কক্সবাংলা রিপোর্ট :: করোনা মহামারি রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে আগামী বুধবার। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল থাকবে বিধিনিষেধ। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে গণপরিবহন। খোলা থাকবে শপিংমল ও দোকানপাট। কোরবানির পশু কেনাকাটা ও ঈদে মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলার করোনা সংক্রমণ দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে করোনায় সংক্রমণ ডাবল সেঞ্চুরী করেই যাচ্ছে। এর ভয়াবহ লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই দুই শতাধিকের উপরে বাড়ছে সংক্রম। চলমান কঠোর লকডাউন দিয়েও সংক্রমন কমানো যাচ্ছে না।
১২ জুলাই সোমবার একদিনে নতুন করে আরও ২২৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন।আর মৃত্যূবরণ করেছেন আরও একজন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব এবংস্বাস্থ্য বিভাগের র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে তাদের করোনা শনাক্ত হয়।রবিবার এ সংখ্যা ছিল ২২৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৩০২ জনে এবং মৃত্যূবরণ করেছেন ২১ রোহিঙ্গাসহ ১৩৭ জন।
সর্বশেষ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়া রোগী হলেন চকরিয়ার হারবাংয়ের নুরুন্নিছা(৫০)।তিনি গত ১০ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ১১ জুলাই মৃত্যূ হয়।
এদিকে সোমবার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান,জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৪ জন। তন্মধ্যে সদর উপজেলা ও পৌরসভার ৬৭ জন,উখিয়া উপজেলায় ২৪ জন,টেকনাফ উপজেলায় ৩০ জন,চকরিয়া উপজেলায় ৩ জন,রামু উপজেলায় ৪ জন,পেকুয়া উপজেলায় ২ জন,মহেশখালি উপজেলায় ৯ জন এবং ১৬ জন রোহিঙ্গা। নেগেটিভ ছিলেন ৬১৭ জন ।ফলোআপ ছিলেন ৮ জন।
অপরদিকে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৭৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এনিয়ে জেলায় ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় করোনাভাইরাসে ২২৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।এছাড়া ২৪ ঘন্টায় ২২৩টি র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে সদরে ২৬ জন,টেকনাফে ২০ জন,চকরিয়ায় ৩ জন,রামুতে ৮ জন,পেকুয়ায় ১ জন,মহেশখালিতে ৪ জন এবং উখিয়া শরনার্থী শিবিরে ৪ জন ও টেকনাফ শরনার্থী শিবিরে ২ জন রোহিঙ্গা পজিটিভ হয়েছেন।
এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৩০২ জনে। সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৮৯০ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৫৯২ জন। জেলায় করোনায় এখন পর্যন্ত মোট ২১ রোহিঙ্গাসহ ১৩৭ জন মারা গেছেন। তার মধ্যে সর্বাধিক কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলাতেই ৬৭ জনের মৃত্যূ হয়েছে। আক্রান্তের দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছে এই এলাকা।এছাড়া জেলায় ৩১০৩টি র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে করোনা পজিটভ হয়েছেন ৬৯০ জন।এর মধ্যে স্থানীয় ৬৩৯ জন এবং রোহিঙ্গা ৫১ জন।
অপরদিকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৮৪৬ রোহিঙ্গার নমুনা পরীক্ষায় করোনাক্রান্ত‘র সংখ্যা ২ হাজার ১০৩ জন।এর মধ্যে উখিয়ায় ১৮১৮ জন এবং টেকনাফে ৩৫২ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৭১৩ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ৩৬৮ জন।
এদিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনা ভ্যাকসিন নিতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি, দীর্ঘ লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে আছেন নানা বয়সী মানুষ। নারী ও বৃদ্ধরা পড়েছে বিড়ম্বনায়। ভ্যাকসিন গ্রহিতার ভীড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা।
টিকা গ্রহিতারা বলছেন সকাল সাতটা থেকে লাইনে দাঁড়ানো। চার ঘন্টা দাঁড়িয়েও টিকা দিতে পারিনি। এখানে বসার জায়গা নেই, প্রচন্ড ভীড়ে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। একটু পানির ব্যবস্থা নেই এখানে। আবার স্বাস্থ্য বিধিও মানছে না কেউ।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুবরা জানান, টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা এখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিদিন প্রচুর লোক আসে, আমাদের খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন,চানা ভ্যাকসিন আসার পর প্রতিদিন ৫০০ মানুষকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। আমরা চারশ মানুষকেই ম্যাসেজ দিয়েছি। কিন্তু ম্যাসেসজ না পেয়েও কিছু মানুষ ভুলে এসেছে। আমরা তাদের না আসতে অনুৎসাহিত করছি।তিনি আরও বলেন,জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন মারাত্বকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থায় চলমান লকডাউনে জেলার সর্বত্র সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জনগণ যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারে তাহলে করোনা সংক্রমণের হার কমে যাবে।
এদিকে কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ তৎপরতা চলছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের। ১লা জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের পাশাপাশি করোনা রোগীরা যাতে সাধারণ মানুষের স্পর্শে আসতে না পারে ও মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে করোনার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে রোগীর সংখ্যা কমানো তথা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিয়ে আরো বেশি করে গণসচেতনতা তৈরির উপর গুরুত্ব এবং লকডাউন অর্থবহ করতে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশসানকে আরো কঠোর ভূমিকা রাখার আহবান জানান সচেতন মহল। শুধু প্রধান সড়ক বা শহরের মধ্যে অভিযান সীমাবদ্ধ না রেখে শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অভিযান পরিচালনার পরামর্শ দেন তারা।
Posted ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta