মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ২৬শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরছে স্বস্তির পরিবেশ : একমাসে গ্রেপ্তার ১১৫ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী

শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১
187 ভিউ
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরছে স্বস্তির পরিবেশ : একমাসে গ্রেপ্তার ১১৫ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী

বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজার শরনার্থী শিবিরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ও শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড এবং ২২ অক্টোবর সিক্স মার্ডারের নৃশংসতার পর বদলে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চিত্র।

সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে সেখানে দিন কাটছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের জীবন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আগের চেয়ে কঠোর হলেও আশ্বস্ত হতে পারছিলেন না তাঁরা। তাই এবার রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে লাঠি আর বাঁশি। এতে কাজ হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার চিত্র।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সূত্র বলছে, তাদের সহযোগিতায় গত এক মাসে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। অন্তত ১১৫ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। ফিরে এসেছে স্বস্তি।

এই বদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-৮-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম।

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জনাকীর্ণ ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ রোহিঙ্গারা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগেই প্রশাসনকে তথ্য দিলে বড় ধরনের অঘটন এড়ানো যায়।

রোহিঙ্গা বাসিন্দা ও এপিবিএনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উখিয়ায় সিক্স মার্ডারের পর গত ২৩ অক্টোবর প্রথমে শফিউল্লাহ কাটা (ক্যাম্প-১৬) ও জামতলী ক্যাম্পে (ক্যাম্প-১৫) রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকা রাতে পাহারার আয়োজন করেন এপিবিএন-৮-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম। এরপর ১০ নভেম্বর থেকে উখিয়ার সব ক্যাম্পে এই পদ্ধতি চালু করে নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়।

উখিয়ায় মোট ১১টি ক্যাম্পের ব্লক ৬৪টি আর সাব-ব্লক ৭৭৩টি। এসব ক্যাম্পে ৩ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ জন রোহিঙ্গার বসবাস। শুধু জামতলী ক্যাম্পে আছে ৫৩ হাজার ৪৬০ জন।

প্রতিদিন ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গড়ে ৩ হাজার ৮০০ জন পাহারাদার রয়েছেন। পালা করে ১৫ থেকে ২০ দিন পরপর একেকজনের পাহারার দায়িত্ব পড়ে। মোট পাহারা পোস্ট ১০১টি। প্রত্যেক পাহারাদার টিমের দলনেতার মোবাইল নম্বর পুলিশের কাছে রয়েছে। আবার তাঁদের কাছেও পুলিশের নম্বর রয়েছে। কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার আভাস পেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেন তাঁরা।

উখিয়ার জামতলীর বি ব্লকের মাঝি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সবাই মিলে পাহারা দিচ্ছি। ভয়ে কোনো খারাপ লোক এলাকায় ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। প্রথমে শুধু হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা দিতাম। এখন বাঁশিও পেয়েছি।’

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে কুতুপালং ক্যাম্পে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহকে। এরপর ২২ অক্টোবর রাতে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ছয়জনকে হত্যা করার ঘটনা ঘটে। এরপরই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাম্প টহল জোরদার করে। এর পাশাপাশি রাতে শুরু করে ব্লক অভিযান।

মাঝি বাছেদ বলেন, ‘কিছু লোকের কারণেই ক্যাম্পের পরিবেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। কথা না শুনলে ওরা একে-ওকে মারধর করে। মাসখানেক আগেই এইচ ব্লকে এক তরুণীর ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তাঁকে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ। এতে রাজি না হওয়ায় তাঁর এ পরিণতি।’

বাছেদ আরও বলেন, ‘অনেকে আরসার নাম ভাঙিয়ে ভয় দেখানোরও চেষ্টা করে। ছলিম নামে একজন নিজেকে জামতলীর চারটি ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কমান্ডার বলে দাবি করত। তারা আশপাশের এলাকা প্রায় জিম্মি করে রেখেছিল। সন্ধ্যা নামলেই তাদের উৎপাত বাড়ত। তবে এখন সাধারণ রোহিঙ্গারা এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে রুখে দিচ্ছে। মাসখানেক ধরে রাতে ক্যাম্পে পালাক্রমে সাধারণ রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

নিজ এলাকায় যারা নিরাপত্তা দিচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকে লাঠি। রাতে কেউ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এরই মধ্যে জামতলী ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মৌলভি মনির, ছলিম, ইয়াহিয়া, ইমাম হোসেন, মৌলভি নাসিরকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এরপর থেকে ক্যাম্পে অনেকটাই স্বস্তির পরিবেশ ফিরে এসেছে।’

শুক্রবার এপিবিএন-৮-এর অধীন ১১টি ক্যাম্পে অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ সিহাব কায়সার খান শফিউল্লাহ কাটা ও জামতলী পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে ক্যাম্প কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে বাঁশি বিতরণ করেন।

এ ব্যাপারে অধিনায়ক মোহাম্মাদ সিহাব কায়সার খান বলেন, ‘আমাদের আওতাধীন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির রোহিঙ্গা সদস্যের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। তারা আমাদের প্রবর্তিত স্বেচ্ছা-পাহারাব্যবস্থার প্রতি সম্মান রেখে প্রতিদিন রাতে পাহারা দিচ্ছে। এতে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা একের পর এক গ্রেপ্তার হচ্ছে এবং অনেকে গা-ঢাকা দিয়েছে। এই পাহারাব্যবস্থার মাধ্যমে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য সদস্যরা দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন মহলেও এ ব্যবস্থা প্রশংসিত হচ্ছে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট কমিউনিটিকে যুক্ত করা পুলিশের একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। এখান থেকেই রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে রাতের পাহারার চিন্তা করি। তার পরের বিষয়টি তো সবাই দেখছেন। তা ছাড়া তাদের সাহায্যেই অন্তত ১১৫ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

পালা করে ক্যাম্প পাহারা দেন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

187 ভিউ

Posted ১১:০২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com