কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৬ মে) :: কক্সবাজার জেলাবাসীর যেন পিছুই ছাড়ছে না ভয়ঙ্কর মহামারী করোনা ভাইরাস।চিকিৎসক, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা,উপজেলা চেয়ারম্যান,জনপ্রতিনিধি ,ব্যবসায়ি,শিশু কাউকেই ছাড়ছে না।প্রতিদিন বিপজ্জনকভাবেই বেড়ে চলেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে কক্সবাজারও দ্রুত দ্বিতীয় নারায়নগঞ্জ হয়ে যাবে।
মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জেলায় বেড়ে গেছে ১ রোহিঙ্গা সহ আরও ২৩ করোনা রোগী। শুক্রবার (১৫ মে) বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যাটি ছিলো ১৫২। আর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১৬মে শনিবার সে সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭৫ জনে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, ১৬মে শনিবার জেলায় শনাক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ নতুন ২৩ করোনা রোগী। এর আগের দিন ১৫মে সর্বোচ্চ ২১ জন শনাক্ত হয়েছিল। একদিনের ব্যবধানে বিপুল সংখ্যক করোনা আক্রান্তের খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কক্সবাজারের মানুষ।
শনিবার আক্রন্তদের মধ্যে সদরে ৬ জন, চকরিয়ার ৮ জন, পেকুয়ায় ১ জন এবং ১ জন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ও উখিয়ায় ৭ জন রয়েছে। এনিয়ে জেলায় করোনাা রোগীর সংখ্যা দাড়াল ১৭৫ জনে। আর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এক জনের। এর মধ্যে গত টানা ১২ দিনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ রোহিঙ্গা সহ ১৩৭ জন। আর জেলায় করোনা পরীক্ষা শুরুর মাত্র ৪৬তম দিনে জেলায় পাওয়া গেল চার রোহিঙ্গাসহ ১৭৫ জন করোনা রোগী। সর্বশেষ কক্সবাজারের ৮ উপজেলার সবকটিতেই করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সবেচেয়ে বেশি করোনা পাওয়া গেছে চকরিয় উপজেলায়।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান,শনিবার ১৮৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জন পজিটিভ হয়েছেন।২৩ জনই কক্সবাজার জেলার।এর মধ্যে ১ জন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১ জন লামার। এছাড়া রামুর ১ জন ফলোআপ রোগী রয়েছেন। বাকী ১৫৯ জনের নমুনায় সবারই নেগেটিভ এসেছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছুই নেই। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে। যার কারণে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন থেকেই কক্সবাজারে বাড়ছে করোনা রোগী। তাই প্রতিষেধকহীন এই ভাইরাসকে ঠেকানোর একমাত্র কার্যকর উপায় হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলা।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়,গত ২ এপ্রিল থেকে ১৬মে পর্যন্ত ৩৫০৫ জনের করোনা নেগেটিভ পাওয়া গেছে এবং ১৯০ জনের পজিটিভ পওয়া গেছে। আর জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে ১৭৫ জন।এর মধ্যে মৃত্যূ হয়েছে রামুর ১ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ চকরিয়া উপজেলায় ৬০ জন,সদরে ৪৬ জন,পেকুয়ায় ২২ জন,উখিয়ায় ২২ জন,মহেশখালীতে ১২ জন,টেকনাফে ৭ জন এবং রামুতে ৪ জন,কুতুবদিয়ায় ১ জন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৪ জন রয়েছেন।
আর রামু করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিতসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ১৫মে পর্যন্ত বাড়ি ফিরেছেন মহেশখালীর ৬ জন ও চকরিয়ার ৬ জন,টেকনাফের ১জন,রামুর ১ জন,সদরের ১জন সহ মোট ৩৩ জন। চিকিতসা নিচ্ছেন ১৮ জন রোগী এবং হোম কোয়ারান্টাইনে চিকিতসা নিচ্ছেন ৫৯ জন।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে হঠাত করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলাবাসীর মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলায় গত ৫মে ১১ জন, ৬মে ২ জন,৭মে সর্বো্চ্চ ১৯জন, ৮মে ৪ জন,৯মে ৬জন, ১০মে ১০ জন,১১ মে ১১ জন,১২মে ৯ জন,১৩মে ৯জন,১৪মে ১২জন,১৫ মে ২১জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আজ ১৬মে শনিবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১ জনসহ আরও নতুন সর্বোচ্চ ২৩ জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। আর এনিয়ে জেলায় করোনাা রোগীর সংখ্যা দাড়াল ৪ রোহিঙ্গা সহ ১৭৫ জনে। এর মধ্যে গত ১২ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৭ জন।
এদিকে গত ৫মে থেকে ১৬মে পর্যন্ত টানা মাত্র ১২ দিনে শতাধিক করোনায় আক্রান্তের খবরে চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ। এরই মধ্যে জেলায় চিকিৎসক, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা,উপজেলা চেয়ারম্যান,জনপ্রতিনিধি সহ ১৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরেও বেপরোয়াভাবে চলাচল যনে থামছেই না।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা বলা হলেও, স্থানীয়রা তা সঠিকভাবে মেনে চলছেন না।
তবে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা অনেকটাই অসচেতন। চলাচলে অসতর্কতা এবং সামাজিক দূরত্ব ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি কেউ সঠিকভাবে মেনে চলছেন না। সাধারণ মানুষ হাঁটবাজার, দোকানপাট ও রাস্তাঘাটে অবাধে চলাচল করছেন। এতে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন তারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে রোহিঙ্গা অধ্যূষিত কক্সবাজার একদিন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার মত করোনা রোগী বাড়তে পারে।
Posted ৪:৫০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৬ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta