মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া(৪ জুন) :: ২৯ মে সোমবার মধ্যরাতে উখিয়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে বিধ্বস্ত ঘর বাড়ি নিয়ে অসহনীয় দূর্ভোগে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে এখনো পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। ৭ দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ মেট্রিক টন ত্রাণ সরবরাহ দেওয়া হলেও ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা অনুপাতে উক্ত ত্রাণ সামগ্রী অত্যন্ত অপ্রতুল বলে দাবী করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
উপজেলা সদর রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, তার এলাকায় দেড় হাজার ঘর বাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। মসজিদ-মন্দির, মক্তব, এবতেদায়ী মাদ্রাসার টিনের ছাউনি উপড়ে গেছে। শত শত অর্থকরী পানের বরজ, আম বাগানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। টাকার অভাবে ও শ্রমিক সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো বাড়ি ঘর মেরামত করতে পারছে না। অনেকেই আর্থিক সমস্যায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি ঘর সংস্কার করতে না পারায় তাদেরকে ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাব অনটনে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদে ক্ষতিগ্রস্থের তালিকা প্রদান করা হলেও এখনও পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া যায়নি।
রতœাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী জানান, তার এলাকায় ১৫০টি বসত বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৭ শতাধিক বসত বাড়ি। ৬ শতাধিক পানের বরজ ও অসংখ্য ফলজ, বনজ গাছ নষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় উপজেলা পরিষদ থেকে ৬০ জন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাও আবার পরিবার পিছু ১০ কেজি করে।
সম্প্রতি সাগর উপকূলীয় জনপদ জালিয়াপালং ইউনিয়নের সাগরঘেষা গ্রাম ইনানী, নিদানিয়া, বাইলাখালী, মাদারবনিয়া, ছেপটখালী ও মনখালী এলাকা ঘুরে জানা যায়, এ ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ পরিবার পান সুপারি উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। ৯নং ওয়ার্ডের ইউ,পি, সদস্য মোহাম্মদ মুসা জানান, প্রায় হাজারের অধিক পানের বরজ ও ৫ হাজারের মত সুপারি গাছ ধ্বংস করে ঘুর্ণিঝড় মোরা।
এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, তার এলাকায় ২ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ১২ শতাধিক বসত বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো পলিথিনের ছাউনী ও জোড়াতালি দিয়ে ঘর মেরামত করতে সক্ষম হলেও বিধ্বস্ত পরিবারগুলোর অনেকেই খোলা আকাশের নিচে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছে।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, তার এলাকায় ১৭০টি বসত বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ৩ হাজার কাঁচা ঘর বাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এখানে শ্রমিক সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো বাড়ি ঘর মেরামত করতে পারছে না। আবার অনেকেই আর্থিক সমস্যায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি ঘর সংস্কার করতে না পারায় তাদেরকে ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাব অনটনে দিনযাপন করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদে ক্ষতিগ্রস্থের তালিকা প্রদান করা হলেও এখনও পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া যায়নি। ঘূর্ণিঝড় মোরায় এ উপজেলায় আঘাত হানার পর থেকেই বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো সচল হয়ে না উঠার কারণে ৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগীদের অবর্ণনীয় দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় বহুমুখী সমস্যা কাটিয়ে উঠতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের নানা দূর্ভোগের শিকার হতে হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহসান উল¬াহ জানান, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা করে ইউনিয়ন ভিত্তিক ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, বর্তমানে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী কক্সবাজারে অবস্থান করছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ উখিয়ায় পরিদর্শন করতে পারে যে কোন সময়।
এ সময় এলাকার জন্য তিনি ইচ্ছে করলে ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দিতে পারেন। তিনি বলেন, যে সমস্ত পরিবার পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে তাদেরকে উপজেলা প্রশাসন থেকে আর্থিক অনুদান ও সাহায্য সহযোগীতা প্রদানের ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।
Posted ৯:৫২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta