বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

উত্তাল সাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্ধারে বেঁচে ফিরল মহেশখালীর ৩৩ জেলে

শুক্রবার, ০২ জুন ২০১৭
3760 ভিউ
উত্তাল সাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্ধারে বেঁচে ফিরল মহেশখালীর ৩৩ জেলে

কক্সবাংলা ডটকম(১ জুন) :: কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সমুদ্র থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর উদ্ধার করা ৩৩ জেলের একজন মোহাম্মদ উল্লাহ (৩৫)।

গভীর সমুদ্রে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করতে করতে চোখের সামনেই কয়েকজন সহকর্মীকে ডুবে যেতে দেখেছেন মোহাম্মদ উল্লাহ। বাঁচার আশা যখন প্রায়ই ছেড়ে দিয়েছেন, তখন সময় মতো হাজির ভারতীয় জাহাজ ‘আইএনএস সুমিত্রা’।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় জাহাজটিতে করে চট্টগ্রাম বন্দরে নেমে জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দে আবেগে আপ্লুত মোহাম্মদ উল্লাহ  সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় মোরার তাণ্ডবের কাহিনী বর্ণনা করেন।

দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসা শুরু করলে সোমবার মাছ ধরা নৌকাসহ সব ধরনের জলযানের জন্য আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেয়, যা ওইদিন সন্ধ্যায়ই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতে রূপান্তরিত করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত আনে মোরা।

সাগরে সোমবার রাতের ঝড় ও মঙ্গলবারসহ মোট দেড় দিন পেরিয়ে বুধবার সকালে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে উদ্ধার হন ৩৪ জন বাংলাদেশি জেলে।

মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, “সোমবার বিকাল থেকে রেডিওতে শুনি ঘূর্ণিঝড়ের কথা। ৭ নম্বর সিগন্যাল দেখে ফেরার প্রস্তুতি নিই। কিন’ জাল গুটাতে সময় লাগে। জাল গুটিয়ে যখন রওনা দেব, তখন রেডিওতে শুনি ১০ নম্বর সিগন্যাল।”

রওনা দিলেও প্রচণ্ড ঢেউয়ে ট্রলার মহেশখালীমুখী করা যাচ্ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রচণ্ড ঝড়ে আমরা একসময় দিক হারিয়ে ফেলি। আমাদের আশেপাশে পাঁচটি ট্রলার ছিল। প্রতিটিতে জেলে ছিল ২৫ জন করে। সবাই তখন দিকহারা।”
এ অবস’ার মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে এলে সবার মধ্যে জীবনহানির শঙ্কা পেয়ে বসে জানান মোহাম্মদ।
“নিজের ২৫ বছরের জেলে

জীবনে ঘূর্ণিঝড়ের এমন তাণ্ডব দেখিনি। রাত গভীর হয়ে আসলে বাড়তে থাকে ঝড়ের তাণ্ডব। বিশাল বিশাল ঢেউয়ের তোড়ে আমাদের ট্রলারসহ ভেসে যায় আশপাশে থাকা ট্রলারগুলো। কোনোমতে একটা পানির কনটেইনার শক্ত করে চেপে ধরে ভাসতে থাকি ঢেউয়ের মধ্যে।”

ভোরের দিকে প্রচণ্ড তুফানের মধ্যে নিজের চোখের সামনেই কয়েকজন সহকর্মীকে পানিতে ডুবে যেতে দেখেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ট্রলারে মোট ২৫ জন ছিল। তার মধ্যে আটজন সমুদ্রে ডুবে গেছে ভোরের দিকে।

“দেড় দিন ধরে প্রচণ্ড ক্ষুধা, পিপাসা আর ঢেউয়ের তোড়ে কয়েকজনকে দেখেছি ডুবে যেতে। বাঁচার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। এসময় হঠাৎ দৃষ্টিসীমার মধ্যে দেখি একটি জাহাজ। গায়ের গেঞ্জিটা কোনোমতে হাতে নিয়ে শুন্যে নাড়িয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি।”

১০ মিনিটের মধ্যে আইএনএস সুমিত্রা জেলেদের কাছে চলে আসে জানিয়ে দুই সন্তানের জনক মোহাম্মদ বলেন, “যদি জাহাজটি আধা ঘণ্টাও দেরি করত তাহলে আমাদের কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যেত না।”

খায়রুলের সঙ্গে একই ট্রলারে ছিলেন মোহাম্মদ শফি। অন্তত ৩০ বছর ধরে সাগরে যাচ্ছেন মাছ ধরতে। জীবন-মৃত্যুর এমন মুখোমুখি কখনো হননি তিনি। তিনি বলেন, কিভাবে যে বেঁচে ছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। টানা দুইদিন একরাত কিছু না খেয়ে যে বেঁচে আছি সেটাই বড় বিস্ময়। আবদুশ শুক্কুর নামে আরেকজন জেলে বলেন, গভীর সমুদ্রে একটি বিশাল গাছ ভাসতে দেখি। তখন আমরা অন্তত ১৫ জন ওই গাছকে আকড়ে ধরি। ওই গাছ ধরে দুইদিন এক রাত ভেসে ছিলাম। পরে ভারতীয় জাহাজের নাবিকরা আমাদের উদ্ধার করে।

উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে সবাই কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার বাসিন্দা। ত্রাণ নিয়ে আসার পথে মহেশখালী থেকে ১০০ নটিক্যাল মাইলে দূরের গভীর সমুদ্রে ভারতীয় জাহাজ ‘আইএনএস সুমিত্রা’ ৩৪ জনকে উদ্ধার করে।

ইন্ডিয়ান নেভি শিপ আইএনএস সুমিত্রা’র কমান্ডিং অফিসার এসপি শ্রিশান ৩৪ জেলেকে উদ্ধারের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, উত্তাল সাগরে আমরা তখন চট্টগ্রাম থেকে ৯০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে। লক্ষ্য করে দেখি একটি গাছের গুড়ি ভাসছে। গাছের ভেতর থেকে দুটি হাত সাহায্য চাইছে। তখন সমুদ্র ভয়ানক রকম উত্তাল ছিল।

এ কারণে আমরা কোনোভাবে বোট নামাতে পারছিলাম না। পরে আমাদের মেরিন কমান্ডো ও ডুবুরিদের সহায়তায় ভাসমান মানুষগুলোর জন্য লাইফবয়া পৌঁছিয়ে দিই। এভাবে আমরা তাদের উদ্ধার করি। এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল।

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ৩৪ জনকে উদ্ধার করতে আমাদের ছয় ঘণ্টা লেগেছে। উদ্ধারকৃতদের সাথে কথা বলে আমরা নিশ্চিত, সাগরের ওই অংশে আর কেউ ভাসমান নেই। তাদের মধ্যে মুমূর্ষু একজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন কমান্ডার শ্রীমান। উদ্ধারের পর তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং খাবার দেওয়া হয়। উদ্ধার হওয়া এসব জেলে ঘন্টার পর ঘন্টা পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

উল্লেখ্য,ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে ডুবে যাওয়া মাছধরার ট্রলার থেকে উদ্ধার করা ৩৩ বাংলাদেশী জেলেদের চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দিয়েছে ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বৃহস্পতিবার (১ জুন) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ৫ নম্বর জেটিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শেষে এই ৩৩ জেলেকে তুলে দেওয়া হয় জেলা প্রশাসকের হাতে। উল্লেখ্য উদ্ধার করা ৩৪ জন জেলের মধ্যে একজন মারা যান। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে সবাই কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার বাসিন্দা।
3760 ভিউ

Posted ২:১৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ জুন ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com