কক্সবাংলা ডটকম(২৭ মে) :: বিশ্বের দরবারে অনন্য স্বীকৃতি পেল ভারতীয় ভাষায় লেখা সাহিত্য। চলতি বছরের ম্যান বুকার পুরস্কার পেল গীতাঞ্জলি শ্রী-র লেখা হিন্দি উপন্যাস ‘রেত সমাধি’। ভারতীয় আঞ্চলিক সাহিত্যের মুকুটে যোগ হল নতুন পালক। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
চলতি বছরেই প্রথমবার বুকার তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছিল ভারতীয় ভাষায় লেখা কোনও উপন্যাস। আর অবশেষে এই গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারটির দাবিদারও হল গীতাঞ্জলি শ্রী-র লেখা ওই হিন্দি উপন্যাস- ‘রেত সমাধি’। এর আগে ১৯৯৭ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন অরুন্ধতী রায়। তবে তা এসেছিল ইংরেজি ভাষায় লেখা উপন্যাস ‘The God of Small Things’-এর জন্য।
বস্তুত, বুকার পুরস্কারের পঞ্চাশ বছর পেরোনো ইতিহাসে এতদিন এই স্বীকৃতি পায়নি কোনও ভারতীয় ভাষার উপন্যাসই। হয়তো আঞ্চলিকতার বেড়ার কারণে ব্রাত্যই থেকে গিয়েছিল ভারতীয় সাহিত্যের এক বিপুল সম্ভার। সেই গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সাহিত্যের দুনিয়ায় এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যের কাছেই এক বিশেষ মুহূর্ত।
তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে সাহিত্য জগতে অবাধ বিচরণ গীতাঞ্জলি শ্রী-র। লেখার বিষয়, ভাষা এবং শৈলী, সব দিক থেকেই এক স্বতন্ত্র কলমের অধিকারিণী এই লেখিকা। তবে ‘রেত সমাধি’, ওরফে ‘Tomb of Sand’-ই তাঁর ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত প্রথম বই। ২০১৮ সালে লেখা এই উপন্যাসটির অনুবাদ ২০২১ সালের অগস্ট মাসে প্রকাশিত হয় লন্ডনের অ্যাক্সিস প্রেস থেকে। যে উপন্যাসের আখ্যান গড়ে উঠেছে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার কাহিনি ঘিরে। স্বামীর মৃত্যুর পর পাকিস্তানে পাড়ি দিয়েছেন সেই বৃদ্ধা।
নিজের যৌবনের দিনে দেশভাগ দেখেছিলেন তিনি। সেই সময়ের দগদগে ক্ষতগুলিই যেন ফের ছুঁয়েছেনে দেখতে চান বৃদ্ধা। মেয়ের ভূমিকায়, মায়ের ভূমিকায়, এক নারীর ভূমিকায়, কিংবা এক নারীবাদীর ভূমিকায় দাঁড়িয়ে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সেই সময়ের মূল্যায়ন করতে চাইছেন তিনি।
সেই বয়ানকেই অদ্ভুত এক সংকেতজগতে ধরে রেখেছে গীতাঞ্জলি শ্রী-র প্রায় সাতশো পাতার এই উপন্যাস। আর নিপুণ দক্ষতায় এই হিন্দি উপন্যাসটির ভাষান্তর করেছেন অভিজ্ঞ মার্কিনি অনুবাদক ডেইজি রকওয়েল। তাই ‘রেত সমাধি’ অনুবাদ বিভাগে বুকার পুরস্কার পাওয়ার পর রকওয়েল-এর সঙ্গে এর কৃতিত্ব ভাগ করে নিয়েছেন গীতাঞ্জলি।
বৃহস্পতিবার লন্ডনে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় লেখিকার হাতে। ম্যান বুকার-এর পুরস্কারমূল্য ৫০ হাজার পাউন্ড, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। যে বইটিকে এককথায় ‘আনপুটডাউনেবল’-এর শিরোপা দিচ্ছেন বিচারকেরা, সে বইয়ের জন্য পুরস্কার পাওয়ার পর কী অনুভূতি হল গীতাঞ্জলির? ৬৪ বছর বয়সি লেখিকার কথায়, এই পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা কিংবা প্রত্যাশা কিছুই ছিল না তাঁর। আর সেইজন্যই, এই স্বীকৃতি তাঁর কাছে এক দুর্দান্ত চমকের মতো। তবে শুধুমাত্র নিজের জয়েই সন্তুষ্ট নন গীতাঞ্জলি।
তাঁর মতে, হিন্দি তো বটেই, দক্ষিণ এশীয় অনেক ভাষাতেই এমন মণি-মাণিক্য ছড়িয়ে রয়েছে। গীতাঞ্জলি শ্রী-র বুকার প্রাপ্তির সূত্রে এবার বিশ্বের নজর আরও বেশি করে পড়বে আঞ্চলিক সাহিত্যের পরিসরে, এমন আশার আলো দেখছেন পাঠকেরাও।
Posted ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ মে ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta