বিশেষ প্রতিবেদক(১১ মে) :: চিত্র প্রায় ৭৩ বছর বয়সী কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।প্রতিদিন অসংখ্য উড়োজাহাজ উঠছে, নামছে। এরই ফাঁকে বিমান বন্দরের রানওয়েতে ঢুকে পড়ছে আশপাশের মানুষ। এমনকি গরু-ছাগলও। এ চিত্র প্রায় চোখে পড়ে।আর সীমানা প্রাচীর না থাকায় এই গুরুত্বপূণ বিমানবন্দর কার্যত অরক্ষিত রয়ে গেছে। আলোক ব্যবস্থার ঘাটতির কারণে এখানে বন্ধ আছে রাতে উড়োজাহাজ ওঠানামা।
গত সোমবার সকালে দেখা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরের উত্তর দিকে নুনিয়াছটা অংশে সীমানাপ্রাচীরসহ নানা অবকাঠামো তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকেরা। পশ্চিম দিকের নাজিরারটেক, ফদনারডেইল ও কুতুবদিয়া পাড়ার অংশে স্থানীয় মানুষকে রানওয়ের ওপর দিয়ে চলাফেরা করতে দেখা গেল।
এ সময় কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। তাছাড়া রানওয়ের দুই পাশে খোলা জায়গায় অন্তত ১০-১২টি গরু, ছাগল ও কুকুরের বিচরণ চোখে পড়ে।
রানওয়ে অতিক্রম করে আসা স্থানীয় শ্রমিক আবদুল আমিন (৪৫) বলেন, মাছ আনতে তিনি ফিশারিঘাটে যাচ্ছিলেন। ফিশারিঘাটের সামনে বাঁকখালী নদীতে থাকা একটি ট্রলারের শ্রমিক তিনি। আগের রাতেও একই কায়দায় রানওয়ে অতিক্রম করে ফদনারডেইল গ্রামে যান। ওই গ্রামেই তাঁর বাড়ি।
স্থানীয় জেলে নুরুল আবছারকে গত সোমবার সকালে রানওয়ে অতিক্রম করে আসতে দেখা গেল। নুরুল বলেন, রানওয়ে পার হওয়ার সময় কেউ বাধা দেয়নি। তবে উড়োজাহাজ ওঠানামা করার সময় নিরাপদ দূরত্বে থাকেন বলে জানান।
সোমবার সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সাতটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ওঠানামা করতে দেখা যায়। এর ফাঁকে রানওয়ের সন্নিকটে (আশপাশে) মানুষ ও পশুপাখির বিচরণ চলছিল।
এখন সীমানাপ্রাচীর, আলোক ব্যবস্থা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যালয়ের ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এই জুনে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণকাজ। রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুট লম্বা এবং চওড়া ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের ঠিকাদার জয়নাল আবেদীন বলেন, লোকজনের পারাপার চলে সারা দিন। সীমানাপ্রাচীর না থাকায় রানওয়েতে গরু, ছাগল ও কুকুরের বিচরণ সব সময় লেগে থাকে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কক্সবাজারে যাতায়াত বাড়িয়ে দেন। ২০১৮ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে চড়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ওই দিন তিনি এই বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উদ্বোধন করেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক এ কে এম সাইদুজ্জামান বলেন, প্রতিদিন গড়ে ২২ ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ২ হাজার যাত্রী কক্সবাজার-ঢাকা যাওয়া–আসা করছে। আর সপ্তাহে তিন দিন বাংলাদেশ বিমানের তিনটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচল করে। রানওয়েতে লোকজনের চলাচল বন্ধ না হওয়ায় রাতের দিকে উড়োজাহাজ অবতরণে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, সীমানাপ্রাচীর ও আলোর ব্যবস্থা স্থাপিত হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ৯ মার্চ কক্সবাজার বিমানবন্দরের উত্তরে বঙ্গোপসাগরে একটি কার্গো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে বিদেশি পাইলটসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। কার্গো উড়োজাহাজটি কক্সবাজার থেকে চিংড়ি পোনা নিয়ে যশোর যাচ্ছিল। এ ছাড়া দুই বছর আগে একটি বেসরকারি উড়োজাহাজের চাকায় পিষ্ট হয়ে রানওয়েতে তিনটি কুকুরের মৃত্যু হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার-২ আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, দ্রুত সীমানাপ্রাচীর তৈরির জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতিও ভালো।
সূত্র : আব্দুল কুদ্দুস রানা(কক্সবাজার)
দৈনিক প্রথম আলো
Posted ৭:৫৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ মে ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta