শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র অনিয়ম ও বর্জ্য ‘সঙ্কটে’ চালু হচ্ছে না

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০
523 ভিউ
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র অনিয়ম ও বর্জ্য ‘সঙ্কটে’ চালু হচ্ছে না

কক্সবাংলা রিপোর্ট :: কক্সবাজারের পরিবেশের উন্নয়নে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি জৈব সার উৎপাদনে ‘সিভিএম কম্পোস্ট প্লান্ট’ বা জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের দেড় একর জায়গার ওপর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। উদ্বোধন শেষে ২০১৮ সালের শেষে দিকে কেন্দ্রটি কক্সবাজার পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে পরিবেশ অধিদফতর।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল, পর্যটন নগরীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও রেস্টুরেন্টগুলোতে উৎপাদিত বর্জ্য সংগ্রহ করে তা থেকে জৈব সার উৎপাদন করা। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই বর্জ্য ‘সঙ্কটে’ চালু হয়নি প্রকল্পটি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পৌর কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা, অদক্ষতা এবং অনিয়মের কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হলেও এখনও চালু হয়নি এর উৎপাদন কাজ।


প্রকল্প গ্রহণের প্রাক্কালে বলা হয়েছিল, কক্সবাজার শহরে ছোটবড় ১০টি বাজার রয়েছে। এ ছাড়া শহরের কয়েকশ রেস্তোরাঁ, ভ্রমণে আসা বিপুল সংখ্যক পর্যটক এবং শহরে ছয় শতাধিক বহুতল ভবনে বসবাসকারী প্রায় তিন লাখ মানুষের গৃহস্থালীর বর্জ্য থেকে প্রতিদিন অন্তত ৮০ টন বর্জ্য জমা হয়। এ বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ১২ মেট্রিক টন জৈব সার উৎপাদন করতে পারার কথা। যে সার স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করার কথা ছিল স্থানীয় কৃষকদের।

প্রকল্প গ্রহণের প্রাক্কালে এই ‘বিশাল সম্ভাবনা’র কথা বলা হলেও তা সঠিকভাবে সমীক্ষা করে বলা হয়নি বলে মনে করছেন সার উৎপাদনের কাজে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। তারা বলছেন প্রতিদিন ১০-১২ টনের মতো বর্জ্য আসে। এ থেকে পচনশীল বর্জ্য পাওয়া যায় দেড় থেকে দুই টন। এ থেকে সামান্য পরিমাণ সার উৎপাদন করা যায়।


তারা আরও জানিয়েছেন, প্রকল্প এলাকাটি পৌরসভা এলাকা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। পৌরসভার বর্জ্যের গাড়ির সংখ্যাও কম। এই দীর্ঘপথ যানবাহন চালাতে গিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়। তাছাড়া পৌর কর্তৃপক্ষের বর্জ্যবাহী গাড়িগুলো এতোদূর গিয়ে বর্জ্য দিতে আগ্রহী হয় না।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে এক ভুতুড়ে পরিবেশ। যত্রতত্র পড়ে আছে আবর্জনা। দুর্গন্ধে দম নেওয়া দায়। প্রকেল্পর চারপাশে প্লাস্টিক সামগ্রীর স্তূপ। ভেতরে জৈব সার নির্মাণের স্থানেও ময়লার স্তূপ। প্রকল্প এলাকায় দেখাও মেলেনি কর্তৃপক্ষের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারীর।


বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিমজম (সিডিএম) প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সিভিএম কম্পোস্ট প্লাট’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতর। এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কক্সবাজার পৌরসভার। বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। কিন্তু সঠিক সময়ে পৌর কর্তৃপক্ষ জমি দিতে না পারায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ফেরত যায়। এরপর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

এ নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্য দিচ্ছে পরিবেশ অধিদফতর ও কক্সবাজার পৌরসভা। পরিবেশ অধিদফতর বলছে, সঠিক সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে কক্সবাজার পৌরসভাকে হস্তান্তর করা করেছে। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে আসল উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। এখানে তাদের আর কোনও দায়িত্ব নেই।

পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি চালু রাখতে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ‘মেগা অর্গানিক বাংলাদেশ’ এবং ‘সেবক এগ্রোভেন্ট’ নাম দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পচনশীল বর্জ্য তাদের সরবরাহ করবে। আর জমি ব্যবহারের জন্য পৌরসভাকে মাসিক ৫ হাজার টাকা করে দেবে। কিন্তু চুক্তির কোনওটিই বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।


তাদের অভিযোগ পৌরসভা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য আলোর মুখ দেখছে না। প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য পাওয়ার কথা ছিল তাও পাচ্ছে না। ফলে সার উৎপাদন তো দূরের কথা উল্টো ক্ষতি কমাতে কর্মচারী ছাঁটাই করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে মেগা অর্গানিক বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ভূমি ব্যবহার ও মাসিক ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় আমাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। পৌরসভার সঙ্গে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি ছিল তারা সেটা করতে পারছে না। কাজ করতে গিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনও সহযোগিতা পাইনি। চুক্তি অনুযায়ী পৌর কর্তৃপক্ষ তার আওতাধীন এলাকার পচনশীল বর্জ্য আমাদের কাছে পৌঁছাবে। শুরুতে কিছুটা বর্জ্য দিলেও পরে তারা কথা রাখেনি। বারবার পৌরসভার মেয়রের সাথে কথা বলেও সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের যে বর্জ্য দিচ্ছে তার মধ্যে প্রতি একটন বর্জ্য থেকে বাছাই করে ১০০ কেজির মতো পচনশীল বর্জ্য পাই। অধিকাংশই প্লাস্টিক ও পলিথিন। এগুলো দেওয়ার কথা ছিল না। তাদের সরবরাহকৃত বর্জ্য থেকে যে সার তৈরি হয় তাতে প্রতি কেজিতে ২০ টাকার মতো খরচ হয়। কিন্তু বিক্রি করতে পারি ১০-১২ টাকায়। গত দুই বছরে এই প্রকল্পে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়েছে। এরপরেও প্রকল্পটি চালু রাখতে চেয়েছিলাম। করোনাকালে বন্ধ করার পর আর চালু করতে পারিনি। পৌর কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে সুন্দরভাবে এই প্রকল্প চালানো যাবে।


কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক শেখ নাজমুল হক বলেন, পরিবেশ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে ২০১৮ সালে পৌরসভাকে হস্তান্তর করেছে। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে না বলে প্রতিষ্ঠান দুটি জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলার পরও কোনও সুরাহা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর পরিবেশ অধিদফতরের কোনও দায়িত্ব নেই দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল আলম বলেন, আমরা যেদিন থেকে মেগা অর্গানিক বাংলাদেশ-এর সঙ্গে চুক্তি করেছি সেদিন থেকে সব দায়িত্ব তাদের হাতে দিয়েছি। এখানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোনও দায়ভার নেই। তারা আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ময়লা সংগ্রহ করবে। কিন্তু তারা তা করছেন না।

বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কবির হোসেন বলেন, জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্রটি যাদের হাতে দেওয়া হয়েছে তারা অদক্ষ এবং অযোগ্য প্রতিষ্ঠান। আমরা একবার ময়লা নিয়ে গেলে বলে আর ময়লা না নিতে। তাই অনেক সময় আমরা ময়লা নিয়ে যাই না।

523 ভিউ

Posted ১০:৫৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com