কক্সবাংলা রিপোট(২২ জুলাই) :: কক্সবাজার জেলায় পৃথক পৃথক ঘটনায় একদিনে ১০ জনের অস্বাভাবিক মুত্যূ হয়েছে। বুধবার পৃথক ঘটনায় চকরিয়া উপজেলায় ৯ জন এবং টেকনাফে ১ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৭জন,গলাকেটে এক যুবতী নারী,গলাটিপে এক বৃদ্ধা এবং টেকনাফে বন্দুক যুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন। এছাড়া ২১ জুলাই মহেশখালীতে এক ব্যবসায়ী খুন হয়,চকরিয়ার বদরখালীতে বাবুর্চির লাশ উদ্ধার হয় এবং কক্সবাজার পৌর এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যূ হয়।
আমাদেরে চকরিয়া প্রতিনিধি মুকুল কান্তি দাশ জানায়,২২ জুলাই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় লেগুনা ও কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাত জন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও সাত জন। হতাহতরা সবাই লেগুনার যাত্রী ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মহাসড়কের চকরিয়ার উত্তর হারবাং এলাকার বুড়ির দোকান পয়েন্টে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।নিহতরা হলেন- চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার আবদুল কাদেরের পুত্র বদিউল আলম (৫০), বান্দরবানের লামা উপজেলার সন্দ্বীপ পাড়ার আবদুল মাজেদের পুত্র আল আমিন (৪৮), লেগুনা চালক চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকার মিনহাজ উদ্দিন (২৩) ও চকরিয়ার কোনাখালী ইউনিয়নের আলী মিয়ার পুত্র সিরাজ আহমদ (৩২) ও একই এলাকার আমির হামজার ছেলে মোহামমদ বাবলু (৪০)। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালে আনার পর এ পর্যন্ত সাত জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে দুই জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’’
অপরদিকে চকরিয়া বরইতলী ইউনিয়নে সম্পত্তি ভোগের লোভে আলতাফ হোসেন (৫৮) নামের এক কৃষককে গলাটিপে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ নিহতের স্ত্রী ও এক ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- নিহত আলতাফ হোসেনের স্ত্রী রহিমা খাতুন ও ছেলে মো.মামুন। বুধবার ভোর রাতে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বিবিরখিল সবুজবাগ এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ব্যাপারে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই পলাশ রায় বলেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর নিহতের বাড়িতে যাই। এসময় আলতাফ হোসেনের মরদেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখি। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে তার গলায় আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেছে।এঘটনায় জড়িত অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ত্রী ও তার এক ছেলেকে আটক করা হয়েছে। বাকিরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা যায়নি।
এছাড়া একইদিন চকরিয়ায় উর্মি আক্তার (২০) নামের এক যুবতীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।বুধবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের স্টেশন পাড়ার একটি বাসার পাশ থেকে ওই যুবতীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পুলিশ একটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করে। নিহত যুবতী উর্মি আক্তার হারবাং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শান্তিনগর এলাকার জাকের হোসেনের মেয়ে। হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মো.আমিনুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবতীর লাশ উদ্ধার করি। প্রাথমিক সুরতাহাল রিপোর্টে গলার সামনে ছুরির আঘাতের চিহৃ রয়েছে। স্বামী হইতো হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে পালিয়েছে। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান বলেন, ওই যুবতীর লাশ উদ্ধার করে মযনাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার মূল হোতা তার স্বামী মামুনকে আটক করতে পারলে ঘটনার রহস্য জানা যাবে।
আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি হেলাল উদ্দিন জানান, বুধবার রাত ২টার দিকে টেকনাফর হ্নীলা দমদমিয়া জাহাজঘাটস্থ পাহাড়ি এলাকায় ডাকাত ও র্যাব-১৫ এর সদস্যদের মধ্যে এই বন্দুকযুদ্ধে মোঃ রশিদুল্লাহ (২৮) নামে এক রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ২টি এলজি ও ৫রাউন্ড গুলি। এই তথ্য নিশ্চিত করেন, র্যাব-১৫ এর টেকনাফ (সিপিসি-১) এর কর্তব্যরত অপারেশন কমান্ডার (এএসপি) বিমান চন্দ্র কর্মকার। নিহত রশিদুল্লাহ হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শফিকুল্লাহর ছেলে। সে একজন ডাকাত। সে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী খালেক গ্রুপের সদস্য।
এছাড়া গত ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চকরিয়া উপজেলার উপক’লীয় বদরখালী ইউনিয়নের জেটিঘাট এলাকা থেকে সুলতান আহামদ (৬৫) নামে এক জেলে বাবুর্চির লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় নৌ পুলিশ। এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাছ ধরার বড় ট্রলার থেকে ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে নদী পার হওয়ার সময় পানিতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হন বাবুর্চি সুলতান আহমদ। নিহত সুলতান আহামদ পার্বত্যজেলা বান্দরবানের লামা উপজেলা হায়দারনাশি দক্ষিণপাড়া এলাকার মৃত কাল মিয়ার ছেলে।
২১ই জুলাই রাত সাড়ে ১২টার সময় মহেশখালী পৌরসভার চরপাড়ায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের চুরিকাঘাতে শাহাজালাল (১৯) নামে এক ব্যবসায়ী খুন হয়। সে চরপাড়া গ্রামের ফোরকান আহমদ প্রকাশ বাসিন্যার পুত্র।এ ঘটনায় নুরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
এছাড়া ২০ জুলাই ভোর চারটার দিকে কক্সবাজার জেলা শহরের খুরুশকুল সেতু এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিজানুর রহমান মিজান (৩২) নামে এক ইয়াবা লুটকারী নিহত হয়। নিহত মিজান কক্সবাজার পৌর এলাকার পশ্চিম টেকপাড়ার বাসিন্দা গোলাম মওলা প্রকাশ জজ বাবুলের বড় ছেলে।
এনিয়ে কক্সবাজার জেলা গত ৭২ ঘন্টায় ১৩ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যূ হয়।
Posted ১:১৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta