বিশেষ প্রতিবেদক(১৩ জুন) :: টানা পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিতদের জীবনযাত্রা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিশাল এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিনই ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। বুধবার পাহাড়ধসে আহত হয়েছেন চার রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যরত দাতা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, গত পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণে প্লাবিত হয়ে এবং ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি। এখানে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। স্যানিটেশন ব্যবস্থা অচল হয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার সকাল ১১টার দিকে উখিয়া উপজেলার শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন, ডি-২ ব্লকের বাসিন্দা আলী আজগরের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন, মো. ইব্রাহীমের স্ত্রী সমুদা খাতুন, মো. শাকের আলমের স্ত্রী রোকেয়া ও তার তিন বছরের কন্যাসন্তান উম্মে হাবিবা। আহতদের উদ্ধার করে এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ডি-২ ব্লকের মাঝি জয়নাল আবেদীন জানান, দুটি রোহিঙ্গা পরিবারের ওপর পাহাড়ের বড় একটি অংশ ধসে পড়লে চারজন আহত হন। তিনি বলেন, টানা বৃষ্টি না থামলে আরও পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের সাইট পরিচালনা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাহাড়ধসের শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি তেমন না হলেও বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে চরম ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু এলাকা বর্তমানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফলে কুতুপালং থেকে ময়নারঘোনা পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে ক্যাম্পগুলোর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কঠিন সংকটের ভেতর দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
আইওএমের ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার শিরিন আকতার জানিয়েছেন, বর্ষার শুরুতেই পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। অনেক জায়গায় বালুর বস্তা ও প্রতিরোধক দেয়াল ধসে পড়েছে। পাহাড়ধসে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, ক্যাম্পগুলোতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় সতর্কসংকেত দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা জরুরি উদ্ধারকারী সরঞ্জাম ও উপকরণ বিতরণ করেছেন।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মী সোহেল ইসলাম জানান, ভারি বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু এলাকা বর্তমানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কুতুপালং ৫ ও ৬ এবং বালুখালী ১ ও ২ ক্যাম্পের অধিকাংশ এলাকা। ঢলের পানির সঙ্গে ময়লা ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা একাকার হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝি জাফর আলম বলেন, সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে কুতুপালং ক্যাম্পে। টানা বর্ষণে এই ক্যাম্পের পাঁচ শতাধিক ঘর ভেসে গেছে। এই পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে অন্য রোহিঙ্গাদের ঘরে।
বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি আবু তাহের জানান, এই ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ক্যাম্পের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও এখনও তা হয়নি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, উখিয়া ও টেকনাফে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এত বেশি সংখ্যক লোকজনকে ব্যবস্থাপনা করা সত্যিই কঠিন কাজ। টানা বর্ষণ হলে সাময়িক কিছু দুর্ভোগে তাদের কষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবেলা করা হচ্ছে।
সুত্র : সমকাল
Posted ৪:২৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta