কক্সবাংলা রিপোর্ট :: কক্সবাজারে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত নির্বাহী কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৯ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাত ৮টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন,পুলিশের মহা পরিদর্শক ড, বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সচিব মো: শহিদুজ্জামান।
সভায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত,জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ,জেলা পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান,সেনাবাহিনী,বিজিবি,,এপিবিএন ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন,বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোই মূল টার্গেট।চলতি বছরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কীভাবে হবে তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরদার করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
এরআগে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা থেকে ভাসানচর হয়ে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে অবতরণ করেন পৌঁছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এসময় তার সাথে ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বিকেল পাঁচটায় সেখানকার ক্যাম্প-৪ (এক্সটেনশনে) ইনচার্জের কার্যালয়ে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা মাঝির (নেতা) সঙ্গে আশ্রয়শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে ক্যাম্প-৪ ও ২১–এর দুই রোহিঙ্গা মাঝি আবদুল গফুর ও বশির আহমদ বলেন, কক্সবাজারের পাহাড়ে গড়ে ওঠা আশ্রয়শিবিরগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসতি করছেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বর্ষায় পাহাড়ধসে বসতি বিলীন ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকি এড়াতে শত শত রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
জালাল আহমদ নামের আরেক রোহিঙ্গা মাঝি ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রোহিঙ্গা নেতাদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম দিকে ভাসানচরে যেতে কোনো রোহিঙ্গা রাজি ছিল না। দুই দফায় তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাওয়ার পর তাদের ভুল ভেঙেছে, পরিস্থিতি পাল্টেছে। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনারাও (রোহিঙ্গারা) সেখানে গেলে সুখে–শান্তিতে থাকতে পারবেন। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার থাকার সুব্যবস্থা আছে।’
বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের শান্তিশৃঙ্খলা যেকোনো মূল্যে বজায় রাখা হবে। এখানে কোনো চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা অপরাধকর্মে জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
আইজিপি বলেন, ভাসানচরে যারা যাচ্ছে, তাদের নিরাপত্তার জন্য ভাসানচরে থানাও চালু হয়েছে। এসব খবর জেনেশুনে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ (এপিবিএন)। এ সময় সাংবাদিকদের নাজেহাল, মারধর, ক্যামেরা ও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে উপস্থিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠান বর্জন করে অন্যত্র চলে যান।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদের শারীরিকভাবেও নির্যাতন চালায় এপিবিএন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।
(কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে রোহিঙ্গা নেতাদের (মাঝি) তল্লাশি করা হয়। মঙ্গলবার বেলা দেড়টায়)
এর আগে সস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। দুপুরে ভাসানচরে নেমে কক্সবাজার থেকে স্থানান্তর করা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ও ভাসানচর থানার উদ্বোধন করেন। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে চারটায় উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিকেল পাঁচটায় ক্যাম্প-৪ (এক্সটেনশনে) ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে ৭০ রোহিঙ্গা মাঝির (নেতা) সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে তিনি সড়কপথে কক্সবাজার শহরে ফিরে আসেন।
প্রসঙ্গত,২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে পালিয়ে আসে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।
Posted ১:০১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২০ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta