প্রেস বিজ্ঞপ্তি(২৭ জুন) :: কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসরতদের মধ্যে কোভিড-১৯ সন্দেহভাজনদের জীবন রক্ষায় শনিবার সেভ দ্য চিলড্রেন ৬০ শয্যার একটি নতুন আইসোলেশন ও চিকিৎসাকেন্দ্র’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে।
সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন আইসোলেশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার বা সারি আইটিসি কেন্দ্রটি টেকনাফ উপজেলার হোয়াইকং ইউনিয়নের চাকমারকুল গ্রাম ও ২১ নাম্বার ক্যাম্পে অবস্থিত। কেন্দ্রটি বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইন্টার সেক্টর কোওর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) পরামর্শ অনুযায়ী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে তৈরি করা হয়েছে। নতুন এই আইসোলেশন ও চিকিৎসাকেন্দ্রটি আগামী ৪ জুলাই থেকে চিকিৎসা প্রদান শুরু করবে।
অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে হাত ধোয়া সহ পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাগুলো অপ্রতুল এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সেলফ-আইসোলেশন ইত্যাদি বস্তুত অসম্ভব। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী এখানে মৃত্যুবরণও করেছেন। এরকম একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় করোনাভাইরাসের ব্যাপক আক্রমণ এবং প্রাদুর্ভাব সময়ের ব্যাপার মাত্র। শরণার্থী শিবিরের আশেপাশে থাকা স্থানীয় জনগোষ্ঠীও এই ঝুঁকির বাইরে নয়।
এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে রক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে সেভ দ্য চিলড্রেন এই আইসোলেশন ও চিকিৎসা কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। এতে অর্থায়ন করেছে ইউকে এইড এবং ইউএনওপিএস। চিকিৎসা কেন্দ্রটি নির্মাণকালে সেভ দ্য চিলড্রেন স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নেতা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে এবং এতদঅঞ্চলে চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণের গুরুত্ব আলোচনা করে ও সিআইসি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও অন্যান্যদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করে। পরে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ, অংশীদারীত্ব ও সেবা উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সারি আইটিসি সাপোর্ট কমিটি গঠন করে।
আয়োজিত অনাড়ম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল সংযোগে যোগদান করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবসান কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবসান কমিশনার কাজী মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সিভিল সার্জন- কক্সবাজার ডাঃ মুহাম্মদ মাহহবুবুর রহমান, ইন্টার সেক্টর কোওর্ডিনেশন গ্রুপের সিনিয়র কোওর্ডিনেটর নিকোল এপটিং এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ সেক্টর কোওর্ডিনেটর ডঃ মুকেশ কুমার প্রজাপতি।
তাছাড়াও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সরেজমিনে যোগদান করেন ক্যাম্প ২১-এর ক্যাম্প ইন চার্জ সাব্বির ইকবাল, সহকারী ক্যাম্প ইন চার্জ সিরাজুল ইসলাম এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর উনো ভ্যান মানেন বলেন,
“শিশুরা আমাদের বলেছে যে তারা করোনামৃত্যু নিয়ে ভীত। মৃত্যুর ভয় কিংবা প্রিয়জনদের হারানো শিশুর জন্যে খুব বেদনাদায়ক, বিশেষত যখন অনেকেই ইতোমধ্যে তীব্র মানসিক আঘাত ও ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, মিয়ানমারে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়ে হয়েছে এবং গত তিন বছর ধরে একটি ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে।
“আমরা কোভিড-১৯কে শিবিরের বাইরে রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছি যখন আমরা জানি যে এটি কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যদের সাথে, সকল সম্প্রদায়কে প্রস্তুত করতে, ভাইরাসের বিস্তারকে হ্রাস করতে এবং শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে আর যা যা করণীয় রয়েছে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
“আমাদের নতুন আইসোলেশন এবং চিকিত্সা কেন্দ্র সন্দেহভাজন এবং নিশ্চিত এবং মাঝারি থেকে গুরুতর কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের যত্ন নেবে। এই সেন্টারে সেভ দ্য চিলড্রেনের ইমার্জেন্সি হেলথ ইউনিটসহ ৮০ জন পেশাদার চিকিৎসক এবং সহায়তা কর্মী নিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের এই ধরণের রোগের প্রকোপ ব্যাবস্থাপনায় ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে।
“কেন্দ্রের পরিকল্পনার মধ্যে একটি আলাদা এলাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলারা নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতায় সহায়তা পরিষেবাগুলি গ্রহণ করতে পারবেন”।
সেভ দ্য চিলড্রেনের ইমার্জেন্সি হেলথ ইউনিটের প্রধান র্যাচেল পাউন্ড বলেন,“আমরা জানি না যে ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরে এই ভাইরাস কীভাবে কাজ করবে, যেখানে শিশুরা ইতিমধ্যে সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে কারণ তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা, টিকা এবং পর্যাপ্ত দৈনিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের সুযোগ নেই। দুর্বল টিকা এবং অপুষ্টির সংমিশ্রণে এই পুষ্টিহীন শিশুদের প্রাদুর্ভাব থেকে
খারাপ পরিণতি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
“গণ প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আমাদের ইবোলার চিকিৎসায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি – এবং কক্সবাজারে আমাদের কোভিড-১৯-এ চিকিৎসায় এটি আবার প্রয়োজনীয়। সংক্রমণের হার হ্রাস করার অন্যতম সেরা উপায় হল শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের তাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের যোগান নিশ্চিত করা এবং তারা কীভাবে এই ভাইরাস থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে তা বোঝানো।
“আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা করতে, এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করা নিশ্চিত করতে হবে। নিষ্ক্রিয়তার ফলে বিপর্যয়পূর্ণ জীবনক্ষয় হতে পারে যা কিনা প্রতিরোধযোগ্য”।
Posted ৯:১৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta