কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৭ মে) :: কক্সবাজার জেলায় ঘুম ছুটিয়েছে মহামারী করোনা।প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগী। এবার তারই দোসর ঘূর্ণিঝড় আমফান।করোনার দুঃসময়ে আরেক বিপদের মুখোমুখি কক্সবাজার জেলা। উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে নতুন এক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যদিও এই চ্যালেঞ্জ নিতেও তৈরি জেলা প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলায় সবরকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন ।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা থাকলেও আমফান এমন এক সময়ে আসছে, যখন জেলা লড়ে যাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্কতার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ মোকাবিলায় উপকূলের এলাকায় জোরদার প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতিতে যাতে কোনও ফাঁকফোকর না থাকে সেব্যাপারে উপকূলের উপজেলাগুলোর ইউএনওদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানিয়েছেন,বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে। এটি আরও শক্তিশালী হয়ে সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসছে।
রোববার রাত ১১টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আমফান কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার। যা দমকা হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৭৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। ২৫ টি মুজিব কিল্লা। সেই সাথে এখন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ থাকায়, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।এর পাশাপাশি কক্সবাজার শহরে থাকা চার শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজের বেশকিছু হোটেল-মোটেলকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ৫৭৬ টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৫ টি মুজিব কিল্লা-ই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ৫ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। যেহেতু এখন করোনা মহামারী আকার ধারণ করেছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে নিচু এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার আর পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’-এর মোকাবিলায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গেই করোনার সংক্রমণ রুখতেও একাধিক ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। একসঙ্গে অনেকে থাকলে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেই কারণেই উপকূলের উপজেলাগুলির সাইক্লোন সেন্টার ও স্কুল-কলেজগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক, স্যানিটাইজার রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে মেডিক্যাল টিমেরও ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কক্সবাজার প্রশাসন।
Posted ৪:২১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৮ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta