কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(৩০ জুলাই) :: বর্ষা মৌসুম এলেই কক্সবাজার জেলার মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকে; কখন পাহাড়ধসে কে মারা যায়। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাতে শরণার্থীশিবিরসহ উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালীতে পাহাড়ধস এবং পানিতে ভেসে গিয়ে আর মাটির দেয়ালচাপায় ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
তাদের মধ্যে টেকনাফে ৬ জন, মহেশখালীতে ২ জন,চকরিয়ায় ২ জন,পেকুয়ায় ২ জন,ঘুমধুমে ২ জন এবং রোহিঙ্গা শিবিরে ৬ জন রয়েছে। এটি খুবই বেদনাদায়ক খবর।
টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। লঘুচাপের কারণে সাগরে জোয়ারের পানি ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।
উদ্বেগজনক হলো বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছরই কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ধসে বহু মানুষ মারা গেলেও প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং কমিটি দুর্ঘটনা রোধে কিছু সুপারিশও করে। কিন্তু সুপারিশ কখনো বাস্তবায়িত হয় না।
পাহাড়ধসের প্রধান কারণ পাহাড়ি বন, নির্বিচার গাছপালা কেটে ফেলা এবং পাদদেশের মাটি কেটে বসতি স্থাপন করা। হতদরিদ্র মানুষ অনেক সময় পাহাড়ের পাদদেশে ঘর তৈরি করে বসবাস করতে বাধ্য হয়। আবার প্রভাবশালী মহলও পাহাড় কেটে বাড়িঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে থাকেন।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার পর পাহাড়ে বসতির সংখ্যা অনেক গুণ বেড়ে যায়। পাহাড়ের পাদদেশে এসব বসতি যেমন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে, তেমনি তৈরি করেছে পরিবেশগত বিপর্যয়।
আইনে বলা আছে, পাহাড়ের পাদদেশে কোনো বসতি স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু কক্সবাজার সহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে বহু মানুষ বসবাস করছে। সম্প্রতি আবহাওয়া দপ্তর থেকে সতর্কসংকেত পাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন সেখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও অনেকে যাননি। তাঁদের ভয়, একবার চলে গেলে ফিরে আসতে পারবেন না বা ফিরে আসতে দেওয়া হবে না।
সমতল বাংলাদেশে পাহাড়ি এলাকা খুব কম। দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে কিছু অনুচ্চ পাহাড় আছে; যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এমনভাবে করতে হবে, যাতে পাহাড় বা প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
অতএব, পাহাড়ধসে মানুষের মৃত্যু রোধ করতে হলে সর্বাগ্রে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। এর গাছপালা কাটা যাবে না। দ্বিতীয়ত, পাহাড়ধসে মানুষের মৃত্যু রোধ করতে হলে তাদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে কেবল আবাসনের কারণেই পাহাড় কাটা হয়, তা নয়। উন্নয়নের নামেও পাহাড় কাটা হচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব পাহাড় রক্ষা করা। পাহাড় রক্ষা করলে মানুষও রক্ষা পাবে। পাহাড় হত্যা করে মানুষ বা পরিবেশ কোনোটাই বাঁচানো যাবে না।
Posted ১:৫৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta