বিশেষ প্রতিবেদক :: টানা তিন মাস পর কক্সবাজারে আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগে জেলার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছিল কক্সবাজার পৌরসভা এবং রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দুই উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফ। এর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে মহেশখালী উপজেলা। চলতি মাসের প্রথম ৮ দিনে এ উপজেলায় ৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানা উন্নয়নকাজ চলছে। এর সঙ্গে জড়িত আছেন ১০ হাজারের বেশি দেশি-বিদেশি নাগরিক। সেখান থেকে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। উপজেলায় শনাক্ত হওয়া ভাইরাস নতুন ধরন অমিক্রন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ অবস্থায় রোববার সকালে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গেছেন জেলা সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক। দুপুরে তাঁরা সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে বৈঠক করেন। সেখানে করোনা শনাক্তের হার দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, দেশের বাইরে থেকে আসা লোকজনের নিয়মমাফিক কোয়ারেন্টিন হচ্ছে কি না, এর খোঁজখবরও নিচ্ছেন দলের সদস্যরা।
সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, গত তিন মাস (অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর) কক্সবাজার ঝুঁকিমুক্ত ছিল। মাতারবাড়ির তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। প্রকল্পে দিনরাত কাজ করছেন কয়েক হাজার দেশি-বিদেশি নাগরিক। এখানে কেন করোনা শনাক্তের হার দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে, তা দেখতেই তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন। প্রকল্পে শনাক্ত হওয়া ভাইরাস অমিক্রন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা রোববার ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব সূত্র জানায়, চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম ৮ দিনে পরীক্ষা হয়েছে ৩ হাজার ২৩৮ জনের নমুনা। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯৬ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ল্যাবে ৩৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে । এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ৪০ জনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩৫ জনই মহেশখালীর বাসিন্দা। এর আগের দিন পরীক্ষা হয়েছে ৫৭৫ জনের নমুনা। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ১৬ জনের । তাঁদের মধ্যে কক্সবাজার সদরের ৩, উখিয়ার ২ ও মহেশখালীর ৮ বাসিন্দা রয়েছেন। অবশিষ্ট ৩ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী। ৬ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হওয়া ২৮ জনের মধ্যে মহেশখালীর বাসিন্দা ছিলেন ২৩ জন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপম বড়ুয়া বলেন, মাতারবাড়ি প্রকল্পের কারণে অনেকে বিদেশে আসা-যাওয়া করছেন। প্রকল্পের ভেতরে লোকজনও দেশের বিভিন্ন জেলায় যখন ইচ্ছা যাচ্ছেন-আসছেন। এসব কারণে সংক্রমণ বাড়ছে কি না, অনুসন্ধান চলছে।
ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অমিক্রন বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে যেভাবে পর্যটকের সমাগম ঘটছে, তা সীমিত করা দরকার। সৈকত এলাকায় পর্যটকের গিজগিজ অবস্থা লেগে থাকলে, পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে কক্সবাজার আবার ঝুঁকিতে পড়বে।
Posted ৮:২৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta