মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আমরা কি মা দিবস পালনের যোগ্য ?

রবিবার, ১২ মে ২০১৯
203 ভিউ
আমরা কি মা দিবস পালনের যোগ্য ?

হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী(১২ মে) ::  আজ মা দিবস। একটা বিজ্ঞাপনে দেখেছি, বলা হচ্ছে, আমাদের কাছে প্রতিটা দিনই মা দিবস। আজকে মা দিবসের বিশেষ লেখাগুলো পড়ব, মাকে নিয়ে আরেকবার আবেগাপ্লুত হব, মায়ের কাছে যাব! বোনের কাছে যাব! দয়িতার কাছে যাব! কোন মুখ নিয়ে যাব আমরা আমাদের বোনদের সামনে, সহকর্মীদের সামনে?

মনে হচ্ছে আমাদের নারীরা আমাদের মুখের ওপরে ছুড়ে মারবেন সংবাদপত্রগুলো, আর বলবেন, এই দেখো, কেমন রেখেছ তোমরা আমাদের, কোন মুখে তোমরা মা দিবসের কথা বলো, নারী দিবসের কথা বলো!

পরীক্ষা দিতে যাওয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাতকে কৌশলে মাদ্রাসার তৃতীয় তলা ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর কেউ পা বাঁধেন ওড়না দিয়ে, কেউ কেরোসিন ঢেলে দেন পা থেকে বুক পর্যন্ত। অন্য একজন ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন গায়ে। তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন পাঁচজন আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় লেগেছে মাত্র পাঁচ মিনিট। সবই করা হয়েছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার নির্দেশে। এমন লোমহর্ষক বর্ণনা ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যার! গত ২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানি থেকে শুরু করে ৬ এপ্রিল তাঁর ওপর অগ্নিসন্ত্রাস চালানো হয়। পরে সে ঢলে পড়ে মৃত্যু্রকোলে।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সেই ভয়ংকর বিবরণ শেষ পর্যন্ত পাঠ করা কঠিন! কী ভয়াবহ, কী অমানবিক, কী নিষ্ঠুর! যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা ‘ধনীর দুলাল’। নানা মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ‘একটি মহল’ অপরাধীদের সুরক্ষা দেবার চেষ্টা করেছে।

সোনাগাজী থানা প্রথমে মামলা নিতে চায়নি, ওসির ভূমিকা ছিল রহস্যজনক! অপরাধীদের গ্রেপ্তারে তাদের চেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের চেষ্টা ছিল বেশি।

একটি কাগজে পড়লাম, হত্যাকাণ্ডের আগে অধ্যক্ষ ‘সিরাজ উদদৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামের ২০ সদস্যের কমিটির জন্য টাকা দিয়েছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জনৈক কেফায়েত উল্লাহ। তার কী ভয়ংকর স্পর্ধা!

প্রথম আলোতে পড়লাম, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়, ৫ এপ্রিল আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষার দিন নুসরাতকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হবে। থানা–পুলিশের বিষয়টি মাকসুদ (ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা) এবং রুহুল আমিন (উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) দেখবেন।

আমরা জানি, খারাপ পুঁজির মতো ভয়ংকর আর কিছু নেই; তা কেবল ভালো পুঁজিকে অপসারণ করে তা-ই নয়, দেশের আইনকানুন, মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়বিচারকেই ধূলিসাৎ করতে চায়। বাংলাদেশে এই লুটেরা পুঁজিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতে হবে। কে করবে তা? তা করবে সুশাসন, আইনের শাসন, ভালো রাজনীতি, দক্ষ প্রশাসন। কিন্তু খারাপ টাকা এসবকেই তো নস্যাৎ করতে চায় সবার আগে। ফলে কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে।

আশার কথা হলো জনমত। আশার কথা রাজপথের প্রতিবাদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্চারিত জনগণের মনের বিক্ষোভ। সমাজকে প্রতিবাদ করতে হবে, গণমাধ্যমকে উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ জানাতে হবে। অতীতে ইয়াসমিন হত্যাসহ অনেকগুলো ধর্ষণ ও খুনের প্রতিকার পাওয়া গিয়েছিল জনগণ সোচ্চার হয়েছিল বলে। দিল্লিতেও নির্ভয়া ধর্ষণ ও খুনের বিচার হয়েছে, তার কারণ ভারতবাসীর প্রতিবাদ। শেষ পর্যন্ত লেগে থাকতে হবে। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসী, সমাজের সচেতন অংশ হাল ছাড়বে না। বিচার হলে, দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা গেলে অপরাধীরা নিরুৎসাহিত হয়। মেয়ে এবং বাবা যে দেশে ন্যায়বিচার চেয়ে প্রতিকার না পেয়ে ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করে, সে দেশে একটুখানি নমনীয় হওয়ার অবকাশ নেই।

আশার কথা, পুলিশের উচ্চমহল তৎপরতা দেখিয়েছে, রাজনীতির উচ্চমহলও ন্যায়বিচার ও শাস্তির পক্ষে। তবু সাবধান করে দিতে চাই, প্রভাবশালী বলে, ধনাঢ্য বলে যেন বিচার ব্যাহত করার চেষ্টা করা না হয়। বাংলাদেশের পলিমাটি বর্ষায় নরম, কিন্তু চৈত্রে এই মাটি ইস্পাতের মতো দৃঢ় আর গনগনে হয়ে ওঠে।

বলছি বটে, এ হলো খারাপ পুঁজির আস্ফালনের নমুনা, বলছি বটে, এ হলো বাজে প্যারেন্টিং বা অভিভাবকত্বর ফল, কিন্তু তা-ই একমাত্র কারণ নয় নারী নির্যাতনের, ধর্ষণের। সবখানে, শহরে, গ্রামে, উঁচু তলায়, নিচের স্তরে- কোথায়ই বা নারী নিরাপদ?

আজ মা দিবস, আজকের দিনে সব পুরুষ শুধু একটা কাজই করতে পারে, সব মেয়ের সামনে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে পারে। কিন্তু ক্ষমা আমাদের প্রাপ্য নয়। আমরা যদি একটা সুন্দর দেশ গড়তে না পারি, যেখানে নারী নিজেকে অধস্তন ভাববে না, পুরুষ নিজেকে গণ্য করবে না ঊর্ধ্বতন বলে, তাহলে তো ক্ষমা আমাদের জন্য নয়। মা দিবসও আমাদের জন্য নয়। আমরা মা দিবস পালনের যোগ্য নই।

আজ মা দিবসেই তাই আমাদের জোর কণ্ঠে বলতে হবে, সোনাগাজির নূসরাতের ভয়াবহ ঘটনায় অপরাধীদের সাজা পেতেই হবে, আর সে সাজা হতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। আমাদের প্রমাণ করতে হবে, আমাদের সমাজ প্রভাবশালী সম্পদশালী অপরাধীদের অভয়াশ্রম নয়। এটা আমাদের পারতেই হবে। পারতেই হবে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও আইনের শিক্ষার্থী।

203 ভিউ

Posted ৪:৪৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ মে ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com