এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :: বৈশি^ক মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে চলতিবছরের মার্চ থেকে দেশের অন্যসব পর্যটন জোনের সঙ্গে বন্ধ ঘোষনা করা হয় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারাস্থ দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক। তবে আশার কথা হলো মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর পহেলা নভেম্বর রোববার থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে প্রাকৃতিক সোর্ন্দয্যে ভরপুর ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।
ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটি উন্মুক্ত করতে নতুন করে সাজিয়ে-গুছিয়ে তোলা হয়েছে পার্কের প্রতিটি পর্যটন স্পটকে।
করোনাকালের সাতমাস ধরে পর্যটক-দর্শনার্থীদের আগমন নেই, সেকারণে পার্কের অভ্যন্তরে কোলাহল না থাকায় বিভিন্ন বন্যপ্রাণির বেষ্টনী, সড়কের দুই পাশসহ বিভিন্ন স্থাপনায় উচ্চতায় বেড়ে উঠেছিল ঝোপঝাড়। নতুন করে পার্ক খোলার পরিপত্র জারির খবরে পরিস্কার পরিচ্ছনতার মাধ্যমে সেই পার্ককে নতুন চেহারায় রূপ দিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। যাতে আগের মতোই দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থী মনের আনন্দে পার্ক ভ্রমণ করতে পারে।
এদিকে দীর্ঘ সাতমাসের বেশি সময় পর্যন্ত পার্কের অভ্যন্তরে সকল ধরণের পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন বন্ধ থাকলেও সাফারি পার্কের ইতিহাসে বিভিন্ন বন্যপ্রাণি ও পশু-পাখির প্রজননে বিরাট সফলতা এসেছে। একনাগাড়ে পার্ক বন্ধ থাকায় জনমানবহীন পার্কে সঙ্গনিরোধকালে অসংখ্য বন্যপ্রাণির প্রজননে এই সফলতা হাতছানি দেয়। বিরল প্রজাতির প্রাণির ঘরেও এসেছে নতুন অতিথি। নতুন জন্ম নেওয়া এসব প্রাণী পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভ্রমণে আনন্দের নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে জানিয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কের অভ্যন্তরে তথা বিভিন্ন বন্যপ্রাণির বেষ্টনীর কাছে মানুষের বিচরণ না থাকায় পার্কে থাকা বিভিন্ন বন্যপ্রাণি ও পশু-পাখির ঘর আলোকিত করে এসেছে নতুন অতিথি। তন্মধ্যে বাচ্চা প্রসব করেছে হাতি, বিরল প্রজাতির আফ্রিকান ওয়াইল্ডবিস্ট, জলহস্তি, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ, মায়া হরিণ, বানর, বিলুপ্ত প্রায় কালিম পাখি, সাধারণ প্রজাতির ময়ূরসহ বিভিন্ন পশু-পাখি। শুধুমাত্র হরেক রকমের পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণির চিৎকার-চেঁচামেচিতেই মুখর হয়ে রয়েছে পার্কটি।
সাফারি পার্কের কর্মচারী খন্দকার আহসান উল্লাহ বলেন, ‘পার্কের চিত্রাহরিণের বেষ্টনীও আমাকে দেখভাল করতে হয়। পহেলা নভেম্বর থেকে পর্যটক-দর্শনার্থীদের জন্য পার্ক খুলে দেওয়া হবে। তাই চিত্রাহরিণের বেষ্টনীর ভেতর এবং আশপাশের সড়কে কয়েকফুট উচ্চতার গজিয়ে উঠা ঝোপঝাড় কেটে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে তোলা হয়েছে।’
সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (বিট কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘একনাগাড়ে সাত মাস ১৩ দিন এই পার্ক বন্ধ রয়েছে করোনা সংক্রমণ রোধে। পহেলা নভেম্বর থেকে পুরোদমে পার্কের অভ্যন্তরে পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমনকে কেন্দ্র করে সবকিছু পরিপাটি করে তোলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, পার্কে ৫২ প্রজাতির আবদ্ধ এবং উন্মুক্ত পরিবেশের ১২৩ প্রজাতির বন্যপ্রাণি ও পশুপাখি রয়েছে। এরা তৃণভোজী, সরীসৃপ, মাংসাসী ও হরেকপ্রজাতির বন্যপ্রাণি ও পশুপাখি। তন্মধ্যে দীর্ঘসময় পার্ক বন্ধ থাকায় ১৩ প্রজাতির বন্যপ্রাণি ও পশুপাখির ঘরে নতুন করে প্রজনন হয়েছে।’ এতে জন্ম নিয়েছে শতাধিক পশু-পাখী।
জানতে চাইলে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাছের মো. ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, বৈশি^ক মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে চলতিবছরের মার্চ থেকে দেশের অন্যসব পর্যটন জোনের সঙ্গে বন্ধ ঘোষনা করা হয় ডুলাহাজারাস্থ দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক।
তিনি বলেন, দীর্ঘসময় পার্ক বন্ধ থাকায় কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বন্যপ্রাণি ও পশুপাখির ঘরে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য নতুন অতিথি। এখন পার্ক উন্মুর্থ করা হচ্ছে। আশাকরি জন্ম নেয়া নতুন প্রাণীগুলো আগত পর্যটক-দর্শনার্থীদের কাছে আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
Posted ১:০০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০১ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta