মো: ফারুক/নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(৩০ এপ্রিল) :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় চাল লোপাটের ঘটনায় উপজেলা জুড়ে কয়েকদিন তোলপাড় হওয়ার পর অবশেষে অদৃশ্য অপরাধিরা শাস্তির আওতায় এসেছে। সরকারের কঠোরতায় অপরাধিরা বহিস্কৃত হওয়ায় উপজেলার সাধারণ মানুষও স্বস্তি ফেলেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সরকারী এক আদেশে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাতকে বদলী করা হয়েছে। পেকুয়ার নতুন ইউএনও হিসেবে যোগদান করবেন নাজমা সিদ্দিকা বেগম।
৩০এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উক্ত প্রজ্ঞাপনে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার নাজমা সিদ্দিকা বেগমকে আগামী ৩মে’র মধ্যে নতুন কর্মস্থল পেকুয়ায় যোগদান করতে বলা হয়েছে। নাজমা সিদ্দিকা বেগম এর আগে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
অপর একটি প্রজ্ঞাপনে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার সাঈকা সাহাদাতকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করার তথ্য জানানো হয়েছে। আগামী ৩ মে’ র মধ্যে তাকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত পেকুয়ায় ১৫ টন চাল রোপাটের ঘটনায় গত কয়েকদিন ধরে লুকোচুরির পর মঙ্গলবার রাতে টইটং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে বরখাস্ত করা হয়। জি’আর খাদ্যশস্য আত্মসাত ও কালোবাজারে বিক্রির দায়ে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের টইটংয়ের সাধারন সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় একটি নিয়মিত মামলা রেকর্ড হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৮ এপ্রিল রাতে মামলা রুজু করেন। ওই মামলায় একমাত্র এজাহারভূক্ত আসামী করা হয় ইউপির চেয়ারম্যানকে।পাশাপাশি সরকারী চাল আত্মসাত ও কালোবাজারে বিক্রির দায়ে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের এক লিখিত পরিপত্র থেকে জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে তার চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ কার্যকর করা হয়।
২৯ এপ্রিল এ সংক্রান্ত একটি লিখিত পরিপত্র স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পরিষদ-১ শাখা প্রেরণ করে। লিখিত প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে সরকারী ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসক কক্সবাজার স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(৪) ধারা অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক কক্সবাজার সুপারিশ করেন।
সূত্রে জানা যায়,২০১৯ সালের ২৯ জুলাই পেকুয়া উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য মানবিক সহায়তার আওতায় ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্ধ দেয় সরকার। ওই বরাদ্ধের ২৫ মেট্রিক টন চাল বিলি করা হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারী আকার ধারন করেছে। করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দু:স্থ পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে টইটংয়ের জন্য অবশিষ্ট ১৫ টন চাল গত ৩১ মার্চ উপবরাদ্ধ দেয়া হয়।
চলতি মাসের ৬ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ওই চাল ছাড়করন করা হয়। তবে উত্তোলিত এ সব চাল জনগনের মাঝে বিলি করা হয়নি। এমনকি উপকারভোগী চুড়ান্তকরন ও এর মাষ্টাররোলও খোঁজে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গত কয়েকদিন আগে থেকে পেকুয়ায় সরকারী চাল গায়েব নিয়ে সর্বত্রে তোলপাড় দেখা দেয়। উদ্ভট পরিস্থিতি এড়াতে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী আত্মগোপন করেন।
১৫ টন বরাদ্ধের সরকারী চাল গেল কোথায় এ সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় পেকুয়ায়। চাল লোপাট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ ও ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ পেয়েছে পেকুয়ায়। চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলামকে অভিয্ক্তু করার পাশাপাশি এ কান্ডে দায়ী করা হয় খোদ পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা শাহাদাতকেও।
পেকুয়ার একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, সরকারী চাল আত্মসাত একক ব্যক্তি হিসাবে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম করতে সক্ষম হননি। তিনি সহ ওই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা শাহাদাতও জড়িত বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রকৃত ক্লু ও রহস্য উম্মোচিত হবে উচ্চ পর্যায় থেকে সাঈকা শাহাদাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে।
কিন্তু স্থানীয় অভিভাবক মহল বলছেন, পেকুয়া থেকে ইউএনও সাঈকা শাহাদাতকে প্রত্যাহারের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় চাল লোপাটের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা ছিল।
Posted ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta