আব্দুল আলীম নোবেল(২ জানুয়ারী) :: দেশের সর্ববৃহত প্রকল্প সহ কক্সবাজার জেলায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ৪০ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। আর এইসব প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। দেশের সর্ববৃহত প্রকল্পটিও কক্সবাজারে হচ্ছে। ৪০ প্রকল্পের এর বাহিরেও নানা খাতে উন্নয়নমুলক কাজ হচ্ছে। বিশেষত এই জেলায় সরকারের ব্যাপক উন্নয়নকে সাধুবাদ জনিয়েছে জেলাবাসী।বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দ্বিতীয় মেয়াদেও শেষ করতে পারিনি অনেক প্রকল্প।
এবছরই নির্বাচন চলে আসায় এবং সরকারের হাতে বেশি সময় না থাকায় এসব মেঘা প্রকল্পগুলির কাজ এই মেয়াদে শেষ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনেকই সংশয় প্রকাশ করছে।আর আওয়ামী লীগ সরকার পূণরায় ক্ষমতায় না আসলে বিশাল বাজেটের এই মেঘা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন ধারণা সংশ্লিষ্ঠদের।
কক্সবাজার জেলায় ৪০ মেঘা প্রকল্প সমূহ হল, কক্সবাজার মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলার ১৩ মৌজার ৮৩.৪৫১০ একর জমির আওতায় জিটিসিএল সংস্থার মহেশখালী আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইফ লাইন প্রকল্প । যেটি ২০১৩ সালের দিকে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বর্তমানে দখল হস্থান্তর করা হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণ কার্যক্রম শেষে দিকে বলে জানাগেছে। এছাড়া একই উপজেলায় ১৪৯.৭৫ একর জমি নিয়ে আরেকটি মহেশখালী আনোয়া গ্যাস চঞ্চালন প্রকল্পের কাজ চলছে।
অপর দিকে দেশে সর্ববৃহত প্রকল্প মহেশখালী মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা মৌজার আওতায় ১৪১৪.৬৫ একর জমি নিয়ে কোল পাওয়াও জেরারেশন কোম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। একই উপজেলায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৫৫৭৯.৬০৩৫ একর জমির আওতায় ৮৩২০ মেগাওয়াট এল এন জি ও কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ মৌজার ৫.০০ একর জমিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য জমি অধিগ্রহরণ।
উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। যেটির কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। তবে এখনও জমি অধিগ্রহণের সকল টাকা বুঝিয়ে পায়নি জমি মালিকরা। তবে এই প্রকল্প সমুহ বিভিন্ন দ্বাপে নির্মাণ কাজ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এছাড়া মহেশখালী মাতারবাড়ি মৌজার আওতায় ১১৯৭.৮৮ একর জমি নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ৭০০ মেগাওয়াটে আল্ট্র সুপার ক্রিটিক্যাল কোল র্ফায়ার্ড নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পেকুয়া উপজেলার মনামা মৌজায় ৩৩৩.৭৩ একর জমির নিয়ে হচ্ছে নৌবাহিনী সাব-মেরিন ঘাঁটি নির্মাণ প্রকল্প।
একই উপজেলায় করিয়ারদিয়া মৌজার ১৩৬৮.৮২ একর জমিতে হচ্ছে ইজিসিবির ১২০০ মেগাওয়াটের আরেকটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মির্মাণ প্রকল্প। কক্সবাজার মৌজায় ২৪.৯৫ একর জমির নিয়ে বিমান বন্দ প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে। মহেশখালী ধলঘাটা, কালারমারছড়া মৌজায় ৩২.৪০৩০ একর জমিতে ইনস্টেলেশন মুরিং অব সিঙ্গেল পয়েন্ট ।
একই উপজেলায় ২৪৫.০৮ একর জমিতে আরেকটি ইনস্টেলেশন মুরিং অব সিঙ্গেল পয়েন্ট প্রকল্প। ৬০.৫০ একর জমিতে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং মৌজায় সাবরাং ট্যুারিজম এসইজেট স্থাপন প্রকল্প। উখিয়ারঘাট এলাকায় ২.২০৪০ একর জমিতে হচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক(বালুখালী-ঘুমধুম) প্রকল্প।
কক্সবাজার তোতকখালী মৌজার ০.৪০০০ একর জমিতে হচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর আওতায় কক্সবাজার-২, ৩৩/১১ কেভি, ১০ এমবিএ বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র নির্মান প্রকল্প। কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং এলাকায় ১.৫০ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে কুতুবদিয়া উপজেলা টেকনিক্যাল স্কুল।
কক্সবাজার নোনাছড়িতে ২৯.৮৫ একর জমি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় ক্রীড়া স্কুর নির্মাণ প্রকল্প। তার পাশাপাশি এলাকা পানিরচড়া মৌজায় ২.৫২৯ একর জমিতে জিটিসিএল গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন ফ্যাসিরিটিজ নির্মাণ প্রকল্প।
মাতারবাড়ি মৌজায় ৩.৬৯ একর জমিতে হচ্ছে সিপিজিসিএল কর্তৃক ভুমিহীনদের পূর্ণবাসন প্রকল্প। মহেশখালী ঠাকুরতলা মৌজার ৫.০০ একর জমিতে হচ্ছে কোস্ট গার্ড স্টেশন মহেশখালী স্থাপন প্রকল্প।
উখিয়া ইনানীতে ০.৩২ একর জমিতে হচ্ছে আরেকটি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। টেকনাফ মৌজায় ২ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে টেকনিকেল স্কুল। মহেমখালী ধলঘাটা মৌজায় ৪.৩৭৩০ একর জমিতে মাতারবাড়ি ২এক্স ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার সম্প্রাসরণ প্রকল্প।
এছাড়া দোহাজারী রামু ঘুমদুম সিঙ্গেল লাইন মিটার গেজ ট্রাক নির্মাণ প্রকল্প। ৩ প্রকল্প জমির পরিমাণ(৩৬১.৫৪৭১,২৮৪.৯২৭৩,২১৮.৯৯৭১)। মহেশখালী হেতলিয়ায় ৪১.৭৫০০ একর জমিতে হচ্ছে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল। মাতারবাড়িতে ৭.৬৯৬৫ একর জমিতে আরেকটি ক্রিটিক্যাল কোর ফায়ার্ড পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ প্রকল্প।
টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক প্রশস্থকরণ ও শক্তিশালী করণ প্রকল্প। ১.৫৫০০ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে রামু উপজেলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র । ১৪.৮৫ একর জমিতে মাতারবাড়ি সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। ০.৩৩ একর জমিতে কুতুবদিয়া উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন। ০.০৮২৬ একর জমিতে হচ্ছে উখিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প।
পেকুয়া উপজেলায় ৩.০০ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে এল ও এস টাওয়ার স্থাপন প্রকল্প। ২৩.০২৬৬ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে কক্সবাজার খুরুমকুল বাঁকখালী নদীর উপর কস্তুাঘাট ব্রীজ ও সংযোগ সড়ক।
টেকনাফ সাবরাং এলাকায় ০.৪০ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে ৩৩/১১ কেভি, ১০ এমবিএ বৈদ্যুতিক উপ-কেন্দ্র।
মহেশখালী চকরিয়ার ৪টি মৌজায় মাতারবাড়ি কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উপ কেন্দ্র(সওজ অংশ) জমির পরিমাণ ১৩.৭৪৯। ৫৪১.৬১ একর জমিতে মহেশখালী ধলঘাটা এলাকায় মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩। সর্বশেষ মহেশখালী চকরিয়ায় ৪টি মৌজায় ১৪.৯২৫ একর জমিতে মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প(সওজ অংশ) এর অধিনে নির্মিতব্য সড়ক ও সেতুর এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানান,বর্তমানে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার ৪০টি মেঘা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে কক্সবাজারে।আর এসব প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।এই মেঘা প্রকল্পগুলোর কাজ সমাপ্ত হলে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।আর তাই সরকার দ্রুততম সময়ে স্বচ্ছতার সাথে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর।
Posted ৭:১৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta