মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আবরার হত্যাকাণ্ড : উত্তাল হয়ে উঠেছে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০১৯
262 ভিউ
আবরার হত্যাকাণ্ড : উত্তাল হয়ে উঠেছে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

কক্সবাংলা ডটকম( অক্টোবর) :: ছুটি কাটিয়ে কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে রোববার বিকেলে নিজের ক্যাম্পাসে ফেরেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ওই দিন বিকেলের দিকে শেরেবাংলা হলে নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষে পৌঁছে ফোনে মায়ের সঙ্গে কথাও বলেন। একদল পাষণ্ড রাতে সেই ছেলেকে একই হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করল! শুধু তাই নয়, হত্যার পর আবরারের মরদেহ টেনেহিঁচড়ে হলের সিঁড়ির পাশে ফেলে রাখা হয়। গত রোববার গভীর রাতে শেরেবাংলা হলে মেধাবী ওই ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এ হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১৯ নেতাকর্মীকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ। কক্ষের ভেতর হত্যার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছেন- এমন একটি দৃশ্যও সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। গত রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ছয়জনকে ওই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে।

২১ বছরের আবরার তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডে বুয়েট ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ সরাসরি জড়িত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনামূলক একটি স্ট্যাটাস এবং শিবিরের নেতা সন্দেহে আবরারকে তারা নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে বলে বলা হচ্ছে। আবরার শিবিরের কর্মী বা নেতা ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবরারের পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তবে আবরার মাঝেমধ্যে তাবলিগে যেতেন।

পুলিশের প্রাথমিক ভাষ্যেও জানা গেছে, আবরার হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। ওই ঘটনায় পুলিশ বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহূত বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে ক্রাইম সিন ইউনিট। সংগ্রহ করা হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজও। ক্যাম্পাসে একজন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটলেও আবরারের লাশ দেখতে ক্যাম্পাসে আসেননি বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি আবরারের পরিবারের কাউকে ফোন দিয়েও সহমর্মিতা জানাননি।

আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আবরার হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ করেছে। নিরাপত্তা দিতে না পারায় বুয়েটের শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগও দাবি করেছেন তারা। ঢাকার বাইরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি করেছে।

ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারও করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এক বিবৃতিতে এই হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খুনিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেন। কুষ্টিয়ায় হানিফের বাড়ির পাশেই আবরারদের বাসা।

যেভাবে হত্যাকাণ্ড :

আবরার হলের যে কক্ষে থাকতেন, ওই কক্ষ ও আশপাশে কক্ষগুলোর কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ি থেকে ফিরে আবরার নিজের কক্ষেই পড়ালেখা করছিলেন। রোববার রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আবরারের কক্ষে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ২০১১ নম্বর কক্ষে। এই কক্ষে থাকেন ছাত্রলীগের চার নেতা। সেখানে তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করেন নেতারা। ওই কক্ষে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ। তারা আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে সেটি যাচাই করেন। এক পর্যায়ে আবরারকে তার ফেসবুক আইডি খুলতে বলেন। পরে তারা তার ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ঘেঁটে তাকে শিবিরের নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন। এর পরই ওই দুই নেতার সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। আবরারকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। ‘শিবির ধরা হয়েছে’- এমন খবর পেয়ে সেখানে সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী আরও সাত থেকে আটজন নেতা জড়ো হন। তারাও সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় আবরারের দেহ। রাত ২টার পর তাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে হলের সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।

নাম প্রকাশ না করে একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চিৎকার ভেসে আসছিল। তবে ঝামেলা এড়াতে তিনি ওই কক্ষে যাননি। কক্ষটিতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। তারাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। সকালে বুঝতে পারেন, সেখানে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে।

অপর দু’জন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, পেটাতে পেটাতে আবরারকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন ছাত্রলীগের নেতারা। তিনি তাতেও রাজি হন। এরপরও তাকে ছাড়া হয়নি; নৃশংস ও নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

হলের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ মোস্তফা দাবি করেন, প্রতি রাতেই শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে কমবেশি হৈ-হুল্লোড় করেন। কিন্তু রোববার রাতে তিনি কোনো চিৎকার শোনেননি। বিষয়টি গভীর রাতে জানতে পারেন তিনি।

ঘটনার সময় ওই কক্ষটিতে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আশিকুল ইসলাম বিটু। সোমবার সকাল ১১টার দিকে তিনি স্বীকার করেন, রাতে তিনি ওই কক্ষে ছিলেন। তবে দাবি করেন, তিনি আবরারকে পেটাননি। বিটু বলেন, তিনি মাঝেমধ্যেই ওই কক্ষে যান। রোববার রাতে গিয়ে দেখতে পান, সেখানে আবরার ফাহাদ নামে এক ছাত্রের ফেসবুক আইডি ও মেসেঞ্জার চেক করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে শিবির-সংশ্নিষ্টতার কিছু প্রমাণও পাওয়া যায় বলে তিনি তখন জানতে পারেন। তবে আধাঘণ্টা পর নিজের কক্ষে চলে আসেন। এর পর কী হয়েছে, তা আর জানেন না। রাত ১টার দিকে ওই কক্ষে থাকা নিজের বই আনতে গিয়ে দেখেন, আবরার নামের ছেলেটি পড়ে আছে। তখন সেখানে আর কেউ ছিল না। অবশ্য বিটু নিজেও হামলায় অংশ নেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েক শিক্ষার্থী।

লাশটি পড়ে ছিল সিঁড়ির পাশে:

আবরারকে হত্যার ঘটনা জানাজানির পর হলজুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহত ওই ছাত্রের রুমমেট ও সহপাঠীরাও এ বিষয়ে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করে আবরারের কয়েকজন সহপাঠী জানিয়েছেন, হত্যার পর দীর্ঘক্ষণ আবরারের লাশটি ২০১১ নম্বর কক্ষেই পড়ে ছিল। রাত ২টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তার নিথর দেহ নামিয়ে আনেন। এক পর্যায়ে নিচতলা ও দোতলার মাঝখানের সিঁড়িতে তার লাশটি ফেলে রাখা হয়।

শেরেবাংলা হলের একজন আবাসিক ছাত্র জানিয়েছেন, তিনি রাত ২টার দিকে পানি আনতে গিয়ে দেখেন নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝে তোশকের ওপর আবরারের নিথর দেহ পড়ে আছে। তখন সেখানে ছাত্রলীগের অন্তত তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। এতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি ধারণা করছেন, ওই সময়ে আবরারের মরদেহটি লুকানোর চেষ্টা হচ্ছিল। কিন্তু তিনি দেখে ফেলায় হয়তো সেখানেই রাখা হয়। এক পর্যায়ে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ঘটনা জানাজানি হয়। তখন সবাই হলের চিকিৎসকদের খবর দেন। চিকিৎসক এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। অ্যাম্বুলেন্স ডাকার এক পর্যায়ে চিকিৎসক জানান, আবরার আর নেই, মারা গেছে। ততক্ষণে ছাত্রলীগের ওই কর্মীরা পালিয়ে যান। ওই সময়ে হলের প্রভোস্টও ঘটনাস্থলে আসেন। বুয়েটের চিকিৎসক মাশরুক এলাহী বলেন, খবর পেয়ে তিনি রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুঝতে পারেন- ছেলেটি বেঁচে নেই।

ঘটনার বিষয়ে হলের প্রভোস্ট জাফর ইকবাল খান জানান, এক শিক্ষার্থী হলের সামনে পড়ে আছে খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। শরীরে আঘাতের চিহ্ন পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশে খবর দেন। ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করছে এবং কয়েকজনকে আটকও করেছে।

এদিকে রোববার ভোর থেকেই শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই হত্যাকারীদের শনাক্ত করা সহজ হবে। কারা আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়েছিল, কারা তার লাশটি সিঁড়িতে ফেলেছে- সবকিছুই সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া যাবে; কিন্তু হল কর্তৃপক্ষ তা শিক্ষার্থীদের দেখাচ্ছিল না। সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাতে প্রভোস্টসহ পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে আড়াই ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রাত ৯টার দিকে ওই ফুটেজ শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়ার পর মুক্ত হন তারা।

সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারীদের মুখ:

হাতে আসা প্রায় দেড় মিনিটের একটি ফুটেজে দেখা যায়, আবরারকে মারধরের পর কক্ষ থেকে বের করা হচ্ছে। প্রথমে একজন বারান্দা দিয়ে কিছুটা দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়ান। এরপর তিনি একই পথে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পর আরও তিনজনকে দেখা যায় যারা আবরারকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছে। ওই তিনজনের পেছনে আরও একজনকে হাঁটতে দেখা যায়। এরপরই চশমা পরা একজন প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বেরিয়ে আসেন। এর পরপরই আরও পাঁচজনকে ওই বারান্দা দিয়ে পেছনে হাঁটতে দেখা যায়। তাদের একজন আবার মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফুটেজে দেখতে পাওয়া ছাত্রদের মধ্যে নেতা ছাড়াও কর্মী রয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ফুটেজটি ছাড়া আর কোনো সিসিটিভিতে ঘটনা ধরা পড়েছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে।

সেই কক্ষে তখন যারা উপস্থিত ছিলেন:

শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ২০১১ নম্বর কক্ষটিতে থাকেন বুয়েটের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহাসহ ছাত্রলীগের চার নেতা। ওই কক্ষটি বুয়েট ছাত্রলীগের নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহার হতো। নেতারাও আড্ডা দিতেন সেখানে। আবরারের ওপর নির্যাতন চলার সময় ওই কক্ষে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ছাড়াও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ সকাল, উপ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু, ক্রীড়া সম্পাদক নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মিফতাউল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অনিক সরকার, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, এহতেশামুল রাব্বী তানিম ও মুজাহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই অবরারকে নির্যাতনে অংশ নেন।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মুনতাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার এজাহারে থাকা অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে মেহেদী হাসান রাসেল, ফুয়াদ, জিয়ন, অনিক সরকার, সকাল, রবিন, তানভির, মুজাহিদ, মুন্না ও জেমি রয়েছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, আবরার হত্যাকাণ্ড তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেফতারে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি কাজ করছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। ডিবির অন্য একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ১০ জনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় সমকালকে বলেন, অপরাধ করে ছাত্রলীগে থাকা যাবে না। জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আর যারা জড়িত রয়েছে, তাদেরও শনাক্ত করা হবে।

বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি জামিউর সানি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাদের বহিস্কারও করা হয়েছে। অপরাধী কেউ পার পাবে না।

কক্ষের মেঝেতে রক্ত, আলামত উদ্ধার:

সোমবার সকালে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে গিয়ে মেঝেতে রক্তের দাগ দেখা গেছে। তবে আবরারের ১০১১ নম্বর কক্ষটি ছিল পরিপাটি সাজানো। তার টেবিলে সাজানো বই, পাশেই একটি টিফিন বক্স। বিছানার ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায় জামাকাপড়। পাশেই তার গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ও একটি ট্রাঙ্ক পড়ে ছিল। সেখানে শুকনো খাবারের একটি জারও ছিল। আবরারের এক সহপাঠী জানিয়েছেন, আবরার বাড়ি থেকে শুকনো খাবার নিয়ে এসেছিলেন; কিন্তু তা আর খেয়ে যেতে পারেননি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, আবরারকে পিটিয়ে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। এই হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাবও থাকবে না।

পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তিনটি খালি মদের বোতল, একটি অর্ধেক ভরা মদের বোতল, ক্রিকেটের চারটি স্টাম্প, একটি চাপাতি, দুটি লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে। একটি স্টাম্পে রক্তের দাগ ছিল।

আবরারের মামাতো ভাই আবু তালহা রাসেল জানান, তার ভাইকে ছাত্রলীগের ছেলেরা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। শিবিরের অভিযোগ তোলা হলেও তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থক। তবে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। তিনি জানান, আবরার কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে ঢাকায় নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পান। পরে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন।

রক্তক্ষরণে মৃত্যু:

পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, আবরারের শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল ব্যাপক। সোমবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, অবরারের হাতে, পায়ে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই আঘাতের কারণেই রক্তক্ষরণ ও ব্যথায় তার মৃত্যু হয়েছে। আঘাতের ধরন দেখে মনে হয়েছে, বাঁশ, লাঠি বা স্টাম্পের মতো ভোঁতা কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মাথায় কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও কপালে ছোট একটি কাটা চিহ্ন রয়েছে।

হলের সিঁড়ি থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করেন চকবাজার থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ছেলেটির পরনে ট্রাউজার ও শার্ট ছিল। তিনি উল্টেপাল্টে হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান।

সোমবার রাতে আবরারের লাশ বুঝে নেন তার বাবা বরকতুল্লাহ। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আর কারও যেন তার ছেলের মতো পরিণতি না হয়- প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই দাবি জানান। তিনি ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চান। স্বজনরা জানিয়েছেন,  মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া শহরে জানাজা শেষে আবরারের মরদেহ দাফন করা হবে। এর আগে সোমবার রাত ১০টায় বুয়েট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে আবরারের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে সোমবার রাতে বুয়েট কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও করেছে।

বেরিয়ে আসছে নির্যাতনের রোমহর্ষক সব ঘটনা

বুয়েটে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়, এর আগেও অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এবারের মারধরে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যু হওয়ায় বিষয়টি সামনে এসেছে গুরুত্বের সঙ্গে। গতকাল সোমবার শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, আহসানউল্লাহ ও ড. রশীদ হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নির্যাতনের শত শত ঘটনা।

শিক্ষার্থীরা জানায়, একশ্রেণির ছাত্রলীগ নেতা  ক্ষমতার দম্ভে বুয়েটের আবাসিক হলগুলোকে অনেকটা টর্চার সেলে পরিণত করেছেন। চুল বড় রাখা, ছাত্রনেতাদের সালাম না দেওয়া, এমন সব ঠুনকো অজুহাতে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলার সঙ্গে জড়িত বুয়েট ছাত্রলীগের হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির একাধিক নেতা। তাদের কথাই ছিল আইন। পান থেকে চুন খসলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসতো নির্মম নির্যাতন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কিছু নেতার কথার অবাধ্য হলেই আবাসিক হলে ও ক্যাম্পাসে গিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত ও রক্তাক্ত করার ঘটনা ঘটেছে বুয়েটে। রক্তাক্ত অবস্থায় আবার পরীক্ষার আগে ক্যাম্পাস ছাড়া করার ঘটনাও ঘটেছে সংশ্নিষ্ট ছাত্রকে। হল পলিটিক্সের দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রতিপক্ষ গ্রুপের এমনকি সাধারণ ছাত্রদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে। আর সবই ঘটছে হল প্রশাসনের সামনে। অথচ অপকর্মে জড়িতেেদর বিরুদ্ধে কখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো আহত, রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শুনিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীকে মেরে কান ফাটিয়ে দেওয়া, ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি করা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলাসহ বুয়েট ক্যাম্পাসে নানা অপকর্ম অহরহ ঘটেছে। তুচ্ছ বিষয়ের জের ধরে বিভিন্ন পন্থায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব হামলার বিচার না হওয়ার কারণেই মূলত বার বার এ রকম ঘটনা ঘটছে।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনার ধারাবাহিকতারই ফল বলে অভিযোগ করেন তার সহপাঠীরা। তারা বলছেন, বুয়েটে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়তই এ রকম ঘটনা ঘটছে। পার্থক্য শুধু এখানেই যে, এবার একজন মারা গেছে, অন্যসময় তা হয়নি। মূলত বিচার না হওয়ার কারণে বারবার এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। গত ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জের ধরেই শিবির সন্দেহে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা যায়।

নির্মম নির্যাতনের কিছু ঘটনা :তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অভিজিৎ করের। এতে তার একটি কানের শ্রবণশক্তি চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি বুয়েটে ওপেন সিক্রেট। বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অভিজিৎ কর গত ৩০ জুন নিজের ফেসবুক ওয়ালে তার ওপর নির্যাতনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেন। ওই সময় তার ওই স্ট্যাটাসটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সেসময় তাকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।

তার বর্ণনা অনুযায়ী, ২৭ জুন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আহসানউল্লাহ হলের ২০৫ নম্বর রুমে তাকেসহ প্রথমবর্ষের বেশ কয়েকজনকে ডেকে আনা হয়। তারপর এক এক করে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাদের মারধর করা হয়। এর মধ্যে দাড়ি রাখার জন্য একজনকে কষে থাপ্পড় মারা হয়। জ্যেষ্ঠ ছাত্রকে সালাম না দেওয়ার কারণে আরেকজনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর অভিজিৎ করকে চুল লম্বা রাখার কারণে থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তাকে মারধরও করা হয়।

এ বিষয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘এ ঘটনার পর হলের শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এদিকে আমার কানের মধ্যে সবসময় শোঁ শোঁ আওয়াজ হচ্ছে। কী অপরাধ আমার, আমি প্রথম বর্ষের, এটাই কি আমার অপরাধ?’

এর আগে ২০১৭ সালে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাফি নামে এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ক্যাম্পাসছাড়া করা হয়। এমনকি ওই শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত অবস্থায়ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি। পরে তিনি বুয়েট ছেড়ে বরিশালের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একইভাবে গত বছর রায়হান নাফিস নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়।

২২ মে রশীদ হলের সুমন খান নামের এক ছাত্রের কাছে টাকা ধার চেয়ে না পেয়ে তাকে উল্টো ঝুলিয়ে নাকে গরম পানি ঢালা হয় বলে ওই হলের ছাত্ররা জানান। এতে সুমনের নাসিকা, স্নায়ুতন্ত্র ও চোখের গুরুতর ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে গত ১৬ই ডিসেম্বর বুয়েটে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার হন তিন সাংবাদিক। ওই ঘটনাও ওই শেরেবাংলা হলেই ঘটেছিল। ভুক্তভোগী তিন সাংবাদিক হলেন দৈনিক জনকণ্ঠের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার মুনতাসির জিহাদ, কালের কণ্ঠের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ও সারাবাংলার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার কবির কানন।

তাদের আটকে মারধর করেন বুয়েট শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক আসিফ রায়হান মিনার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাবেক সম্পাদক এসএম মাহমুদ সেতু, সাবেক যুগ্মসম্পাদক নাফিউল আলম ফুজি, সাবেক প্রচার সম্পাদক নিলাদ্রি নিলয় দাস, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদ মাহমুদ অয়ন, সাবেক সহসভাপতি সন্টুর রহমান, মেকানিক্যাল বিভাগের অর্ণব চক্রবর্তী সৌমিক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রাউফুন রাজন ঝলক, মেকানিক্যাল বিভাগের মিনহাজুল ইসলাম, নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের মেহেদী হাসান, তড়িৎ কৌশল বিভাগের ফারহান জাওয়াদ। বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামী-উস সানী ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের নির্দেশে এমন হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এসে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান নেতারা। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি তারা।

এ বিষয়ে হামলার শিকার কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধরে নিয়ে গেছে- এমন তথ্য পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। ঘটনাটির বিষয়ে একেকজন একেক রকম তথ্য দিচ্ছিল। হলের ভেতর প্রবেশ করার পরে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাংবাদিক পরিচয় পেয়েও আমাদের মারধর করে।’

সোহরাওয়ার্দী হলের কয়েকজন ছাত্র জানান, কেবল রাজনৈতিক কারণে নয়, বিচার সালিশের নামেও অনেককে মারধর করা হয়। সাধারণ কোনো ছাত্র হলের অন্য কোনো ছাত্রের নামে কোনো অভিযোগ করলে তাকে ডাকা হয় সংশ্নিষ্ট হলের টর্চার সেল হিসেবে চিহ্নিত রুমগুলোতে। সেখানে কথাবার্তায় সমাধান না হলে, অথবা বিচার কারও মনঃপূত না হলে ভাগ্যে জুটত বেদম মারধর। ক্রিকেট স্টাম্প ও লাঠি দিয়ে পেটানো হতো। এমনই এক ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী হলের তড়িৎ কৌশল বিভাগের ছাত্র রুম্মান রশীদের ডান হাত পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়।

তবে আববার ফাহাদ খুনের ঘটনার পর শেরেবাংলা হল ছেড়ে পালিয়েছেন ছাত্রলীগের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী। সাধারণ ছাত্রদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। গেস্টরুমসহ জমজমাট শেরেবাংলা হলে সোমবার রাতে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করতে দেখা গেছে। প্রতিদিন যেখানে সন্ধ্যার পর নেতাকর্মীদের আড্ডা, বিচার-সালিশ ও বহুজনের আনাগোনা ছিল, সোমবার সেখানে কাউকেই পাওয়া যায়নি। পালিয়েছে বিভিন্ন সময় সাধারণ ছাত্রদের নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্তরাও।

জবিতে মশাল মি‌ছিল

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) মশাল মিছিল করেছে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা। ওই মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়।

সোমবার ( ৭ অক্টোবর ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও নেতারা ‘আমার ভাই মরলো কেনো, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘ আবরারের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না’, ‘ আবরারের খুনিদের ফাঁসি চাই, দিতে হবে’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জবি শাখার সভাপতি তূর্য বলেন, আমরা এ ঘনটার নিন্দা জানাই। দেশে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নতুন কিছু নয়। দেশে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়না। বর্তমানের বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ হোক । দ্রুত সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

 

262 ভিউ

Posted ৩:৫২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com