হেলাল উদ্দিন,টেকনাফ(২২ জুন) :: কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্রসৈকতে বিশাল আকৃতির একটি মৃত তিমি ভেসে এসেছে। সোমবার সকাল নয়টার দিকে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলাপাড়া সমুদ্র সৈকতে এ মৃত তিমিটি ভেসে আসে। তবে প্রাণি বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এটি বিরল প্রজাতির তিমি।এর নাম-ব্রিডস হোয়েল(Bryde’s Whale)।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ভিডিও ও ছবি দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটি তিমি।এই তিমির নাম ব্রিডস হোয়েল (Bryde’s Whale)।এর বৈশিষ্ট পিঠ গাঢ় ধূসর রং,পেট হাল্কা ধুসর রং,মাথার দৈঘ্য মোট দৈঘ্যর চারভাগে এক ভাগ।তবে এটি প্রাপ্ত বয়স্ক তিমি নয়।সাধারণত বয়স্ক একটি তিমি প্রায় ৩০-৪০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে।টেকনাফের এ তিমি টির আনুমানিক ১০ ফুটের মতো লম্বা।ভারত মহাসাগরে ১০ প্রজাতির তিমি রয়েছে।
অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, করোনা সঙ্কট ও টানা ৬৫দিন সাগরে মাছ ধরার উপর নিষিধাজ্ঞার কারণে সাগরে জাহাজ, ট্রলার ও নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে।সৈকতে মানুষ ও পযটকের উপস্থিতি না থাকায় তিমিটি সৈকতের কাছাকাছি চলে আসছে।করোনাকালে আমরা দেখেছি; সবপ্রাণি মানুষের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের মতো বিচরণ করছেন।কিছুদিন আগে এক ঝাঁক ডলফিন এসেছিল সৈকতে।
একটু স্বস্তি পেলে প্রাণিরা যে তাদের মতো বিচরণ করতে পারে, এই তিমির আগমন তারই প্রমাণ।করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে সমুদ্রসৈকতে মানুষের বিচরণ নেই।সাগরে টানা ৬৫দিনের নিষিধাজ্ঞায় জাহাজ ও ট্রলার চলাচল বন্ধের পাশাপাশি মাছধরা বন্ধ আছে।এমন সুযোগে সাগর ধাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণি।
গত কিছুদিন আগেও কক্সবাজারের সৈকত জুড়ে দেখা গেছে, একদল ডলফিনের খেলা।তখন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ভেসে উঠেছিল ১৩টি মৃত ডলফিন।এরআগে গত ১৬ জানুয়ারী সেন্টমার্টিনে কাছাকাছি সমুদ্রে বিশাল আকৃতির একটি মৃত ‘তিমি’ ভাসতে দেখা যায়।ওই তিমির ৪০ ফুট লম্বা।অনেকেই সেটিকে ‘বালেন’ প্রজাতির তিমি বলে ধারণা করেছিলেন।
Posted by Moazzem Riad on Sunday, June 21, 2020
এবার পর্যটক ও মানুষশূন্য টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সৈকতে দেখা গেল বিরল প্রজাতির তিমি।তবে পরেরদিনই ভেসে এল ওই তিমির মৃত দেহ।
উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিমপাড়া সৈকতের প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধের এলাকায় গত শনিবার দেখা যায় বিরল প্রজাতির তিমি।আকারে মাঝারি ধরনের এটি।ব্রিডস হোয়েল প্রজাতির এ তিমি খেলতে খেলতে সমুদ্রসৈকতের প্রতিরক্ষা বাঁধের স্থাপতি ব্লকে এসে আটকাপড়ে। এসময় স্থানীয় লোকজন এটিকে ডলফিন ভেবে লেজের সঙ্গে রশি বেঁধে পুনরায় সাগরে ফিরিয়ে দেন।
কিন্তু সোমবার সকাল নয়টার দিকে শাহপরীর দ্বীপের ঘোলাপাড়া সৈকতে জোয়ারের সঙ্গে আবারো ভেসে আসে ওই তিমিটি।তবে এবার এসেছেন মৃত অবস্থায়। সৈকতে বিশাল একটি মাছ ভেসে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন বয়সের মানুষ এক নজর দেখতে ভিড় করেন।
গত শনিবার সাগর থেকে সমুদ্রসৈকতে উঠে আসে এ তিমি। প্রথমে ধারণা করছিল, ডলফিন বা বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।
ভিডিও দেখে প্রাণি বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এটি ব্রিডস হোয়েল প্রজাতির একটি তিমি।
এ প্রসঙ্গে সেভ দ্য ন্যাচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, টেকনাফের সৈকতে এ তিমি দেখে ডলফিন ভেবে আমাকে ফোন করেন আমাদের সংগঠনের সদস্য জালাল।কিন্তু ধারণ করা ভিডিওতে পাখা এবং পেট দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটি ডলফিন নয়; ব্রিডস হোয়েল তিমি। তার পাখা, লাল পেট ও মাথার পাশ দিয়ে শ্বাস ফেলার ভিডিওটি প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দেখানো হয়।তারা নিশ্চিত করেছেন এটি সামুদ্রিক তিমি।যাকে ব্রিডস হোয়েল বলা হয়।`তিনি আরও বলেন, তবে এটি বাচ্চা তিমি। সাগরের উপকূলে বাচ্চা তিমির উপস্থিতি বলে দিচ্ছে মা তিমি আশেপাশেই রয়েছে।এজন্য সাগরে থাকা সকলকে সতর্ক হওয়া উচিত।
ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারবেশন সোসাইটির একজন সাবেক কমকতা বলেন,এটি তিমি।টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন অংশের তিমি অবস্থানের রেকর্ড আছে। ২০১৮ সালের সার্ভেতে এখানে তিমি পাওয়ার রেকর্ড আছে।সৈকতে জীবিত তিমি আসার রেকর্ড নেই।তবে এবার সৈকতে আসার রেকর্ড হলো।
সাবরাং ইউপির ৭নং ওয়ার্ড সদস্য নুরুল আমিন বলেন,শনিবার বিকেলে জোয়ারের একটি বিরল প্রজাতির তিমি আসা খরব শুনেছিলেন।ওই সময় তিনি এলাকার লোকজনকে আটকে পড়া তিমিকে কোনো ধরনের আঘাত করে পুনরায় পানিতে নামিয়ে দেওয়া অনুরোধ জানান।
তবে সোমবার সকালে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অন্য এলাকায় ওই তিমি মৃত অবস্থায় ভেসে এসেছে।বতমানে সাগরে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ।কিন্তু কিভাবে তিমিটি মারা গেলে তা বলা মুশকিল।তবে তিমির শরীরের কয়েকটি অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা জ্যৈষ্ট মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন,একটি বিরল প্রজাতির তিমির মৃতদেহ ভেসে আসার খবর শুনেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
Posted ৮:৪২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta