কক্সবাংলা রিপোর্ট(২২ মে) :: কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ ঝুঁকিপূর্ণ শরনার্থী শিবিবে থাকা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে দাতা সংস্থাগুলোর বিরোধিতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, তাদের বিরোধিতা করার একটি কারণ হলো ভাসানচরে কোনো বিলাসবহুল হোটেল সুবিধা নেই।
দাতা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কুতুপালংয়ে থাকলে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের নামীদামী হোটেলে তারা থাকতে পারেন। দায়িত্ব পালন শেষে সেখান থেকে বিকাল ৩টায় কক্সবাজারে চলে এসে বাকি সময় তারা আড্ডা এবং ঘুমিয়ে কাটাতে পারেন।’
রাজধানীতে নিজের বাসবভনে থেকে মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আমরা ভাসানচরে নিলে রাখাইনে তারা যে ধরনের কাজ করত, সে ধরনের কাজ করতে পারবে। সেখানে তারা মাছ ধরা, কৃষিকাজ করা এবং গরু, ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগি লালন-পালনের মতো অর্থনৈতিক কাজ করতে পারবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভাসানচরে প্রচুর খোলামেলা ও সুন্দর জায়গা রয়েছে। সেখানে অর্থনৈতিক বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ আছে।’ তাই কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের একাংশকে ভাসনচরে পাঠানোর ঘোষণা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ।
কিন্তু কেন যে দাতা সংস্থাগুলো এ নিয়ে অসন্তুষ্ট তা বুঝতে পারছেন না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘একটা সমস্যা আছে, তা হলো যাওয়া-আসায় সমস্যা। সেখানে যেতে এখন সমুদ্রপথে ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। আমরা বোট সার্ভিস চালু করব। তাদের তো কোনো আর্থিক সমস্যা নেই। চাইলে তারাও তো এ সার্ভিস চালু করতে পারে। তারা এ সার্ভিস চালু করছেন না কেন?’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখন কক্সবাজারে যেখানে আছে তা নিয়ে আমাদের সবসময়ই চিন্তায় থাকতে হয়। সেখানে অতিবৃষ্টি হলে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা থাকে। এতে রোহিঙ্গাদের মারা পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে। কোনো রোহিঙ্গা মারা গেলেও দোষ আমাদের ওপর আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আন্দামান ও ভারত মহাসাগরে কোনো সমস্যা হলেই মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের দিতে তাকিয়ে থাকে। ভাবখানা এমন যে আমরা যেহেতু আগের ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি তাই তাদেরও যেন ঠাঁই দেই।’
ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা বলে দিয়েছি যে আর পারব না। আমাদের আর কোনো জায়গা নেই। অন্য দেশগুলোরও দায়িত্ব আছে। রোহিঙ্গা শুধু আমাদের একারই সমস্যা না, এটা সারাবিশ্বের সমস্যা। সমুদ্র তীরবর্তী অন্য দেশগুলো তাদের নিতে পারে। কিংবা যারা আমাদের আদেশ-উপদেশ দেন তারাও নিতে পারেন। তাদের জায়গার কোনো অভাব নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয় হলো ২,০০০ ডলার এবং প্রতি বর্গমাইলে ১,২০০ লোক বসবাস করে। যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্ষিক আয় হলো ৫৬ হাজার ডলার এবং সেখানে প্রতি বর্গমাইলে বাস করে মাত্র ১৫ জন। তারা তাদের (রোহিঙ্গা) নিচ্ছেন না কেন? রোহিঙ্গাদের ভালো জীবন দিতে চাইলে আপনারা তাদের নিয়ে যান। রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
ভাসানচরের বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাদের আরেকটা অভিযোগ, খাবার-দাবার দিতে গেলে জাহাজে করে নিতে হবে। এতে তাদের খরচ বেশি হবে। তবে, আমি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফও) প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন খরচটা তত বেশি না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভাসানচর নিয়ে দাতা সংস্থা বরাবরই ভুল বার্তা দিয়েছে। এরপরে সেখানে রোহিঙ্গাদের সরানো হলে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
ঘূর্ণিঝড়ে অক্ষত ভাসানচর
রোহিঙ্গা বসবাসের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নোয়াখালীর ভাসানচর। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরও অক্ষত আশ্রয়ন প্রকল্পই এর প্রমাণ। দূযোর্গ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান, দুই স্তরের শক্তিশালী বাঁধই ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে ভাসানচরকে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে উপকূলের বেশ কয়েকটি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অক্ষত রয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচর। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা চরে রোহিঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পে আম্পানের কোন আঁচই লাগেনি।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি দেখতে সেখানে যান একটি প্রতিনিধি দল। আর তারা বলছেন, ভাসানচরে বাস করা ৩০৬ রোহিঙ্গার সবাই ভাল আছেন।
তবে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বলছে, আশ্রয়ন প্রকল্প ঘিরে থাকা দুই স্তরের বাঁধের কারণে এলাকায় পানি ঢুকতে পারেনি। এতেই বোঝা যায় রোহিঙ্গাদের জন্য জায়াগাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।