মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তরের কঠিন কাজে সরকার

শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
451 ভিউ
কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তরের কঠিন কাজে সরকার

কক্সবাংলা রিপোর্ট :: সব আলোচনা-সমালোচনার অবসান ঘটিয়ে বহু প্রতিক্ষিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আবাসন প্রকল্প গড়ার পর স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করল বাংলাদেশ সরকার। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝেই বৃহস্পতিবার থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হলো। কক্সবাজারের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ওই চরটিতে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রথম দিন ৬ শতাধিক পরিবারের ২৭শ রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। আজ আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে নেওয়া হবে। সূত্রের খবর, এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের এ স্থানান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

সেনা অত্যাচারে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা।প্রবল শরণার্থী চাপ পড়েছে মায়ামমার সংলগ্ন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। সমস্যা সমাধানে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসান চর এলাকায় আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানেই লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে প্রাথমিকভাবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

ভাসানচর মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এই ভাসানচরে তাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।

সূত্রমতে,বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত অন্তত দেড় হাজার রোহিঙ্গা টেকনাফের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে বসবাসের জন্য নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচরে তৈরি করা হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন আবাসন ব্যবস্থা। শহরের অধিকাংশ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সেখানে নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কুতুপালংসহ আরও কিছু ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে করে নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রামে আনা হয়। পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রেডি রেসপন্স বাথ, বিএফ শাহীন কলেজ, বোট ক্লাব এলাকায় অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। পাশেই জেটিতে অপেক্ষা করছে বেশ কয়েকটি জাহাজ। শুক্রবার জলপথে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পৌঁছে দেওয়া হবে।

সম্পূর্ণ নিজেদের ইচ্ছায় ভাসানচরে গিয়ে থাকতে রাজি রোহিঙ্গাদের এ দলটির মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্প হিসেবে যাত্রা হতে যাচ্ছে ভাসানচরের। রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নিয়ে যাচ্ছে নৌবাহিনীর ১২টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজ। এরই মধ্যে ভাসানচরে মজুদ রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী। ভাসানচরে প্রথম ধাপে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখা হবে ৫ থেকে ১১ নম্বর ক্লাস্টারে। তিন মাসের মজুদ সক্ষমতার খাদ্য গুদামে প্রস্তুত ৬৬ টন খাদ্যপণ্য। তবে প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করবে বেসরকারি সংস্থাগুলো।

ইতিমধ্যে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধিরা ভাসানচরে কাজ শুরু করেছেন।এরা হলো-পালস বাংলাদেশ সোসাইটি, কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ, ফ্রেন্ডশিপ, এসএডব্লিউবি, শারজাহ চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গ্লোবাল উন্নয়ন সংস্থা, আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার, সনি ইন্টারন্যাশনাল, আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন, হেলথ দ্য নিডি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জনসভা কেন্দ্র, কারিতাস বাংলাদেশ, সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস), সোস্যাল এইড, সিডিডি, মুক্তি-কক্সবাজার, ভলান্টারি অর্গানাইজেশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট, আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল, মাল্টি সার্ভ ইন্টারন্যাশনাল, আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন ফর অল।

মাঠ পর্যায়ে থাকা সরকারি একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের বুধবার রাত থেকে নিজ নিজ ক্যাম্প থেকে উখিয়ার দুটি অস্থায়ী ক্যাম্পে এনে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়া কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের বহন করতে আসা অর্ধশত বাসের দীর্ঘ লাইন। সেখানে তাদের মালপত্র বহন করতে নিয়ে আসা হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রাকও। সব মিলিয়ে ৯০টি গাড়ি ছিল। এ সময় তাদের সঙ্গে শেষ দেখা করতে স্বজনরা ভিড় করেন সেখানে।

ওমর হামজা নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘আশা করছি এখান থেকে ভাসানচরে গিয়ে পরিবার নিয়ে সুখে থাকব। বাকিটা সেখানে যাওয়ার পর বলতে পারব।’ এ সময় তার পাশে ছিলেন তার বৃদ্ধ মা রহিমা খাতুন।

স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাসানচরে যেতে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্টে এসেছেন মো. তৈয়ুব নামে আরেক রোহিঙ্গা। তিনি কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘এখানে কষ্টে আছি, তাই স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার তালিকায় নাম দিয়েছি। সেখানে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পে এসেছি।’

সমুদ্রে মাছ ধরে সংসার চালাতেন টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা সালামত উল্লাহ। বৃহস্পতিবার সকালে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘মালপত্রসহ ঘরটি আট হাজার টাকায় পাশের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। শুনেছি ভাসানচরে আমাদের জন্য পাকা বাড়ি করা হয়েছে। তাই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সেখানে চলে যাচ্ছি।’

টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের নাহার বেগম নামে এক বৃদ্ধ নারী বলেন, ‘কেউ জোর জবরদস্তি করেনি, স্বেচ্ছায় আমরা ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছি। পরিবারের ১১ জন সদস্য আছে। সবাই সেখানে চলে যেতে একমত হয়েছি।

বালুখালী ক্যাম্প-২০-এর হেড মাঝি মোহাম্মদ হোছন বলেন, ক্যাম্প-২০ এবং ২০ এক্সটেনশন থেকে আটটি রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে।

ক্যাম্প-১৭-এর মাঝি মোহাম্মদ নুর বলেন, তার ক্যাম্প থেকে ৭০ পরিবার ভাসানচরে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে।

ক্যাম্প-৫-এর হেড মাঝি জাফর আলম বলেন, এ ক্যাম্প থেকে পাঁচটি রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে রওনা হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন-রোহিঙ্গাদের তারা কেন আমেরিকা-ইউরোপে নিয়ে যাচ্ছেন না।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রোহিঙ্গাদের আমেরিকা কেন নিয়ে যাচ্ছেন না? অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গাদের কেন যুক্তরাজ্যে-ইউরোপে নিয়ে যাচ্ছেন না? আপনারা তাদের জিজ্ঞাসা করেন।

‘আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকরা কক্সবাজারকে ডেঞ্জার জোন মনে করে। সে কারণে তারা প্রতিদিন সাড়ে চারশ ডলার পারডেম পান। ভাসানচরে গেলে তো পারডেম দেওয়া লাগবে না। খরচ বেঁচে যাবে। ’

ড. মোমেন বলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক সংস্থা চেষ্টা করছে, তবে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে পাঠাতে পারেনি। রাখাইনে কি হচ্ছে, তারা সেটা মিয়ানমারের কাছ থেকে কেন জানতে পারছে না।এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, প্রথম দিন থেকেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা স্থানান্তর বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।

অপরদিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম শুরুর দিন জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কঠোর সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ সরকার। এ দুটি আন্তর্জাতিক মোর্চা শুরু থেকেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে বাংলাদেশের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছিল। বিশ্লেষকরাও বলছেন, জাতিসংঘ সার্বিক অর্থেই একটি ব্যর্থ সংগঠন। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘের ব্যর্থতা এবং এর পরও এ নিয়ে নাক গলানোর প্রবণতার তীব্র সমালোচনা করছেন তারা। রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে জাতিসংঘ ও ইইউর পথেই হাঁটছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

প্রসঙ্গত,২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ব্যাপক হারে মায়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। সংখ্যাটা গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ১১ লক্ষে। এই অবস্থায় এক লক্ষ রোহিঙ্গার আশ্রয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়। ২ হাজার ৩১২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে এক লাখ বাস্তুচ্যুত মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উপযোগী বাসস্থান নির্মাণ করে।

451 ভিউ

Posted ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com