগে পাপিয়া শাহেদ হেলেনার মত ব্যক্তিরা ঢুকতেই থাকবে এবং আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে থাকবে। এমনটিই মনে করেন আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের নতুন বিতর্কের নাম হেলেনা জাহাঙ্গীর। শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে হেলেনাকে। একই সঙ্গে, কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যপদ থেকেও তাকে বাদ দেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে একটি ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছিলেন। ফেসবুকে ঐ সংগঠনের নামে সারাদেশে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, এ নামে আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গ সংগঠন নেই। আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে কিছু মতলববাজ সুযোগ সন্ধানী এধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, বার বার বলার পরও হেলেনা এবং পাপিয়ারা কিভাবে আওয়ামী লীগে ঢুকছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এবার হেলেনা কাণ্ডের পর আওয়ামী লীগে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এসেছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর কার হাত ধরে আওয়ামী লীগে ঢুকলেন।
আওয়ামী লীগ থেকে বের করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো হেলেনাকে কারা আওয়ামী লীগে ঢুকালো তাদের চিহ্নিত করা। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, কেবল চিহ্নিত করলেই হবে না, হেলেনাকে যারা আওয়ামী লীগে ঢুকিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে হবে।
উল্লেখ্য, হেলেনা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি। তবে, মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটিতে ঢোকার আগেই হেলেনা, কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন। হেলেনা নিজেই তার ফেসবুকে বলেছেন, গতবছর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কিভাবে কার মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগে এলেন, তা বলেননি।
তবে, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সুপারিশে তাকে উপ-কমিটিতে নেয়া হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগে কিছুদিন, পাপিয়ার মতো হেলেনা ইস্যু নিয়ে তোলপাড় হবে, হৈ চৈ হবে। এক সময় এই ইস্যু থিতিয়ে পরবে। এরপর আবার আরেকজনের কাণ্ড নিয়ে হৈ চৈ শুরু হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে না।