কক্সবাংলা ডটকম(২৬ অক্টোবর) :: ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে দেড় বছর ও তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাদক সেবনের দায়ে এক বছর ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাসের দণ্ড দেওয়া হয় ইরফানকে। দেহরক্ষীকে অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সোমবার দুপুর থেকে পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের দেবীদাস লেনে হাজী সেলিমের বাড়ি ‘চান সরদার দাদা বাড়িতে’ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই বাসা থেকে অস্ত্র, ৩৮টি ওয়াকিটকি, বিদেশি মদসহ অবৈধ জিনিসপত্র জব্দ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ইরফান ও তার দেহরক্ষীর বাসা থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার হওয়ায় দুটি পৃথক মামলা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
রোববার রাতে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে ইরফান ও তার সহযোগীদের হাতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খান মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় হাজী সেলিমের ছেলেসহ চারজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত দু-তিনজনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা। মামলা হওয়ার পর র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে সোমবার দুপুর থেকে হাজী সেলিমের বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালায় র্যাব।
বাবার বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন ইরফান। তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ইরফানের শ্বশুর নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী। দিনভর ওই বাড়িতে অভিযানের সময়ে সাংসদ হাজী সেলিম বা তার স্ত্রীর দেখা মেলেনি সেখানে। র্যাবও তাকে বা তার স্ত্রীকে বাড়িতে পায়নি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, হাজী সেলিমের বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, একটি এয়ারগান, ৩৭টি ওয়াকিটকি, ১০ ক্যান বিয়ার, একটি হাতকড়া, একটি ড্রোন, ৪০৬ পিস ইয়াবা ও বিদেশি মদ পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হবে। হাজী সেলিমের বাড়ির পাশে চকবাজারে তার ছেলের আরও একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, সাদা রঙের নয়তলা ভবনে দুটি ফ্লোরে ইরফান সেলিম থাকতেন। মোট তিনটি অস্ত্র জব্দ করা হয়। তার মধ্যে একটি একনলা বন্দুকের লাইসেন্স দেখাতে পেরেছেন তারা। অন্য দুটি পিস্তলের লাইসেন্স নেই। আর ওয়াকিটকিগুলোও অবৈধ। কালো রঙের এসব ওয়াকিটকি শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই ব্যবহার করে থাকেন। এসব অস্ত্র ও হ্যান্ডকাফের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ইরফান সেলিম। এগুলো প্রদর্শন করে ইরফান সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সমাজের যে শ্রেণির মানুষই অপরাধ করুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সে জনপ্রতিনিধি বা যে-ই হোক।
নিষিদ্ধ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে নিয়ন্ত্রণ করতেন পুরান ঢাকা
নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিমের ছেলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়েছে র্যাব।
অভিযানে সরকার নিষিদ্ধ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, বিদেশি মদ, অস্ত্র, চাইনিজ কুড়াল প্রভৃতি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যাব। আজ বিকালে অভিযানের এক পর্যায়ে হাজী সেলিমের চাঁন সরদার দাদার বাড়ির ভিতরে সাংবাদিকদের নিয়ে গেলে উদ্ধার এসব অস্ত্র-মাদক ও নিষিদ্ধ নেটওয়ার্কিং সিস্টেম দেখা যায়।
ইরফান ও তার দেহরক্ষী এখনো বাড়ির ভিতরে র্যাব হেফাজতেই আছেন। অভিযান এখনো চলছে।র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাজী সেলিমের ছেলে পুরান ঢাকা তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য সম্পূর্ণ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মধ্যে রেখেছেন। এজন্য তিনি অবৈধভাবে ভিপিএস ডিভাইস ব্যবহার করতেন। এই ডিভাইস আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ট্র্যাক করতে পারেন না। সরকারি অনুমোদ ছাড়াই তিনি এই ভিপিএস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম করেছিলেন।
এসব ডিভাইসের মাধ্যমে তিনি ঘরে বসেই পুরো পুরান ঢাকার তথ্য সংগ্রহ করতে পারতেন।
দাদা বাড়ি ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় অভিযান চালিয়ে এসব ওয়্যারলেস সিস্টেম সরঞ্জাম ও ৩৮টি কালো ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। যা সরকারি কর্মকর্তারা ছাড়া ব্যবহারের অনুমতি নেই। এছাড়া সেখান থেকে লোডেট একটি বিদেশি পিস্তল (আমেরিকান), একটি চাইনিজ কুড়াল, ৭ বোতল বিদেশি মদ ও বেশ কিছু বিয়ার জব্দ করে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই তিনি তার বাসায় এই ভিপিএস ডিভাইসের মাধ্যমে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কিং সিস্টেম করেছিলেন।
সাধারণত এগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া কাউকে সরকার অনুমোদন দেয় না। এছাড়াও এসব ওয়্যারলেস কখনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ট্র্যাক করতেও পারেন না।