কক্সবাংলা ডটকম(১৬ সেপ্টেম্বর) :: হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনের আবহ চলে এসেছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সারাদেশে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা এবং উপজেলা গুলোর সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, একটি আগাম কাউন্সিলের পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আগাম নির্বাচন হতে পারে এমন পূর্বাভাস দিয়ে গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন।
আর এইসব আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ কি বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে আগাম নির্বাচনে চলে যেতে পারে? বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সংবিধান অনুযায়ী এর ৯০ দিন আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ দিকে অথবা ২০২৪ সালের প্রথমদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। মেয়াদ পূর্তির আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে এমন কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
তবে একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ আগাম নির্বাচন দিতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। বিশেষ করে বিএনপিকে অপ্রস্তুত রাখার জন্য এবং বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে নির্বাচনের ফলাফল ঘরে তোলার কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে যেতে পারে।
অন্য একটি সূত্র বলছে যে, রাজনীতিতে একটি নীরব মেরুকরণ চলছে। এই মেরুকরণে শেষ পর্যন্ত বিএনপি ভেঙে যেতে পারে। আর সেরকম যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে বিএনপি ভাঙ্গনের পরপরই আওয়ামী লীগ আগাম নির্বাচন দিতে পারে। করোনা পরিস্থিতির কারণে নানা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। আর এই সমালোচনার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ আগাম নির্বাচন দিয়ে নিজের অবস্থানকে সংহত করতে পারে। এরকম নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে।
তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করছেন যে, আগামী নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে কোনো বাস্তব চিন্তা ভাবনা নেই। কিন্তু ৯ সেপ্টেম্বরে কেন নির্বাচনের দুই বছরের বেশি আগে কেন আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের ঘোষণা দিলেন সেটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা চলছে। আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে, অনেকগুলো জরিপ করে এবং নির্বাচনের কথা মাথায় ঢুকিয়ে দিলে এখন থেকে নেতাকর্মীরা সংযত হবে এবং দায়িত্বশীল আচরণ করবেন -এরকম একটি ভাবনা থেকেও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলতে পারেন।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অন্য আরেকজন নেতা মনে করছেন যে, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন হবে। সে জন্য আওয়ামী লীগকে এখন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, নির্বাচন একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন মানে শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, সামনের দিনগুলোতে অনেকগুলো নির্বাচন হবে।
বিশেষ করে ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে। এটি স্থানীয় পর্যায়ের কর্তৃত্ব গ্রহণের জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। সে কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি হয়তো নির্বাচনের কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের আরেকজন নেতা বলছেন যে, যেহেতু এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, একমাত্র নির্বাচনই পারে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরোধ দূর করে ঐক্যবদ্ধ করতে।
ইত্যাদি নানামুখী বিচার বিশ্লেষণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আগাম হবে কি হবে না সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি অনেক দূরদর্শী একজন রাজনীতিবিদ। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বিএনপির তীব্র সমালোচনা করছেন। আর এই সমালোচনার প্রেক্ষাপটেই অনেকে মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো আগামী নির্বাচনের একটি চমক দিলেও দিতে পারেন।
Posted ২:৪৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta