কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৫ ফেব্রুয়ারী) :: ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রূপ কক্সবাজারে রোহিঙ্গ্যা আগমনের ৬মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের একটি অভিজাত হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এক লিখিত বক্তব্যে আইএসসিজির সমন্বয়ক সুমবুল রিজভী জানান,গত বছর ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা।তাদের খাদ্য,বাসস্থান,নিরাপত্তা,স্বাস্থ্য সেবা, সেনিটেশন,শিক্ষা কার্যক্রম সহ সকল কার্যক্রমে তারা সকল এনজিওদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন,ক্যাম্পে অন্তত দুই লাখ রোহিঙ্গা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করছে।আর রোহিঙ্গ্যাদের এসকল সমস্যার সমাধান করা না গেলে আগামী বর্ষা মৌসুমে প্রাাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারস্থ ত্রান ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম জানান,গত ছয়মাসে তারা এ পর্যন্ত ১১টি ক্যাম্পে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৮ জন রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে ইউএইসচিআর এর সহযোগীতায় ১লাখ ৯১ হাজার ১৮৯ পরিবার সনাক্ত করা হয়েছে। আর রোহিঙ্গাদের বাসস্থানে সেল্টার তৈরি করা হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১৯টি। পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যসেবায় ৭টি ফিল্ড হাসপাতাল,১৬২টি প্রাইমারী হেলথ কেয়ার এবং ২৪ ঘন্টা সেবার জন্য ১০টি হেলথ পোষ্ট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
পাশাপাশি ১ লাখ ১৩ হাজার৭৬১ রোহিঙ্গার শিক্ষা কার্যক্রমে ১১৪টি লারনিং সেন্টেরে ২ হাজার ১০২ শিক্ষক মিয়ানমার এবং ইংরেজি ভাষায় পাঠদান করছে। আর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। আর রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহে ৯টি অস্থায়ী খাদ্য গুদাম তৈরী রাখা হয়েছে।
এছাড়া রোহিঙ্গাদেরে সেনিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরনে ৪৯ হাজার ৫০২টি টয়লেট এবং ৫ হাজার ৯০০টি নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৯ কিলোমিটার জুড়ে ইলেকট্রিক সোলার লাইন বসানো হয়েছে।
কমিশনার কালাম বলেন, ‘বর্তমানে ৩৬ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা শিশু এতিম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আট হাজারের কাছাকাছি মা-বাবা উভয়জনকেই হারিয়েছে। শুরুতেই এই শিশুদের জন্য কাজ করেছি এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেইনি। যে কারণে আমরা আলাদা কোনো এতিমখানা করতে দেইনি। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পের মাঝিদের (ব্লকভিত্তিক নেতা) সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্টরা এসব এতিম শিশুদের নিকট আত্মীয়দের কাছে রেখে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’
তিনি জানান, রোববার উখিয়ায় এবং সোমবার টেকনাফে স্থানীয়দের সহায়তার কার্যক্রম শুরু হবে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ২৫হাজার পরিবারকে ১০ হাজার নগদ টাকা,৭২টি পাওয়ার টিলার, বীজসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং জ্বালানির জন্য বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে গ্যাস সিলিন্ডার সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে বলেও জানান ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম।
সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম বলেন,বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা ঘন বসতিপূর্ণভাবে এবং খাদ্যসহ বিস্তৃত পাহাড়জুড়ে বসবাসের কারণে বর্ষা মৌসুমে ভূমিধসের পাশাপাশি পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ক্যাম্প গড়ে উঠার কারণে বর্ষা মৌসুমে বান ও প্লাবনের আশঙ্কাও রয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আয়তন আরও বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা রোহিঙ্গাদের নতুন করে অধিগ্রহণ করা ভূমিতে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে।
বিশাল পাহাড়ি এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে উঠায় বন উজাড় হওয়ার কারণে আবাসস্থল নষ্ট এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বন্যহাতির আক্রমণে ১২ জন রোহিঙ্গা ও একজন স্থানীয় বাসিন্দা নিহত হয়েছে বলে জানান ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম),আইএসসিজি সহ বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১:২২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta