কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩০ মে) :: ঘূর্ণিঝড় মোরা বাংলাদেশের সীমানায় সবচেয়ে আগে আঘাত হানে সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে।টেকনাফে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার আর সেন্টমার্টিন্সে ১১৪ কিলোমিটার।এরপর অনেকটা উপকূল ঘেঁষে উপরের দিকে উঠে আসে।ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্রাম ও দ্বীপ। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র দাপটে জেলার ১০ হাজারেরও বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে গাছপালা । মৃত্যু হয়েছে এক শিশু সহ পাঁচ জনের। এর মধ্যে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, রামু,চকরিয়া,উখিয়া ও টেকনাফে বাড়িঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৯ লাখ টাকা, ৭০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী, ৩০০ কেজি চিড়া, ২০০ কেজি গুড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মোরার প্রভাবে সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। তবে জেলার আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এ কারণে কক্সবাজারের ৫৩৮ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া দেড় লক্ষাধিক মানুষ ঘরে ফিরেছেন। কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ বিমানবন্দর বন্ধ রয়েছে।রাত ৮টার পর কক্সবাজার শহরে বিদ্যূৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগরে থাকা অর্ধশত ট্রালার ও জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রচন্ড বাতাসের কারণে গাছ চাপা পড়ে এবং গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে শিশু সহ ৪ জন মারা গেছে।এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে এসে ঘূর্ণিঝড়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে স্ট্রোক করে এক মহিলার মৃত্যূ হয়েছে। নিহতরা হলো, পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ৬নং জেডিঘাট এলাকায় বদিউল আলমের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৫৫), চকরিয়ার বড়ভেওয়া এলাকার মৃত নূর আলম সিকদারের স্ত্রী সায়েরা খাতুন (৬৫) ও একই উপজেলার পূর্ব জুমখালী এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে রহমত উল্লাহ (৫০),পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়ার চর এলাকার মোজাম্মেল হকের পুত্র আব্দুল হাকিম (৪০),কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদের ৯নং ওয়ার্ডের মো: শাহজাহানের শিশু কন্যা শাহিনা আক্তার(৯) এবং কুতুবদিয়া আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের হায়দার বাপের পাড়া এলাকার শারমিন আক্তার (৬)।এদের মধ্যে মরিয়ম বেগম স্ট্রোকে এবং বাকি ৪জন গাছ চাপায় মারা যায়। এছাড়া আহত হয়েছে অর্ধশত নারী,পূরুষ ও শিশু।
টেকনাফে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান,মোরা ঘূর্ণিঝড়ের প্রায় ১০ঘন্টাব্যাপী তান্ডবে বসত-বাড়ি,ধর্মীয় উপাসনালয়, দাতব্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,গাছপালা,ফসল,মৎস্য ঘেঁর ও মওজুদকৃত লবণের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এসময় ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ৩০জন গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ প্রধান সড়ক ও আভ্যন্তরীণ সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও পরে স্বাভাবিক হয়।কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও সার্ভিস লাইন উড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গভীর রাতে ঘরের চালা মেরামতের সময় বাতাসের সঙ্গে উড়ে গিয়ে হ্নীলা উলুচামরীর মৃত ঈমান শরীফের পুত্র জুহুর আলম (২২) নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রায় দু‘ঘন্টা পর পরিজন তল্লাশী চালিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে তাকে মুমুর্ষাবস্থায় উদ্ধার করে কুতুপালং ক্যাম্পে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে। এছাড়া হোয়াইক্যং মুলাপাড়ার বাদশা মিয়ার পুত্র সেলিম (১২),মিনা বাজারের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে অজ্ঞাতনামা ৩০জনের মতো আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে।এদিকে হ্নীলায় মওজুদ করা ২৫লক্ষ টাকার লবণ গুদাম,পূর্ব সিকদার পাড়ার কবুতরের চাষ,লেচুয়াপ্রাংয়ে কলা,আম ও লিচু বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানের মৎস্য ঘেঁর,পোল্ট্রি ফার্ম ও লবণের গোদাম ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষ লক্ষ গাছ,পানের বরজ,শত শত একর শসা, ছিছিংগা, কাকরোল,বেগুন,ঢ়েড়ঁশ,লাউ, বটবটিসহ নানা ফসলের চাষাবাদ উপড়ে গেছে।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানিয়েছেন, সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ গ্রামে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনার ডেইল ও নাজিরারটেক এলাকা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিরর আকতার কামাল।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ বলেন, ‘এ ইউনিয়নে দেড়শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে গেছে। আশপাশে যতদূর দেখেছি তাতে কমপক্ষে ৭০ ভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। অনেক গাছপালা ভেঙে গেছে। আমার নিজের সেমিপাকা বাড়িটিরও আংশিক ভেঙে গেছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন,চকরিয়ায় ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র তান্ডবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়ে বিধস্ত হয়েছে ১০ হাজার ২২৮টি বসতবাড়ি। সম্পুর্ণভাবে ভেঙ্গে গেছে ১ হাজার ২৯৩টি বসতঘর। তারমধ্যে ১৮ ইউনিয়নে ভেঙ্গে গেছে ১ হাজার ১৯৩টি বসতঘর এবং পৌরসভার ৯টি ওর্য়াডে ভেঙ্গে গেছে ৮০টি বসতবাড়ি। সড়কের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে প্রায় দুইঘন্টা ধরে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।
অপরদিকে ঘুর্ণিঝড় মোরা’র তান্ডবে গাছ চাপা পড়ে উপজেলার পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে এক নারী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে একজনসহ দুইজন নিহত হয়েছে।নিহতরা হলেন: উপজেলার পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে সিকদারপাড়া গ্রামের ছায়েরা খাতুন (৬২) ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্বডুমখালী গ্রামের আবদুল জব্বারে ছেলে রাহমত উল্লাহ (৪০)। এছাড়া ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডব চলাকালে বসতঘর রক্ষা করতে গিয়ে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি কমবেশি আহত হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরার তান্ডবে মহেশখালীর ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় আনুমানিক ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ধলঘাটা, মাতারবাড়ী, কুতুবজোম, শাপলাপুর, ছোট মহেশখালী, হোয়ানক,কালারমারছড়া পৌরএলাকা সহ ৫ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্থ হয়েছে। এছাড়া ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় মহেশখালী দ্বীপে পানি না উঠলেও প্রচন্ড বাতাসের কারনে কাচা ঘর বাড়ী,স্কুল , মাদরাসা,ঘেরা বেড়া বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ উপড়ে পড়ে। চিংড়ী ঘের লবনের গুদাম ও পানের বরজ ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়।উপজেলা প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন মাতারবাড়ী,ধলঘাটায়,ও কুতুবজোম সহ চিহ্নিত এলাকার জন্য ১৯ মে:টন চাউল বরাদ্দ করেছে।তবে সোমবার সাগরে মাছ ধরারত অবস্থায় থাকা মহেশখালীর ৫ টির বেশী ফিশিং ট্রলারের প্রায় ৭০জন মাঝি মাল্লা নিয়ে কুলে ফিরে আসেনি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান,বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজারের উখিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে অসংখ্য গাছপালা ও কাঁচা বসতবাড়ি ভেঙে পড়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। সোনার পাড়া ও ইনানীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন ভিত্তিক ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে প্রতিটি ইউনিয়নে দুইজন করে অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।এছাড়াও উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক হারে পানের বরজের ক্ষতি হয়। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে ও তার উপরে পড়ায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন রয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে পেকুয়া উপজেলায় আঘাত হানায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার কাচা, আধাপাকা ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি গাছ। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ও তার ছিড়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। প্রায় টানা তিন ঘন্টার তান্ডবে মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার এক হাজার কাঁচা, আধাপাকা ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রচন্ড বাতাসের কারণে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে মারা গেছে উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়ার চর এলাকার মোজাম্মেল হকের পুত্র আব্দুল হাকিম (৪০)। মাটির ঘর ভেঙ্গে আহত হয়েছেন ১৮-২০জন ব্যক্তি। তিনি আরও জানান,৮টি মেডিক্যাল টিম মাঠ পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় আত্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। আমরা তা উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে তদারকি করছি। এছাড়া উপকূলীয় ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় আত্রান্তদের প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানী ও সকল প্রকার যানবাহন সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
কুতুবদিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল বশর চৌধুরী বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ব্যাপক এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। ঐ সময়ে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের হায়দার বাপের পাড়া এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় শারমিন আক্তার (৬) নামের এক শিশু নিহত হয়েছে।তিনি আরও জানান, গত শনিবার দুপুরে উপকূল থেকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া শতাধিক ফিশিং ট্রলার উপকূলে ফিরে এলেও ৫০ জেলেসহ তিনটি ফিশিং ট্রলার এখনো উপকূলে ফিরে আসেনি। কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে উপকূলীয় বনবিভাগের সৃজিত ঝাউবাগানের দুই শতাধিক ঝাউগাছ ভেঙে পড়েছে। দ্বীপে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মানুষের আবাসস্থলে। কাঁচা ঘরবাড়ি বেশী নষ্ট হয়েছে। বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের কারণে উত্তর ধূরুংয়ের পশ্চিম চরধুরুং ও কাইসার পাড়া এলাকা হয়ে সরাসরি সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বহু বসতঘর। রাত ১০টার পর হতে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহজাহান আলি জানান, ঘূর্নিঝড় মোরার আঘাতে কম-বেশী ৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে ঝড়ো বাতাস ও ভারি বৃষ্টিতে রামু উপজেলা ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার শত শত ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এবং গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাড়িঘর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, গাছপালা, বিদ্যুৎ লাইন, পানের বরজ, ক্ষেতখোলা, ইট ভাটা, বিভিন্ন মালিকানাধীন বাগানের বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ ঘুর্নিঝড় মোরা’র আক্রমনে হতাহত না হলেও জনসাধারণের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় মোরাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছিল। তিনি আরও জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় মোরাকে কেন্দ্র করে সোমবার থেকে যথেষ্ট প্রস্ততি ছিল। সতর্ক সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা ও ইউনিয়নে মাইকিং করে সতর্কবার্তা দিয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, জেলায় ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এখনো হাতে আসেনি। তবে টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও পেকুয়ার উজানটিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকায় কাঁচাঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৯ লাখ টাকা, ৭০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী, ৩০০ কেজি চিড়া, ২০০ কেজি গুড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জয় জানান, এ জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখের অধিক মানুষ আশ্রয় নেয়।মোরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে আঘাত হেনেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি ও গাছপালার। তবে কোনো ধরনের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।তিনি আরও জানান,ইতিমধ্যে ত্রাণ নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে নৌবাহিনীর জাহাজ।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি পরে আস্তে আস্তে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। থাইল্যান্ডের প্রস্তাবে ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেওয়া হয় ‘মোরা, যার অর্থ ‘সাগরের তারা’। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা সিডরের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানা আইলার গতি ছিল ১২০ কিলোমিটার। সিডরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ প্রাণ হারান। আইলায় প্রাণ যায় ৩২৫ জনের। নিখোঁজ হন আরও অনেকে। সিডর ও আইলার সময়ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়। আট বছর পর আবারও ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আঘাত হানার আগে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
Posted ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩১ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta