কক্সবাংলা ডটকম :: গ্রাহক ও মার্চেন্টদের ৩৩৮ কোটি টাকা আত্মসাত অভিযোগে তদন্তনাধীন ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ যমুনা ১,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে ঘোষণা করেছেন ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল।
মঙ্গলবার রাতের নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি জানান, “দেশের শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ যমুনা গ্রুপ। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে যমুনা। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।”
ওই ফেসবুক পোস্টে এমন বিনিয়োগকে স্বাগত জানানোর কথা উল্লেখ করে রাসেল বলেন, “একটি দেশীয় উদ্যোগ হিসেবে আমাদের পাশে আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত। যমুনার এই বিনিয়োগ ধারাবাহিক বিনিয়োগের অংশ এবং পরবর্তী ধাপেও তাদের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এই বিনিয়োগ ইভ্যালির ভবিষ্যত উন্নয়ন এবং ব্যবসা পরিধি বৃদ্ধিতে ব্যয় করা হবে।”
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে যমুনা গ্রুপের পরিচালক ড. আলমগীর জানান, ইভ্যালির সঙ্গে তাদের আগে থেকেই ব্যাবসা চলমান থাকায় পুরনো অর্ডারগুলো তারা বন্ধ করছে না। ২০০ কোটি টাকার পণ্যের যে পুরনো লেনদেন সেটির জন্য ইভ্যালিকে চাপ দেবে না যমুনা গ্রুপ।
ইভ্যালিকে যমুনা গ্রুপ কীভাবে সহযোগিতা করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রাসেল ভাই আমাদের সাথে বসেছিলেন। উনারা আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন বর্তমান সময়ে। আমরা সহযোগিতার অংশ হিসেবে ওদের সাথে তো আমাদের আগেরও লেনদেন আছে, সেদিক থেকে অনলাইন ব্যবসাটাকে মার্কেটপ্লেস হিসেবে দেখে ধাপে ধাপে, সময়ে সময়ে আমরা টোটাল বিজনেসটা করবো।”
“এক হাজার কোটি টাকা তো একদিনে না। প্রাথমিকভাবে ২০০ কোটি টাকার মতো পণ্য দিয়েছি এবং দেবো। টোটালি আগের পেমেন্টসহ সব মিলিয়ে ২০০ কোটি টাকার ইনিশিয়াল ইনভেস্টমেন্ট চলবে। এটার উপরে বিজনেস ডেভেলপ করে ক্রমান্বয়ে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।”
ড. আলমগীর আরও বলেন, “এটা আসলে ওরা সহযোগিতা চেয়েছে। একটা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম খাড়া হয়ে গেছে। এখন সবাই যদি টাকা চায় এই মুহুর্তে তাহলে তো তারা বিজনেসটা গুটিয়ে নেবে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যমুনা গ্রুপ আসলে পণ্য বিক্রি করতে চায়। সেদিক থেকে চাপ দিয়ে তার পাওনা টাকা আদায় করে কাউকে ব্যবসা বন্ধ করার পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় না। যেকারণে আমরা ইভ্যালিকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সহযোগিতা বলতে আমাদের সাথে তো ওদের কন্টিনিউয়াস বিজনেস আছে। আমরা অর্ডারগুলো বন্ধ করছি না। তো অলরেডি ২০০ কোটি টাকার ট্রানজ্যাকশন চলছে।”
গত ৪ জুলাই, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩৩৮ কোটি টাকা আত্মসাত কিংবা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা করে আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে ইভ্যালির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাওয়া আর্থিক অনিয়মগুলো তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) পৃথক চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১৪ কোটি টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া ও মার্চেন্টদের ১৯০ কোটি টাকা পাওনা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে নির্দেশ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ইতঃপূর্বে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে গত ২২ জুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে ইভ্যালিকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ব্র্যাক ব্যাংকসহ বেশ কিছু ব্যাংক আলোচিত ১০টি ই-কমার্স কোম্পানির সঙ্গে তাদের ইস্যুকৃত ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডে লেনদেন স্থগিত করে।
গত ১৭ জুলাই মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা বিকাশ-ও গ্রাহক স্বার্থরক্ষার কারণ উল্লেখ করে, ইভ্যালিসহ এ ১০ অনলাইন মার্চেন্টের সঙ্গে লেনদেন পরিষেবা বন্ধ ঘোষণা করে।
সম্প্রতি ঢাকার একটি আদালত ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী এবং কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আদেশ জারি করেন। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগে তদন্ত চলমান থাকায় এ আদেশ দেন আদালত।
Posted ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta