কক্সবাংলা ডটকম(২৪ ফেব্রুয়ারি) :: নিম্ন আয়ের থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আগামী মাসেই নাম লেখাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়।
সারা দেশে চলছে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকার যখন একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে ব্যস্ত তখন সরকারের ওপর ভর করেছে তিনটি অস্বস্তি।
প্রশ্নফাঁস, ব্যাংকিং খাতে লুটপাট এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় পরবর্তী করণীয় নিয়ে সরকারের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। শুধু সরকার নয়, সাধারণ চিন্তাশীল মানুষকেও এ বিষয়গুলো ভাবিয়ে তুলেছে। তবে এই তিন অস্বস্তি দূর করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রশাসনে দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি রোধে নজরদারি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস :
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছিল। প্রশ্নফাঁস রোধে নানা ধরনের চেষ্টাও অব্যাহত ছিল। কিন্তু এবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব কটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
এ নিয়ে সরকার এবং শিক্ষাবিদদের মধ্যে চরম অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তোপের মুখে পড়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এমনকি তার পদত্যাগেরও দাবি উঠেছে।
সংসদের চলতি অধিবেশনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, কিছু কিছু দুভার্গ্যজনক ঘটনা আমাদের সব অর্জনকেই ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। ২০১০ সালে আমরা অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করি। সরকারের প্রথম থেকেই বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে উপবৃত্তি ছাড়াও উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণার জন্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নেই সেসব উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজকে সরকারি করা হয়েছে। ২৬১৯৩টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে।
এরপরও শিক্ষা ক্ষেত্রে সুবাতাস নেই। এবারের প্রশ্নফাঁসের মহামারী কেবল পরীক্ষার্থী নয়, তাদের অভিভাবকদেরও সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। জিপিএ-৫ পেলেও বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না শিক্ষার্থীরা।
তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও দায়িত্ব নিচ্ছে না। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, চলমান এসএসসি পরীক্ষার সব কটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এটি এখন সরকারের নাগালের বাইরে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতার কারণে আমরা বারবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছি। শিক্ষামন্ত্রীকে বলব, এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। যে অব্যবস্থাপনা হয়েছে তা দ্রুত দূর করে জনগণের মধ্যকার অস্বস্তি দূর করে সরকারের অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে উদ্যোগ নেবেন।
ব্যাংকিং খাত :
শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতেও চলছে চূড়ান্ত নৈরাজ্য। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকট। সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন জোগাতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির টাকা ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
প্রতিনিয়ত বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংক নিয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাদের ধারণা ব্যাংক মানেই অনিয়মের আখড়া। ব্যাংক খাত নিয়ে সাধারণের মধ্যে এমন ধারণা থাকায় সরকার এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের নানা জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে
। এ বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমরা যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে আছি। এ খাত নিয়ে অনেক জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হয়। এ অবস্থা থেকে উঠে আসতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
রোহিঙ্গা ই্যসু :
শিক্ষা এবং ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়েও অস্বস্তিতে রয়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবাসন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার আবাসন ও খাদ্য সংস্থান করতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে নষ্ট হচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ।
তা ছাড়া মিয়ানমারের অভিযোগ অনুসারে, মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী জঙ্গি সংগঠন আরসার সহ¯্রাধিক সদস্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আরসার এসব সদস্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি বাইরেও জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তার করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরসা চট্টগ্রাম অঞ্চল অশান্ত করারও চেষ্টা করতে পারে।
এ ছাড়া এক শ্রেণির এনজিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন বিরোধী প্রচারণাও চালাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিরাপদ প্রত্যাবাসনে জোর দিয়েছে সরকার। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা চেয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক মহলের চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি চুক্তি করলেও তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। এমনকি সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছেন।
গত তিন দিন জাতিসংঘে এ নিয়ে বাংলাদেশের সংসদীয় একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুরের সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
প্রশ্নফাঁস, ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি এবং রোহিঙ্গা সংকটের সুষ্ঠু সমাধানে সরকার সফল হবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।
সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকরাও বলছেন, সরকার দৃঢ়তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার করে ফাঁসি দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার হয়েছে। খালেদা-তারেকের দুর্নীতির বিচার হয়েছে, হচ্ছে। জনগণ আশা করে দুদক ব্যাংক লুট, জালিয়াতি, অর্থ পাচার- এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্ত করবে, আইনের আওতায় আনবে।
Posted ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta