কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৮ মে) :: কক্সবাজার জেলায় করোনা রোগী বাড়ার হার ভীতিকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। থামাথামির কোনো লক্ষণ নেই। বরঞ্চ প্রতিদিন যেন নতুন শক্তি সঞ্চয় করে ঝাঁপিয়ে পড়ছে করোনা নামক মহামারি। ফলে প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে করোনাক্রান্ত রোগীদের তালিকা। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, স্বাস্থ্যসেবক, পুলিশ,র্যাব,সরকারি কর্মকর্তা,এনজিও কর্মী,রোহিঙ্গা থেকে শুরু করে দিনমজুর- কাউকেই বাদ দিচ্ছে না করোনা। আর দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে কক্সবাজারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনকহারেই বাড়ছে।
এর মধ্যে সর্বত্র অবাধ চলাফেরা,অভ্যন্তরিন যানবাহন চলাচল দোকানপাট খুলে যাওয়া, মানুষের অসচেতনতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বিপদ। সর্বশেষ ১০ দিনে তাই কক্সবাজারে করোনা রোগী বেড়েছে ৩০০ জন। যা প্রায় ৩ গুণ!
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, ১৮ মে’র পর থেকে কক্সবাজারে করোনাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। ঈদকে সামনে রেখে সব ধরনের দোকানপাট, বিপণিবিতান,মার্কেট বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। যদিওবা কক্সবাজারে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
এর পরপরই বানের জল যেভাবে বাঁধ ভেঙে দেয়, সেভাবেই যেন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায় এক শ্রেণির মানুষের। এই শ্রেণির মানুষের ঢল নামে জেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে। শত শত মানুষ মাস্ক ও গ্লাভস ছাড়াই কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়েন। ঈদের আগে গোপনে খোলা রাখা কিছু দোকান ও মার্কেটগুলোতেও ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো তৎপরতা। ফলে প্রচণ্ড ভিড় জমে জেলার বিভিন্নস্থানের বাজার ও দোকানগুলোতে।
ঘরের বাইরে মানুষের ঢলই বাড়িয়ে দেয় বিপদ। বাড়তে শুরু করে আক্রান্তের সংখ্যাও। সর্বশেষ ২৮ মে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলায় এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক ৫৯জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায়। এর মধ্যে শুধু সদরে শনাক্ত হয় সর্বোচ্চ ৩১জন।
জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত ১৮ মে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬ রোহিঙ্গা সহ ২০৩ জন। এর মধ্যে ২৫ জন ছিলেন আইসোলেশন হাসপাতালে। ওই দিন পর্যন্ত সুস্থ হন ১০ জন, মারা যান মাত্র ১ জন। আর বৃহস্পতিবার (২৮ মে) বিকাল ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজারে করোনাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৫১ জন। অর্থাৎ, ১০ দিনের ব্যবধানে কক্সবাজার জেলায় করোনা রোগী বেড়েছে ৩৪৮ জন। গত ১৮ মে’র তুলনায় যা প্রায় ৩ গুণ বেশি।
এছাড়া একই সময়ে মারা গেছেন আরো ৯ জন করোনা রোগী। এর বাইরে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কয়েকজন।আর কক্সবাজার মেডিকেল ল্যাবে করোনাক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হন গত ১৪ মার্চ। জেলায় শনাক্ত হওয়া প্রথম রোগী ছিলেন চকরিয়ার খুটাখালীর এক নারী । আর জেলায় প্রথম করোনা রোগী মারা যান ৩০ এপ্রিল। মৃত্যুবরণকারী নারী রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বাসিন্দা। ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। দুই দিন আগে করোনার লক্ষণ নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
জানা যায়,২ এপ্রিল থেকে ১৮ মে, এই ৪৮ দিনে কক্সবাজারে করোনা রোগী ছিল ২০৩ জন। আর পরের ১০ দিনে ২৮ মে পর্যন্ত করোনা রোগী বেড়েছে আরো ২৯৯ জন! এ তথ্য বলছে, কক্সবাজার মেডিকেল ল্যাবে প্রথম করোনা টেস্ট শুরুর পর ৪৮ দিনে কক্সবাজারে গড়ে ৪.২২ জন করোনা রোগী পাওয়া যায়। কিন্তু পরের ১০ দিনে গড়ে ২৯.৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন!
জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মাহবুবুর রহমান কক্সবাংলাকে বলেন, ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণে কক্সবাজারে এখন করোনা রোগী বাড়ছে। একজন থেকে আরেকজন, আরেকজন থেকে অপরজন—এভাবে ভাইরাস ছড়াচ্ছে।’তিনি বলেন,রোহিঙ্গা সহ কক্সবাজার জেলায় বর্তমানে ৪০ লাখ লোক বসবাস করছে।আর জেলা এখন পর্যন্ত ৫৫১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।সে হিসাবে যেভাবে করোনা ছড়ার কথা ৪০ লাখ হিসাবে এ সংখ্যা কম। তা স্বত্বেও মানুষ যদি এখন সতর্ক না হয়, সচেতন না নয়, তবে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে না বেরোতে মানুষের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে বের হলে মাস্ক পরে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।
তিনি আরও বলেন,২৮মে পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রয়েছে ১০০ জন কভিড-১৯ রোগী।এছাড়া রোহিঙ্গা আইসোলেশন ইউনিটেও ৩০জন ভর্তি রয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১১৬ জন। হোম কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন ২৫৫জন।আর মারা গেছেন ৯ জন।
উল্লেখ্য,গত ২ এপ্রিল থেকে কভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা শুরুর পর থেকে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলায়। এখানে মোট আক্রান্ত ২০৫ জন। এছাড়াও দ্বিতীয় অবস্থানে চকরিয়া উপজেলা ১৫৪ জন। আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে উখিয়া । এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৭৮ জন।এর পরে রয়েছে পেকুয়ায় ৩৯ জন,মহেশখালীতে ৩০ জন,রামুতে ২৩ জন,টেকনাফে ১৮ জন,কুতুবদিয়ায় ৩ জন।এনিয়ে জেলায় ৫৭তম দিনে ২৮ মে পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাড়াল ২৯ রোহিঙ্গা সহ মোট ৫৫১ জন। এর মধ্যে মাত্র শেষ ২৪দিনেই জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২৯ জন সহ ৪৯৫ জন।
Posted ১০:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ মে ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta