কক্সবাংলা ডটকম(২৯ নভেম্বর) :: দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া গিয়েছে করোনার এক নতুন প্রজাতি ‘বি.১.১.৫২৯’ , যা নিয়ে চিন্তা বৃদ্ধি হয়েছে বিশ্বে। এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসের ডেল্টা প্রজাতি ও তার ভ্যারিয়েন্টের দাপটেই বিপর্যস্ত হয়েছে একাধিক দেশ। সংক্রমণ থেকে প্রাণহানি– ডেল্টার দাপটে বিশ্ব জুড়ে ঘটেছিল বিপর্যয়। একাধিক করোনা-প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দিয়ে তার সঙ্গে লড়াই চলছে। এরই মাঝে এই নতুন প্রজাতি দেখা দেওয়ায় নতুন আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে৷
WHO বলছে, কোভিড-১৯-এর ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের প্রাথমিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে এই প্রজাতি পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অর্থাৎ, যাদের আগে কোভিড-১৯ ছিল তাদের দেহে সহজে পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে ওমিক্রন। কিন্তু এ সংক্রান্ত তথ্য সীমিত। হু আরও বলেছে যে ভ্যাকসিন এই মারাত্মক রোগসংক্রমন এবং মৃত্যু কমাতে সবসময় কার্যকরী নয়।ডেল্টা সংক্রমণও অনেকক্ষেত্রে আকটাতে অক্ষম ভ্যাকসিন।
ইত্যবসরে আসরে আদ্যন্ত এক নয়া রূপ ‘ওমিক্রন’। ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের চরিত্রে একাধিক বার বদল ঘটে এই রূপের জন্ম। তাই চরিত্রে তা বাকি প্রজাতির থেকে আলাদা। এতটাই আলাদা যে, ভ্যাকসিনও এর কাছে অসহায়। মানে, যাঁরা দু’দু’টি ভ্যাকসিন নিয়ে হাতে (থুড়ি মোবাইলে) প্রমাণপত্র নিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁরাও আর মোটেই নিরাপদ নন। দক্ষিণ আফ্রিকায় যে ক’জনের দেহে এই প্রজাতির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে তাঁদের সকলেই কিন্তু টিকাপ্রাপ্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার NGS-SA-এর সদস্য সরকারি পরীক্ষাগার এবং বেসরকারি পরীক্ষাগারগুলিকে অবিলম্বে জিনোম সিকোয়েন্সিং করার পরামর্শ দিয়েছে। যাতে জানা যায় এই ভেরিয়েন্টটি কতটা ছোঁয়াচে, কতটা বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর। এই প্রজাতির হাই মিউটেশন রয়েছে বলে জানা গেছে এবং তা দেশের জন্য গুরুতর জনস্বাস্থ্যের প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে এরই মধ্যে ওমিক্রন ঠেকাতে সভা-সমাবেশ সীমিতসহ সরকারের কাছে চারটি সুপারিশ করেছে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।নতুন এই ধরনের বিস্তার ঠেকাতে কয়েকটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং, জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা এবং পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁয় ভিড় এড়ানোসহ ১৫ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার (২৮ নভেম্বর) রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৫ নির্দেশনা-
১. দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সময় সময় ঘোষিত অন্যান্য আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বন্দরসমূহে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।
২. সব ধরনের (সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।
৩. প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে।
৫. সব জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল, থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে।
৬. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. আক্রান্ত দেশসমূহ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবা গ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
১২. করোনা উপসর্গ লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. কোডিড-১৯ এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সহায়তা করা যেতে পারে।
১৪. অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালে বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. কোডিড-১৯ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করার নিমিত্তে কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং ও প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকাতে সদ্য আবিষ্কার হওয়া সার্স-কোভ-২ (করোনাভাইরাসের)-এর একটি ভ্যারিয়েন্ট বা প্রজাতি ‘ওমিক্রন’। করোনাভাইরাসের নতুন রূপ পাওয়া যাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
মাইক্রোবায়োলজির নমেনক্লেচারে যে এমন নাম দিতে হতে পারে, তা ভাবা যায়নি। কিন্তু কতটা ক্ষতিকারক করোনার এই নয়া চরিত্র? কীভাবেই বা বুঝবেন ওমিক্রন সংক্রমণ ঘটেছে আপনার শরীরে।
Delta Varient-এর থেকেও ভয়ঙ্কর Omicron variant। আরও বেশি সংক্রামক এবং আরও দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়তে চলেছে করোনার এই নয়া প্রজাতি, আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসক Dr. Angelique Coetzee-এর দাবি, Omicron-এর উপসর্গ খুবই মৃদু। এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার এক চিকিৎসক নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের লক্ষণগুলি কী কী তা প্রকাশ্যে এনেছেন।
চিকিৎসকদের মতে ওমিক্রনের কিছু লক্ষণ রয়েছে যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। যদিও আক্রান্তদের মধ্যে ওমিক্রনের লক্ষণ হালকা এবং কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
Posted ১:১০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৯ নভেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta