মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আমেরিকা আবিষ্কার করেন কে ?

শুক্রবার, ২০ জুলাই ২০১৮
705 ভিউ
আমেরিকা আবিষ্কার করেন কে ?

কক্সবাংলা ডটকম(২০ জুলাই) :: মধ্য এশিয়ার একজন ইসলামী পণ্ডিত আবু রায়হান আল-বিরুনিই সম্ভবত কলম্বাসের আগে আমেরিকা আবিষ্কার করেন

১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পণ্ডিত ও উৎসাহী মানুষের এক বিরাট দল আমেরিকা আবিষ্কারকের প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে। উপসাগরীয় এলাকায় রোড আইল্যান্ডের প্রাচীন ফোনেশীয় অথবা উপসাগরীয় এলাকার মধ্যরাজ্য থেকে চীনাদের হাজির হওয়ার অলীক বিবরণ নিয়ে অনেকের দাবি রীতিমতো অদ্ভুত। ১৯৫০-এর দশকের দিকে বর্ণাঢ্য নরওয়েজীয় নৃবিজ্ঞানী ও অভিযাত্রী থর হেয়েরডাহল কলোম্বাস জাহাজ ভাসানোর বহু আগে থেকেই পেরুভীয়রা বালসার কাঠের তৈরি পাল তোলা নৌকায় আমেরিকা ও পলিনেশিয়ার ভেতর যাতায়াত করছিল বলে মত প্রকাশ করেন।

স্পষ্টতই এসব আজগুবি গল্প এক পাশে ঠেলে দিয়ে শিরোনামের সপক্ষে বেশ কয়েকজন গুরুতর দাবিদার রয়েছেন। প্রথমজন হলেন ভেনিসীয় নাবিক ও অভিযাত্রী জুয়ান শ্যাবোতো (আনু. ১৪৫০-৯৯)। ১৪৯৮ সালের আগে কলোম্বাসের আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে না পৌঁছার বাস্তবতাকে ঘিরে তার দাবি দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে পাক্কা এক বছর আগেই উত্তর আমেরিকার তীর স্পর্শ করেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ড থেকে রওনা হয়েছেন বলেই ইংরেজিভাষী জগতে তাকে জন ক্যাবট নামে স্মরণ করা হয় এবং ভেনিস থেকে ইংল্যান্ডের দিকে পাল্লা হেলে পড়ে। পরে দেখা গেল, ক্যাবট ব্রিস্টলে অর্থলগ্নিকারী ও সপ্তম হেনরির তরফ থেকে পেটেন্ট পেলেও তার প্রধান অর্থলগ্নিকারী ছিল লন্ডনের এক ইতালীয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। ফলে কৃতিত্ব ফের ইতালিতে ফিরে যায়।

আবিষ্কার  সংশয়

১৯৬৬ সালে ইংরেজ পণ্ডিত অলউইন রাডক ১৪৯৮ সালে কলম্বাসকে উদ্দেশ করে জন ডে নামে এক ইংরেজ বণিকের লেখা একটি চিঠি আবিষ্কার করেন। ওই চিঠিতে ডে দাবি করেন, এটা ‘নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া হয়’ যে, উত্তর আমেরিকার মূলখ ভূখণ্ড— ক্যাবট এর আগের বছর যেখানে সফরে গিয়েছিলেন— ব্রিস্টল বন্দরের (ঘটনাক্রমে রাডকের নিজ শহর ছিল এটা) নাবিকরা ‘অতীতেই আবিষ্কার’ করেছে। আরো দলিলপত্র খুঁজে বের করে রাডক মত দেন যে, অগ্রগামী এই ইংরেজরা ১৪৭০ সালের দিকেই আমেরিকায় হাজির হয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ২০০৫ সালে রাডক সমস্ত দলিলপত্র পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঠিক যখন মনে হচ্ছিল যে, পুরস্কার ফের উত্তরে ফিরে যাবে, টাটকা সন্দেহ দেখা দিয়েছে তখন।

এমনি পিংপং খেলার ভেতরই ক্যাবটের ইতালীয় পৃষ্ঠপোষকদের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্যের আবিষ্কার কর্তা ইতালীয় ইতিহাসবিদ ফ্রান্সেস্কো গিডি-ব্রাসকোলি একটা হলদেটে পার্চমেন্ট ম্যাপের দেখা পেয়ে যান। ক্যাবটকে হয়তো বহু বছর আগের আবিষ্কারকে নিশ্চিত করার জন্য পাঠানো হয়েছিল, এমন কৌতূহলোদ্দীপক আভাস মেলে এতে। ইতালীয় ভাষায় লেখা এ ম্যাপে ভেনিসের ‘গিওভান্নি শ্যাবট’কে (ক্যাবট) ‘নতুন দেশে’র উদ্দেশে রওনা হওয়ার নির্দেশ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন দেশের এ উল্লেখের ক্ষেত্রে অনির্দিষ্ট ইতালীয় উপসর্গ আনের জায়গায় নির্দিষ্ট ইল ব্যবহার করায় বোঝা যায়, আগের এক অভিযাত্রীর প্রতিবেদনের সুবাদে গিডি-ব্রাসকোলির মনে হয়েছে যে, ক্যাবটের পৃষ্ঠপোষকরা আগে থেকেই আমেরিকার কথা জানতেন। ক্যাবট স্রেফ এরই মধ্যে জানা বিষয়ই নিশ্চিত করছিলেন।

এদিকে স্ক্যান্ডিনেভীয় পণ্ডিতরা ইংরেজ ও ইতালীয়দের আগেই তাদের পূর্বসূরিদের উত্তর আমেরিকার উপকূলের পথ ধরার প্রমাণের খোঁজে বিভিন্ন নর্স গাথা পরখের কাজটি সেরে ফেলেছেন। গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন আবিষ্কারের কল্যাণে সংকীর্ণ খোলের নৌকায় সাগরের ঢেউ ভেঙে ভাইকিংদের গ্রিনল্যান্ডে অভিযানে নামার এবং বসতি স্থাপনের কাহিনী এখন সর্বজনবিদিত ও প্রতিষ্ঠিত। বিংশ শতাব্দের শুরুর দিকে অসলোর ইউনিভার্সিটি অব ক্রিশ্চিয়ানার প্রফেসর গুস্তাভ স্টর্ম মার্কল্যান্ড, (দক্ষিণ ল্যাব্রাডর), হেল্লুল্যান্ড (বাফিন আইল্যান্ড) ও ভিনল্যান্ড শনাক্ত ও নামকরণের প্রমাণ তুলে ধরে নরওয়েজীয়দের বেশ কয়েকবার কানাডীয় উপকূলের খুব কাছে গিয়ে হাজির হওয়ার প্রমাণ তুলে ধরেছেন। ভিনল্যান্ডকে নোভা স্কশিয়া বলে ভাবা হয়েছিল।

নর্স গাথা

এসব অভিযানের ভেতর এরিক দ্য রেডের (আনু. ৯৫০-১০০৩) ছেলে গ্রিনল্যান্ডের আবিষ্কারক লিয়েফ এরিকসন (৯৭০-১০২০) ১০০০ সালের দিকে ভিনল্যান্ডের দেখা পাওয়ায় ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। এটা ঠিক যে, ১৩৮৭ সালের দিকের একটি গল্প জানাচ্ছে যে, বিয়ার্নি নামে জনৈক হেরিউল্ফের ছেলে নিজের পথ থেকে ছিটকে গিয়ে ৯৮৫-৬ সালের দিকে ভূমির দেখা পেয়ে লিয়েফের আগেই ভিনল্যান্ডে পৌঁছেন। কিন্তু বিয়ার্নির দাবির পক্ষে আর কোনো সমর্থন মেলেনি।

তাহলে উত্তর আমেরিকার এ নর্স ‘আবিষ্কার’ দিয়ে কী বোঝানো হচ্ছে? লিয়েফ এরিকসন খ্রিস্টান মিশনারি ছিলেন। নরওয়ের রাজা প্রথম ওলাফ (শা. ৯৯৫-১০০০) গ্রিনল্যান্ডের বসতিগুলোতে ধর্ম প্রচারের নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন তাকে। ফিরতি যাত্রায় তার জাহাজ এতটাই উত্তরে ভেসে গিয়েছিল যে, নোভা স্কশিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি। এ অভিযানে রক্ষা পাওয়ায় বিস্মিত নর্স কাহিনীকাররা তার নাম দিয়েছেন ‘লিয়েফ দ্য লাকি’।

এরিকসন বাদে উত্তর আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী বাকি বেশির ভাগ নরওয়েজীয়ই পেশাগত দিক থেকে বণিক ছিলেন। বাণিজ্যিক স্বার্থ অনুকূল হলে হয়তো তারা মহাদেশটির কথা দ্বিতীয়বার ভাবতেন, কিন্তু তারা তা করেননি। উত্তর আমেরিকায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি অভিযান স্থানীয় আমেরিকানদের সঙ্গে যুদ্ধে পর্যবসিত হলে তড়িঘড়ি জাহাজ নিয়ে পালিয়ে আসেন তারা। ১৯৬০ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ডের দক্ষিণ মাথায় লা’আনসে অক্স মিডৌজে ভাইকিংদের নতুন বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষিণে পৌঁছার প্রমাণ নিশ্চিত হয়।

লা’আনসে অক্স মিডৌজ ও গ্রিনল্যান্ডে প্রত্নতাত্ত্বিকদের আবিষ্কৃত মাটির বাড়িঘর ও আদিম নিদর্শন থেকে এ নরওয়েজীয় বণিকরা কঠিন অভিযাত্রী হিসেবেই দেখা দিয়েছেন। তাদের ‘অভিযানগুলো’র কথা বলতে গেলে, সাধারণত দুর্ঘটনা কিংবা অননুকূল হাওয়ার কারণে সম্পূর্ণ অনির্ধারিতভাবে ভেসে গেছে তারা। ভাইকিংরা ভেবেচিন্তে বড়জোর উপকূল রেখা ধরে পূর্বসূরিদের চেয়ে খানিকটা বেশি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাত। যেভাবেই হোক, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড কিংবা নরওয়েতে ফেরার পর আগুনের পাশে বসে বস্ফািরিত চোখ শ্রোতাদের কাছে তাদের কাহিনী বয়ান করত তারা। উত্তর আমেরিকার পথে রওনা হওয়া ভাইকিংদের কোনো নেতার শিক্ষিত থাকার প্রমাণ মেলে না।

জার্মানির ব্রেমেনের অ্যাডাম (আনু. ১০৫০-১০৮১/৫) লিয়েফ দ্য লাকির অভিযান সম্পর্কিত গল্পগুলোকে জায়গা করে দেয়া ইতিহাস গ্রন্থগেস্তা হাম্মাবার্জেনসিসএক্লেসিয়া পন্টিফিকাম রচনার আগে আরো তিনটি প্রজন্ম কেটে গিয়েছিল। অ্যাডাম এবং অন্য ইতিহাসবিদ ও কথাকাহিনীর লেখকরা এসব অনন্য অভিযানের তাত্পর্যের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকার আভাস ছাড়াই অবিচল ও নির্বিকার ঢঙে বর্ণনা দিয়ে গেছেন।

ভাইকিংরা গ্রিনল্যান্ডের ঘাঁটি থেকে দক্ষিণ ও পশ্চিমে অভিযানে নামছিল যখন, তখন সবচেয়ে কাছের উন্মুক্ত লোনা জল থেকে বহু মাসের সমান দূরে ভূমি সীমাবদ্ধ অঞ্চলে আবিষ্কারের সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা প্রক্রিয়া চলছিল। তিন হাজারেরও বেশি বছর আগে থেকে বর্তমানকালের উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও আফগানিস্তানের মহান নগরকেন্দ্রগুলোর বণিকরা ইউরেশিয়ার ওপর দিয়ে ইউরোপ থেকে ভারত ও চীনে পণ্য চালান করত। বিশাল উটের কাফেলায় ডজনখানেক বা তারও বেশি পণ্যবাহী জাহাজের সমান মালসামান বহন করত তারা। এসব দেশের মুদ্রা শ্রীলংকা ও ইংল্যান্ডের মতো দূর-দূরান্তেও চালু ছিল। অন্যদের ভেতর ভাইকিংরা জাঁকালোভাবে তৈরি এসব মুদ্রা ব্যাপকভাবে প্রচলিত থাকার কথা জানায় বিপুল পারমাণে সংগ্রহ করত। মধ্য এশীয় বণিকরা দেশে ফিরে নিরেট বহুতলবিশিষ্ট ভবনের অগ্নিকুণ্ডের পাশে বসে কেবল তাদের কাহিনী বয়ানই করত না, বরং তাদের সফর করা বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া ও ভূগোল সম্পর্কিত বিশদ বিবরণও লিখে রাখত। স্থানীয় পণ্ডিতরা তাদের এসব প্রতিবেদন সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেতেন। 

অনুসন্ধিত্সু মন

এ পণ্ডিতদের ভেতর সবসেরা ছিলেন আবু রায়হান বিরুনি। বর্তমান উজবেকিস্তানের অরাল সাগরের কাছে ৯৭৩ সালে জন্মগ্রহণকারী বিরুনি তরুণ বয়সেই গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, খনিজ বিদ্যা, ভূগোল, মানচিত্রাঙ্কনবিদ্যা, জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতি আয়ত্ত করেন। পার্সি, আরবি এবং দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দের মাঝামাঝি সময় বৃহত্তর ইরানের শাসক পরিবার সুন্নি রাজবংশের ভাষা খোয়ারজিময় ভাষায় কথা বলতে পারতেন তিনি।

অল্প বয়সেই বিরুনি নিজের শহরের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ নির্ণয়ের পাশাপাশি অন্যান্য জায়গারও একই ধরনের স্থানাঙ্ক সংগ্রহ করেন। প্রাচীন গ্রিক সূত্র কাজে লাগিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের শত শত জায়গার উপাত্ত সংকলিত করার পর দুনিয়ার অন্যান্য জায়গারও হিসাব জুড়তে শুরু করেন তিনি। ক্লদিয়াস টলেমির (আনু. ১৫০ খ্রি.পূ.) মতো প্রাচীন লেখক থেকে শুরু করে আরো সাম্প্রতিক সূত্র ও নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকে পৃথিবী গোলাকার হওয়ার ব্যাপারটা তার জানা ছিল। ৩০ বছর বয়সে বিরুনি পৃথিবীর পরিধি বের করার জন্য তখনকার সবচেয়ে আধুনিক কৌশল কাজে লাগিয়েছেন। রেনেসাঁর আগে জুড়িবিহীন এক অগ্রসর প্রয়াসে পৃথিবীর উপরিতলের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে ১৬ ফুট উঁচু একটা গ্লোব তৈরি করেছিলেন তিনি।

মধ্য এশীয় আরো কয়েকজন বিজ্ঞানীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন বিরুনি। আজকের উজবেকিস্তানের আহমাদ আল-ফারগানি তাদের একজন। নবম শতকে বিষুব রেখায় এক ডিগ্রির প্রস্থ নির্ণয় করেছিলেন তিনি। এ হিসাব থেকেই তিনি পৃথিবীর পরিধি বের করেন। বিরুনির তুলনায় তার হিসাব কম নির্ভুল হলেও এক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিকদের অর্জিত সাফল্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতি চিহ্নিত করে এবং এ বিষয়ে তার আ কম্পেন্ডিয়াম  অব দ্য সায়েন্স অব দ্য স্টার্স (আনু. ৮৩৩) গ্রন্থের বিপুল পাঠক তৈরি নিশ্চিত করে।

৫০০ বছর পর কলোম্বাস ফারগানির রচনার একটি লাতিন তর্জমা হাতে পান। পৃথিবীর গোলাকার হওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়াও সম্ভাব্য পৃষ্ঠপোষকদের প্রদক্ষিণের পক্ষে পৃথিবী যথেষ্ট ছোট বোঝাতে ফারগানির তথ্য কাজে লাগান তিনি। কলোম্বাস অবশ্য ভুলবশত ফারগানি আরব মাইলের হিসাব বদলে রোমান মাইলের হিসাব ব্যবহার করেছেন বলে ভেবেছিলেন। এটা তাকে পৃথিবীর সত্যিকার পরিধি হিসাবের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ কম ধারণা করতে বাধ্য করে। এ ভুল (কিংবা ইচ্ছাকৃত) হিসাব কলোম্বাসকে চিপানগো বা জাপানকে ভার্জিন আইল্যান্ডের কাছে স্থাপন করায়। সুবিধাজনক এ ভুল তার হিসাবে চীনের পথে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত সফরে তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছিল।

বিরুনি বিশেষত বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থের আপেক্ষিক ঘনত্ব ও ভর এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ প্রকৃতিতে কীভাবে পরস্পর মিলিত হয়, সে-সংক্রান্ত গবেষণায় মগ্ন ছিলেন। এ গবেষণার প্রক্রিয়ায় তিনি আপেক্ষিক গুরুত্বের ধারণার বিকাশ ঘটান।

বিরুনি ঠিক কীভাবে নিখুঁত হিসাবের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন, সেটা একটা রহস্য। নিশ্চিতভাবে তার শিক্ষার কাছে ঋণী ছিল ব্যাপারটা। তার শিক্ষায় ধ্রুপদী গ্রিক বিজ্ঞনী পিথাগোরাস অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। পিথাগোরাস ‘পদার্থ হচ্ছে সংখ্যা’ বলে ঘোষণা করেছিলেন। পর্যবেক্ষণের সমস্ত কিছুরই পরিমাণগত হিসাব বের করার অবিরামে তাগিদ ও কৌতূহলী মনের সম্মিলন বিরুনিকে এক যুগান্তকারী অন্তর্দৃষ্টির পথে নিয়ে গিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কলোম্বাস, ক্যাবট ও ভাইকিংদের ছায়াচ্ছন্নতায় ঠেলে দেয়।

১০১৭ সাল নাগাদ বিরুনি খোয়ারাজমে তার নিজস্ব অঞ্চল গারুহাঞ্চের একজন সম্মানিত বিজ্ঞানীতে পরিণত হন। কিন্তু ওই বছর আফগানিস্তানের গজনির মাহমুদ নামে পরিচিত ভয়ঙ্কর ও ধর্মান্ধ নিষ্ঠুর মুসলিম শাসক খোয়ারজম বিধ্বস্ত করে এর রাজধানী ধ্বংস করে দেন। নিষ্ঠুর হলেও অঞ্চলের বহু শাসকের মতো নিজেকে কবি ও বিদ্যান লোক দিয়ে পরিবেষ্টিত করতে চেয়েছেন তিনি। বিরুনিকে গবেষণার ফলাফলসহ গজনিতে আসার নির্দেশ দেন তিনি।

উপায়ন্তর না দেখে বিরুনি কেবল নির্দেশ পালনই করেননি, বরং বিগত দশকে মাহমুদের অধিকার করা ভারত সম্পর্কে জানার এ সুযোগ লুফে নেন। কিন্তু মাহমুদ যেমন নিষ্ঠুর তেমনি কঠিন ছিলেন, বিরুনি দ্রুতই বুঝে যান যে, রাজদরবারের সঙ্গে নিজের দূরত্ব বাড়িয়ে তুলতে হবে তাকে। বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরে চলে আসেন তিনি। এখানে হিন্দু ধর্ম ও ইসলামের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ওপর পৃথিবীর প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন। নিজের বিভিন্ন লেখা ও কেবল সাধারণ অ্যাস্ট্রোল্যাব বাদে অন্য কোনো সরঞ্জাম ছাড়াই বর্তমান ইসলামাদের অদূরে নন্দনের অত্যন্ত সুরক্ষিত পাহাড় চূড়ার দুর্গে চলে যান তিনি।

এখানে পৃথিবীর পরিধি বের করার পুরনো সমস্যায় ফিরে যান বিরুনি। এ উদ্দেশ্যে সতর্ক পর্যবেক্ষণ, গোলীয় ত্রিকোণমিতি ও ‘সাইনে’র বিভিন্ন নিয়মের প্রয়োগসংশ্লিষ্ট একটা নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেন। সমতল ভূমির দুটি দূরবর্তী বিন্দু ব্যবহারের চেয়ে ঢের সহজ এ পদ্ধতিতে পৃথিবীর আধুনিক চূড়ান্ত হিসাবের চেয়ে মাত্র ১০ দশমিক ৪৪ মাইল কম একটি হিসাব বেরিয়ে এসেছে।

১০৩০ সালে মাহমুদের মৃত্যুর পর বিরুনি তার ফিল্ড নোট ও কাগজপত্র ফের আফগানিস্তানের গজনিতে নিয়ে আসেন। এখানে মাহমুদের ছেলে প্রথম মাসুদ (শা. ১০৩১-৪০) তাকে স্বাগত জানিয়ে গবেষণা ও লেখালেখির নিরিবিলি জীবনযাপনে সাহায্য করেন। বিরুনি আপেক্ষিক গুরুত্বের ওপর তার আজীবন গবেষণা লিখে ফেলেন এবং তারপর সে সময় জ্যেতির্বিদ্যা ও এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে জানা সব জ্ঞান সংকলিত করে কোডেক্স ম্যাসুদিকাস নামে পরিচিত এক বিশাল গ্রন্থ রচনায় হাত দেন।

কোডেক্স ম্যাসুদিকাসেই বিরুনি সূর্যের স্থির হওয়ার ও পৃথিবীর একে প্রদক্ষিণ করার ধারণা বিবেচনা করেছিলেন। হেলিওসেন্ট্রিক ধারণা পুরোপুরি আলিঙ্গন করার আগেই নিজেকে বিরত রেখে তার বদলে লক্ষ করেন যে, হেলিওসেন্ট্রিক বিশ্বের ধারণা এর বিকল্পের তুলনায় কম যৌক্তিক নয় এবং গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদদের হয় একে গ্রহণ বা বর্জনের আহ্বান জানান। এখানে বিস্ময়ের কিছু নেই যে, বিজ্ঞান-ইতিহাসবিদরা কোডেক্স ম্যাসুদিকাসকে প্রাচীন যুগের শেষ ও আধুনিক কালের মধ্যবর্তী সময়ের জ্যোতির্বিদ্যার সেরা গ্রন্থ মনে করেন। তার কোডেক্সে বিরুনি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অস্তিত্বের প্রকল্পও প্রকাশ করেছিলেন।

নন্দনে পৃথিবীর পরিধিসংক্রান্ত গবেষণা উপস্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন বিরুনি। এরপর পৃথিবীর নতুন আরো নির্ভুল মানচিত্রে সব পরিচিত ভৌগোলিক জায়গাগুলো স্থাপনের কাজ শুরু করেন। তার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের তালিকা এর আগের সংগ্রহের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে উঠেছিল এবং এখন ইউরেশীয় এলাকার শত শত জায়গাসহ কেবল ভারতেরই ৭০টিরও বেশি জায়গা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এসব উপাত্ত পৃথিবীর মানচিত্রে স্থাপন করার পর বিরুনি লক্ষ করলেন যে, আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিম বিন্দু থেকে চীনের সবচেয়ে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত ইউরেশিয়ার গোটা দৈর্ঘ্য গ্লোবের মাত্র দুই-পঞ্চমাংশজুড়ে বিস্তৃত। ফলে পৃথিবীর উপরিতলের তিন-পঞ্চমাংশ জায়গাই ফাঁকা পড়ে ছিল।

মহাসাগরের দুনিয়া

১৫ হাজার মাইল জোড়া এ শূন্যস্থান ব্যাখ্যার সবচেয়ে স্পষ্ট উপায় ছিল প্রাচীন কাল থেকে বিরুনির আমল পর্যন্ত সব ভূগোলবিদের মেনে নেয়া ব্যাখ্যার স্মরণ নেয়া: ইউরেশীয় ভূখণ্ড এক ‘মহাসাগরীয় বিশ্বে’ ঘেরাও হয়ে আছে। কিন্তু আদৌ কি পৃথিবীর পরিধির পাঁচ ভাগের তিন ভাগই স্রেফ জলরাশি? এ সম্ভাবনা বিচার করে পর্যবেক্ষণ ও যুক্তির হিসাবে একে বাতিল করে দিলেন বিরুনি। আপেক্ষিক গুরুত্বসংক্রান্ত গবেষণা থেকে তিনি জানতেন, বেশির ভাগ নিরেট বস্তু পানি থেকে ভারী। তাহলে এমন জলরাশি ভরা পৃথিবী কি সময়ের পরিক্রমায় সামাল দেয়ার পক্ষে মারাত্মক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করত না? কেনই বা, প্রশ্ন তুললেন তিনি, যে শক্তি পৃথিবীর পরিধির দুই-পঞ্চমাংশ ভূমি সৃষ্টি করেছে, বাকি তিন-পঞ্চমাংশের ক্ষেত্রে সেটার প্রভাব থাকবে না? বিরুনি সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝখানের বিশাল সাগরের মাঝামাঝি কোথাও অবশ্যই এক বা একাধিক ভূখণ্ড বা মহাদেশ রয়েছে।

অজানা এ মহাদেশগুলো কি বিরান বুনো প্রান্তর, নাকি লোক-বসতি রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে দ্রাঘিমাংশের দিকে মনোযোগ দিলেন বিরুনি। তিনি লক্ষ করলেন, রাশিয়া থেকে উত্তর-দক্ষিণ ভারত ও আফ্রিকার কেন্দ্রে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মানবজাতি বাস করছে। অজানা মহাদেশ বা মহাদেশগুলোয় মানববসতি থাকলে যুক্তি দেখালেন তিনি, সেগুলো অবশ্যই এ বলয়ের উত্তর বা দক্ষিণ পাশেই হবে।

এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিরুনি পর্যবেক্ষণের নিজস্ব ক্ষেত্র থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন অনুসিদ্ধান্ত থেকে গড়ে তোলা অ্যারিস্টটলীয় যুক্তি প্রক্রিয়া ব্যবহার করলেন। ইউরেশীয় ভূখণ্ড মোটামুটি পৃথিবীর বলয় ঘিরে বিস্তৃত ধরে নিয়ে প্রস্তাবনা রাখলেন যে, এটা নিশ্চয়ই কোনো শক্তিশালী প্রক্রিয়ার ফল, যা নিশ্চিতভাবে অন্যত্রও ঘটে থাকবে। পৃথিবীর বিভিন্ন জানা প্রমাণ অজানা মহাদেশগুলো একেবারে উত্তর বা দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশে চেপে বসেছে বিশ্বাস করার পক্ষে কোনো ভিত্তি জোগায়নি। প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝামাঝি থাকা অজানা ভূখণ্ড নিশ্চয়ই বসবাসযোগ্য হবে বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন তিনি। সত্যিই তাই ছিল।

এর আগের তিন দশকের গবেষণার ভিত্তিতে বিরুনি ১০৩৭ সাল নাগাদই নতুন বিশ্বের অস্তিত্ব সম্পর্কে এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন।

বিরুনি কি একাদশ শতকের প্রথম তৃতীয়াংশেই আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন? এক অর্থে অবশ্যই না। তিনি কখনই তার রচনার মহাদেশগুলো স্বচক্ষে দেখেননি। বিপরীতে নরওয়েবাসী ১০০০ সালের কিছু আগেই নিশ্চিত করেই অল্প সময়ের জন্য কী আবিষ্কার করেছে, না জেনেই উত্তর আমেরিকা স্পর্শ করেছিল। লিয়েফ এরিকসন উত্তর আমেরিকার বুনো উপকূলের ব্যাপারে এতটাই নিস্পৃহ ছিলেন যে, পরে আর সেখানে যাওয়ার কথা মাথায়ই আনেননি। তেমনকি পরে যারা এরিকসনের ভ্রমণের মৌখিক প্রতিবেদন শুনেছেন বা পড়েছেন তারাও না। তবু ‘আবিষ্কার’ কথাটা নরওয়েবাসীর নিরাসক্ত প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকলে পুরস্কারটি অবশ্যই ভাইকিংদেরই প্রাপ্য।

তবু বিরুনি অন্তত যেকোনো নরওয়েজীয়র মতোই উত্তর আমেরিকা আবিষ্কর্তার শিরোপা পাওয়ার দাবি রাখেন। এছাড়া তিনি যে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, সেগুলোও খোদ সিদ্ধান্তের চেয়ে কম বিস্ময়কর নয়। তার কৌশলগুলো ভেনিসীয় নাবিক বা নরওয়েজীয় সাগরযাত্রীদের মতো হিট-অর-মিস পদ্ধতি ছিল না, বরং সযত্ন নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ, অনুপুঙ্খভাবে মেলানো পরিমাণবাচক উপাত্ত এবং জোরালো যুক্তির নিপুণ সমন্বয় ছিল। কেবল আরো আধা শতাব্দ পরই কারো পক্ষে ভৌগোলিক অভিযানের ক্ষেত্রে এ ধরনের কঠোর বিশ্লেষণ প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে।

এ বিষয়ে জানা সব বিদ্যা একত্র করে, প্রাচীন গ্রিক ও ভারতীয়দের পাশাপাশি মধ্যযুগীয় আরব ও সতীর্থ মধ্য এশীয়দের জ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে বিরুনি তার বিপুল ও নির্ভুল উপাত্ত তৈরিতে সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন এবং একে গণিত, ত্রিকোণমিতি ও গোলীয় জ্যামিতি এবং অ্যারিস্টটলীয় যুক্তির হালনাগাদ সূত্রে প্রক্রিয়াজাত করেছেন। অন্যান্য গবেষক তার আবিষ্কারকে পরখ ও পরিমার্জনা করতে চাইতে পারেন উপলব্ধি করে নিজের সিদ্ধান্তকে প্রকল্প আকারে তুলে ধরার বেলায় সতর্ক ছিলেন তিনি। আরো ৫০০ বছর সেটা ঘটেনি। শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা তার প্রকল্প নিশ্চিত করেন এবং তার দুঃসাহসী প্রস্তাবনা প্রমাণ করেন।

বাঁধনমুক্তি

মধ্য এশিয়ার এ সন্তান তর্কসাপেক্ষে প্রাচীন বিশ্ব ও ইউরোপীয় অভিযাত্রার মহাযুগের মাঝামাঝি সময়ের সেরা অভিযাত্রী ছিলেন। বিরুনির কাজের দুটি বৈশিষ্ট্য এ সিদ্ধান্ত দাবি করে। প্রথমত. তিনি ধর্মীয় বা সেকুলার গোড়ামি বা লোককথা বা কল্পকাহিনীর হাতে বাঁধা না পড়েই যুক্তির সাহায্যে এ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তিনি মুসলিম ছিলেন, কিন্তু ইসলামের সংস্কৃতিমুখী ধারণা থেকে এমনভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন, যার জন্য খ্রিস্টান পশ্চিমের বিজ্ঞানীরা আরো কয়েক শতক সংগ্রাম করেছেন। সাগর থেকে বহুদূরে ভূখণ্ডবেষ্টিত অঞ্চলে বাস করে কেবল বৈজ্ঞানিক মাপজোখের উদ্দেশ্য ছাড়া গবেষণা থেকে না সরেই শ্বাসরুদ্ধকর বুদ্ধিবৃত্তিক অভিযাত্রা সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। নিজের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরোপুরি আস্থাশীল ছিলেন তিনি, তাকে ভুল প্রমাণ করার জন্য কেউ কীভাবে অগ্রসর হতে পারে, তার স্পষ্ট ধারণাও তুলে ধরেছেন।

আজকের দিনে হাজার বছর আগে এই মধ্য এশীয় বহুপ্রজের তুলে ধরা বিশ্বাসকে ছাপিয়ে যেতে পারবে কে?

…পরম অর্থে, বিজ্ঞান এর জ্ঞান [এর আধার] বাদেও নিজেই যথেষ্ট, এর প্রলোভন চিরন্তন ও অবিরাম… [বিজ্ঞানের সেবকদের] উচিত পরিশ্রমীদের প্রয়াস তর্কে বিজয় [অর্জনের আশার] থেকে বরং [খোদ বিজ্ঞানে] আনন্দ থেকে উৎসারিত হলে তার তারিফ করা।

এমনকি আজো বিরুনির মোদাস অপারেন্দি বিস্ময়করভাবে নতুন ঠেকে, যুক্তিবর্জিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মধ্যযুগীয় বিশ্বের গভীর থেকে উঠে আসা বৈজ্ঞানিক জিজ্ঞাসার এক শান্ত ও নিরাসক্ত কণ্ঠস্বর।

বিরুনি এমন এক জায়গায় থেকে এবং কাজ করে এ সাফল্য লাভ করেছিলেন, যাকে এখনো লোকে কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও সহিংসতায় ডুবে থাকা একটা পশ্চাত্পদ এলাকা মনে করে। পশ্চিম উজবেকিস্তানের তার জন্মস্থান অরাল সাগরের বেশ কাছে, যেখানে ১৯৫০-এর দশক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আধুনিক কালের অন্যতম ভয়ঙ্কর পরিবেশগত বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছিল। তুর্কমেনিস্তানের উত্তর সীমান্তের এক নিরানন্দ এলাকায় তার সাফল্য ধরা দিয়েছিল। বিশাল গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে বহুদূরে, এখন যেগুলো ওই দেশটিকে মধ্য এশীয় কুয়েতে পরিণত করতে যাচ্ছে। বর্তমানে পাকিস্তানের পশ্চিম পাঞ্জাবের নন্দনে তার গবেষণা তাকে পাকিস্তান ও ভারতের সশস্ত্র লড়াইয়ের অর্ধশতাব্দের ভবিষ্যৎ দৃশ্যপট জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ১ ঘণ্টার যাত্রায় স্থাপন করছে। আফগানিস্তানের গজনির বেলায়, যেখানে তিনি বিখ্যাত কোডেক্স ম্যাসাদিকাস রচনা করেছিলেন, স্রেফ তার শহরে পৌঁছাই আজকের দিকে একটা বিপজ্জনক কাজ, এর জন্য কাবুল থেকে কান্দাহার অবধি মাইন বসানো রাস্তা পেরোতে সশস্ত্র বাহন ও সশস্ত্র প্রহরীর প্রয়োজন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে পৌঁছা সম্ভব এবং প্রাচীন গজনির বিষণ্ন ধ্বংসাবশেষের ভেতর বিরুনির সত্যিকারের কবর খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। আফগানিস্তানের কেন্দ্রেই গোটা বিশ্ব এবং এর সমস্ত জ্ঞানের প্রতি উন্মুক্ত মধ্য যুগের সবচেয়ে আধুনিক অভিযাত্রীর দেহাবশেষ পড়ে আছে।

আফগানিস্তান কখনো স্থিতিশীল সরকারের অধিকারী হয়ে বিকশিত হতে শুরু করলে পর্যটক ও ভ্রমণকারীরা ভৌগোলিক অভিযাত্রী হিসেবে বিরুনির মহান রচনার দৃশ্যপট গজনি সফরে যাবেন এবং এমন একজনের সমাধিতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন, যার সাফল্য কলোম্বাসের সফলতার সমান্তরাল।

এস. ফ্রেডেরিক স্টার : [এস ফ্রেডেরিক স্টার জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পল এইচ স্কুল অব অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রিসার্চ প্রফেসর ও সেন্ট্রাল এশিয়া-ককেসাশ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।]

705 ভিউ

Posted ৫:৫৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২০ জুলাই ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com