কক্সবাংলা রিপোর্ট :: নোয়াখালীর ভাসানচরে ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি দলের পরিদর্শনকালে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে স্থানন্তির হওয়া রোহিঙ্গারা রেশন, মাসিক ভাতা, কর্মসংস্থান ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় তারা ওয়্যারহাউজে ভাঙচুর চালায়।
সোমবার (৩১ মে) সকাল ১১টায় জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দুই সহকারী হাইকমিশনারসহ ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সামনে তারা এই বিক্ষোভ করে।
আজ সোমবার ( ৩১ মে) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সহকারী হাইকমিশনার রউফ মাজাও এবং গিলিয়ান ট্রিগসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সুযোগ সুবিধা পর্যবেক্ষণ করতে পরিদর্শনে আসেন।
এই প্রথমবার ভাসানচর আসলো ইউএনএইচসিআর’র কোনো প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধা পর্যবেক্ষণে গেলে রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ শুরু করে তাদের সুযোগ সুবিধার জন্য।
তারা হেলিকপ্টার থেকে অবতরনের পর পরই রোহিঙ্গারা প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকাসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা হেলিকপ্টারের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশী বাধা পেয়ে মারমুখী হয়ে ওয়্যার হাউজে ভাংচুর চালায়।
এ সময় পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। পরিস্থিতি শান্ত হলে দুই ঘণ্টা পর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন এবং দুপুরের খাওয়া শেষে তারা ভাসানচর ত্যাগ করেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর আগে থেকে আছেন আরও প্রায় চার লাখ। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে ৩৪টি ক্যাম্পে।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নৌবাহিনীর জাহাজে করে ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হয়। সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটি ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
সরকার সেখানে মোট এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
পাশাপাশি সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য আয়ের সুযোগ রেখেছে, শিশুদের জন্য শিক্ষা ছাড়াও নানা সুযোগ-সুবিধা আছে।
রোহিঙ্গারা শুরুতে ভাসানচরে যেতে রাজি ছিল না। তবে পরে সেখানে সুযোগ-সুবিধা দেখে তাদের সন্তোষ প্রকাশের খবরও এসেছে গণমাধ্যমে।
তবে সম্প্রতি ভাসানচর থেকে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা পালিয়ে কক্সবাজার চলে গেছেন।
আটক রোহিঙ্গাদের কয়েকজন।
নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৩ শিশুসহ ১০ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। রবিবার (৩০ মে) দিবাগত মধ্যরাতে তাদের উপজেলার ইছাখালী এলাকা থেকে আটক করে। রোহিঙ্গাদের পালাতে সাহায্য করা দালালচক্রের তিন সদস্যকেও আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ মে দিবাগত রাতে ভাসানচর আশ্রায়ন প্রকল্প থেকে দালালদের সাহায্য নিয়ে ইঞ্জিনচালিত বোটে সাগর পার হয়ে ৩ শিশুসহ ১০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ মিরসরাইয়ের ইছাখালী এসে অবস্থান নেয়। এসময় খবর পেয়ে দালালচক্রের ৩ সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের আটক করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।
আটক হওয়া দালাল চক্রের সদস্যরা হলো, নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বেলাল হোসেন (২৮), একই এলাকার মো. জুয়েল (২০) ও সন্দীপ উপজেলার দিদারুল আলম (২১)।
আটক রোহিঙ্গারা হলো- নূরজাহান বেগম (২০), রেহানা আক্তার (১৯), আছিয়া বেগম (১৮), নূর খাইয়াছ (২৫), মিনারা বেগম (২০), মনিয়া বেগম (২০), কহিনা আক্তার (৩২), জিসান (১০), জান্নাতুল নাঈমা (৮) ও জেসমিন আক্তার (১২)।
মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, এসব রোহিঙ্গা দালাল চক্রের সাহায্যে সাগর পার হয়ে জোরারগঞ্জের ইছাখালী ইউনিয়ন এলাকায় আসলে খবর পেয়ে তাদের আটক করা হয়। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৈদেশিক আইনে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল (রবিবার) ভাসানচর থেকে পালানোর সময় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে ১৪ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় জনগণ।
এ নিয়ে গত দেড় মাসে পাঁচ দফায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা মোট ৩৯ জন রোহিঙ্গাকে সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় আটক করে পুলিশ।
Posted ৬:৫৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ৩১ মে ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta