কক্সবাংলা ডটকম(১১ সেপ্টেম্বর) ::দশম জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণের কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। জনগন এ অঙ্গীকারে সায় দেয়। নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসীন হয় শেখ হাসিনার সরকার। অঙ্গীকার মোতাবেক ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়। বিচারে মীমাংসীত পাকিস্তানপন্থি জামায়াতে ইসলামী দলের শীর্ষপর্যায়ের সব নেতা দণ্ডিত হয়েছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ১৯৪৮ সালে কার্যকলাপ শুরু করবার পর থেকে কখনও এ রকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়নি তাদের। যুদ্ধপরাধের দায়ে দলের আমীরসহ শীর্ষ নেতৃত্বের ফাঁসি হয়ে যাবার পর দলটি শুধু যে নেতৃত্বের সঙ্কটে পড়েছে তা নয়, যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতৃত্ব দলকে ধরে রাখবার চেষ্টা করছেন তাদেরকে হয় জেল, নয়তো আত্মগোপনের জীবন যাপন করতে হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে।
এ ছাড়া নিজস্ব প্রতীকেসহ দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করবার অধিকার হারাবার পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নিষিদ্ধ করা হবে কি না, এখন এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে দলটিকে। সার্বিকভাবে আগামী দিনগুলিতে জামায়াত পরিচয়ে বৈধভাবে আর রাজনীতি করা যাবে কি না, এ প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে।
তারপরও জামাত এখনো নিঃশ্বেষ যায়নি। লাহোর কেন্দ্রিক এ দলটি এখনো নানা রকম দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। দুই দিন আগেও রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জামাতের সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষপর্যায়ের নয় নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তবে জামাতের এ ভাতঘুমের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন নতুন ইসলামপন্থী দলের উত্থান ঘটেছে। হেফাজতে ইসলাম এদের মধ্যে একটি। ২০১৪ সালের ৫ মে এক তাণ্ডবের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে এদের এক নরকীয় অভ্যুদয় ঘটে। বর্তমানে দলটি একটি বড় শক্তি হিসেবে দাড়িয়েছে।
যদিও নিজেদের সব সময় একটি ‘অরাজনৈতিক` সামাজিক ইসলামী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে হেফাজতে ইসলাম । তবে দুই-একজন বাদে সংগঠনটির প্রায় সব নেতাই কোনো না কোনো ইসলামী দলের সঙ্গে যুক্ত। জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়া আর সব ইসলামী রাজনৈতিক দলেই হেফাজতের লোকেরা আছেন।
এ ছাড়া বর্তমানে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট নামে অসংখ্য দল গঠিত হয়েছে ও রাজনীতি করছে।
যদিও সাধারণ মানুষ আশা করেছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ইসলামী দলগুলো সংকুচিত হবে। তবে দলগুলো সংকুচিত হয়নি। বরং নতুন বোতলে পুরাতন মদের মতো ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে নতুন নতুন রূপে সংগঠিত হচ্ছে।
এ দিকে দেশে প্রগতিশীলতারও আকাল চলছে। ৫০ ও ৬০ এর দশকে নেতৃত্ব দেয়া বাম দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বরং এদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়েছে ইসলামিক দলগুলো। এর পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে নতুন করে নির্যাস পেতে শুরু করেছে তারা।
সরকারের কাছেও এখন পর্যন্ত কারা কারা আফগানিস্তান থেকে ফেরত এসেছিল বা এসেছেন, কত জন গিয়েছে, তাদের সঠিক তালিকা নেই। কারণ সে সময় সরকারি মদতেই পাকিস্তান, সৌদি আরব ও মার্কিন গোয়েন্দাদের তৈরি আফগান মুজাহিদীনে যোগ দিতে গিয়েছিল। শুধু আফগানিস্তান নয়, কসোভো যুদ্ধ এবং সিরিয়ায় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের যুদ্ধেও অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের অনেক যুবক। যদিও সবাই দেশ থেকে যায়নি, প্রবাস থেকেও অনেকে যোগ দিয়েছেন। সিরিয়া থেকে ফিরে ঢাকায় বিমান বন্দরে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে গ্রেফতারও হয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে তালেবানের বিজয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে একশ্রেণীর বাংলাদেশি তালেবান। তাদের মতের সঙ্গে কারও মত না মিললে গালি দেয়। আস্তিককে নাস্তিক বলা এদের মজ্জাগত স্বভাব। ভিন্ন ধর্মালম্বী সম্পর্কে এরা অসহিষ্ণু। মাথার মধ্যে সারাক্ষণ জেহাদ। ফলে তালেবানের উত্থানে ইসলামী দলগুলো নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
Posted ২:৪১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta