কক্সবাংলা ডটকম(১১ জানুয়ারি) :: যড়যন্ত্র আর নাটকীয়তায় ভরপুর ‘ওয়ান ইলেভেন’ যারা প্রতক্ষ করেছেন তারা জানেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে তার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে যে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের বীজ বুনেছিলো তারই ফসল হলো ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তথা ‘ওয়ান ইলেভেন’। সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস করার ঐ ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সৃষ্টি হয় এক কালো অধ্যায়।
সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিচারপতি কে এম হাসান এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে কার্যত একটি পুতুল সরকার গঠনের উদ্দেশ্যেই বিএনপির সেই ষড়যন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তি জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নিজেদের জাল বিস্তার করতে থাকে দলটি, তৈরী করে নীলনকশা। দেড় কোটি ভুয়া ভোটারের তালিকা প্রণয়ন এবং একটি বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন গঠণ করা ছিল যড়যন্ত্রের মূল অংশ যার নেপথ্যে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করে বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলাম।
অন্যদিকে ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়ে নিজেদের জোটের শরিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিএনপির পুতুল সরকার হিসেবে গঠিত সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে আওয়ামী লীগ। ফলে সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক এক সংকটে আপতিত হয় গোটা দেশ। রীতিমত ধ্বংসাত্বক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে, দেখা দেয় অনিশ্চয়তা।
একদিকে ২২ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সরে দাড়ায় আওয়ামী লীগ অন্যদিকে ড. ইয়াজ উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে কোন মূল্যে সেই নির্বাচন বাস্তবায়নে নিজেদের শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করে। সার্বিকভাবে অস্থিতিশীল সেই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে রাষ্ট্রযন্ত্রের সম্মুখ সারিতে এসে নিজেদের সশস্ত্র অবস্থান জানান দেয় সেনাবহিনী। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদের প্ররোচনায় ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় আরেকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
যদিও ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল সমঝোতার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার কিন্তু বাস্তুবে ঘটে একদমই তার ভিন্ন চিত্র। আসল কাজ অর্থাৎ নির্বাচনকে বাদ দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে দেশের রাজনীতিতে ‘মাইনাস টু’ ফর্মূলায় গণতন্ত্রের টুটি চেঁপে ধরে ঐ সরকার।
প্রচলিত রাজনীতিতে সংষ্কারপন্থা চালু করে গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ার পারসন খালেদা জিয়াসহ উভয় দলেরই অসংখ্য নেতাকর্মীদের। দেশের প্রধান দুই দলের দুই নেত্রীকে এভাবে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার এই দুরভীসন্ধিকে ইতিহাস ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা হিসেবে গন্য করে।
সেসময় দেশের সরল জনসাধারণ একরকম ঘোরের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করায় বুঝতে পারেনি ঐ সরকারের আসল উদ্দেশ্য। উপরন্তু মিডিয়ার উপর একচ্ছত্র সেন্সর আরোপ করায় জনগণ কিভাবে যেন ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন কে সিনেমার হিরো’র স্থানে দেখতে পায়। অবশ্য কিছু ভাল কাজও হয়েছিল তাদের তদারকিতে যেমন- দেশের সর্বস্তরের জনগণকে জাতিয় পত্রের আওতায় আনার প্রক্রিয়া। তবে বাজার দরের বারোটা বেজে গিয়েছিলো সেই সময়। চালের দাম হয়েছিল আকাশচুম্বি।
তবে সিনেমার সেই হিরোদের জিরোতে পরিণত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম থেকে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সাথে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ। এরপর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সম্পূর্ণ মুখোশ জনসম্মুখে উন্মোচিত হযে যায়। ঘোর কাটে দেশের আপামর সাধারণ জনতার।
Posted ৫:৫৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১১ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta