তোফায়েল আহমেদ,কালের কন্ঠ(২৯ নভেম্বর) :: কক্সবাজার জেলা শহরের দুটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সহ জেলার ছয়টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ব্যাহত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম। এক বিষয়ের শিক্ষক নিচ্ছেন অন্য বিষয়ের ক্লাস।আর তাই পাঠদান নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।তাই ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমও।
জানা যায়,জেলার স্বনামধন্য দু’টি সরকারি বিদ্যাপিঠ কক্সবাজার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতি বছরই ভালো ফলাফল করে আসছে বিদ্যালয় দুটি। কিন্তু শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় সাফল্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।এ কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিদ্যালয় দুটির সার্বিক কার্যক্রম।
এর মধ্যে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯৭৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন মাত্র চারজন শিক্ষক। বিদ্যালয়টিতে ইংরেজি, গণিত, ভৌতবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের কোনো শিক্ষক নেই। আবার জেলা শহরের একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬০০ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন মাত্র একজন গণিতের শিক্ষক।
শিক্ষকসংকটের এ কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, ২০১২ সালের পর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। তবে সম্প্রতি বেশ কিছু শিক্ষক নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেলার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলোর এমন করুণ অবস্থার বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষক দিয়ে এত বেশি শিক্ষার্থীর পড়ালেখা নিশ্চিত করা যায় না। অচিরেই শিক্ষক সংকটের বিষয়টি সমাধান করা হবে।’
জেলা শহরের একমাত্র সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক পদ রয়েছে ৫২টি। কিন্তু বর্তমানে আছেন মাত্র ২৪ জন শিক্ষক। এর মধ্যে আগামী জানুয়ারি মাসে দুজন যাবেন বিএড প্রশিক্ষণে। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য গণিতের ছয়জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছেন মাত্র তিনজন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রামমোহন সেন জানান, ইংরেজি বিষয়ে আটজন শিক্ষকের স্থলে আছেন মাত্র চারজন। বিদ্যালয়ের সহকারী ও পিয়নের ৯টি পদে রয়েছেন মাত্র দুজন। শিক্ষকসংকটের কারণে সকাল-বিকাল দুই শিফটের লেখাপড়ায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা শহরের একমাত্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরো করুণ।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে এক হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা; কিন্তু আছেন মাত্র ৩০ জন। এই স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক দিয়ে সকাল-বিকাল দুই শিফটের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
তিনি জানান, বিদ্যালয়টির ৬০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য গণিতের শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন।
চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছেন মাত্র চারজন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দীন জানান, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৭৮। এ বিদ্যালয়ে ইংরেজি, গণিত, ভৌতবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান শাখায় কোনো শিক্ষকই নেই।
চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১২ জন শিক্ষকের স্থলে রয়েছেন মাত্র ছয়জন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম আহাদ মো. এনামুল হক জানান, এই বিদ্যালয়ে বাংলার কোনো শিক্ষক নেই। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের জন্য রয়েছেন মাত্র একজন করে শিক্ষক। এই দুজনের মধ্যে আগামী জানুয়ারিতে একজন বিএড প্রশিক্ষণে যাবেন।
কুতুবদিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক পদ রয়েছে ১২টি। অথচ শিক্ষক আছেন সাতজন। গণিত ও বাংলায় রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সজল কান্তি দাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মহেশখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন জানান, ৪০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে সাতজন শিক্ষক থাকলেও দুজন আগামী জানুয়ারিতে বিএড প্রশিক্ষণে যাচ্ছেন।
Posted ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta