বুধবার ২৭শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ২৭শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
521 ভিউ
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

কক্সবাংলা ডটকম(২৩ ডিসেম্বর) :: ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের পর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। মানবতার জননী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সচক্ষে দেখার জন্য ঘটনার অব্যবহিত পরেই ২০১৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের অবস্থানকে মানবিক এবং সহনীয় করার জন্য কাজ করতে আগ্রহী কয়েক শ বিদেশি সংস্থাকে ক্যাম্পগুলোতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পাঁচ দফা প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবে অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা এবং জাতিগত নিধন নিঃশর্তে বন্ধ করা, দ্রুত মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের নিজস্ব অনুসন্ধানী দল পাঠানো, জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে মিয়ানমারের ভেতরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা, রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজেদের বাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা সংকটকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার হুমকি উল্লেখ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখানো, বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করা এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো বিবেচনায় আনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা নানা ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের জন্য সমালোচনা করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস চলমান রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মিয়ানমারের মানবাধিকার-বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহিলি, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পৃথিবীর বৃহত্ সব দেশকে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বরে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গা ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষমূলক উত্তেজনা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৯৩টি সদস্য-রাষ্ট্রের মধ্যে প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১৩৪টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। আর ২৮টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। ব্রাজিল রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত বলে জানায়। ব্রাজিল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এবং ইউএনএইচসিআরে গৃহীত রেজুলিউশনে সমর্থন দিয়েছে।

বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন জানান যে, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা সারা বিশ্বের সমস্যা এবং এই সমস্যার দ্রুত সমাধান আবশ্যক। লুক্সেমবার্গ, টেকসই এবং শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সব ধরনের সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলে বাংলাদেশ সরকারকে আশ্বস্ত করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুক্সেমবার্গকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ওপর দৃশ্যমান ও আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান, যাতে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং তারা নিরাপদে সেখানে ফিরে যেতে পারে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জন্য আন্তর্জাতিক এবং মানবাধিকার-বিষয়ক আইনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সুইজারল্যান্ড মত পোষণ করেছে। সুইজারল্যান্ড রোহিঙ্গা সমস্যার প্রথম দিকের সহায়তা দানকারী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি রাষ্ট্র, যা এই সমস্যার শুরুতে মানবিক সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। সুইজারল্যান্ড রাখাইন প্রদেশে অ্যাডভাইজার কমিশনের সুপারিশ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ড মানবিক সাহায্য এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবের জন্য ৩০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অর্থনৈতিক সাহায্যের পাশাপাশি সুইস বিশেষজ্ঞরা কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং এনজিওগুলোকেও সহায়তা প্রদান করে আসছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি এনিক বুর্দিন জানিয়েছেন, ফ্রান্স রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসান আল বলখিয়াহ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একটি সঠিক এবং স্থায়ী সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলমান নিপীড়নমূলক আচরণ বন্ধে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর গাম্বিয়ার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) ২৩ জানুয়ারি ২০২০ একটি জরুরি ‘সাময়িক পদক্ষেপ’ ঘোষণা দেয়। ৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মিয়ানমার প্রেসিডেন্ট দপ্তর থেকে গণহত্যা সনদ মেনে চলা এবং রাখাইন রাজ্যে সংগঠিত সব সহিংসতার সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য দুটো আলাদা আদেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মিয়ানমার ২২ মে ২০২০ আইসিজেকে প্রথমবারের মতো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

গত তিন বছরে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নানাভাবে তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মানবিক সহযোগিতা পেয়ে আসছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়া নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোতে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এত কিছুর পরও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এখনো শুরু হয়নি।

২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট—এই দুইবার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর তারিখ ঘোষণা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তথ্য-অনুসারে রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবাসন-সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হওয়ার কারণে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে অস্বীকৃতি জানায়। শরণার্থী ত্রাণ এবং প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) জানায়, তাদের চেষ্টা থাকবে কীভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়। এর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি এবং সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্ব জনমতকে সঙ্গে নিয়ে এই সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির এই আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজ্ঞজনচিত সিদ্ধান্ত এবং দূরদর্শিতার ফলেই সম্ভব হচ্ছে।

লেখক : ব্রি. জে. হাসান মো. শামসুদ্দীন-ডেপুটি কমান্ড্যান্ট, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা

521 ভিউ

Posted ১:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com