মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের শুক্রবার থেকে স্থানান্তর হচ্ছে ভাসানচরে

বৃহস্পতিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২০
505 ভিউ
কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের শুক্রবার থেকে স্থানান্তর হচ্ছে ভাসানচরে

কক্সবাংলা রিপোর্ট :: অবশেষে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর অব্যাহত চাপ ও বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও আগামী দু-একদিনের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের প্রথম দল যাচ্ছে ভাসানচরে। ৩০০ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গার দলটি কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো থেকে সরাসরি ভাসানচরের অত্যাধুনিক আবাসন প্রকল্পে যাবেন। রোহিঙ্গাদের এই অংশটি সম্পূর্ণ নিজেদের ইচ্ছায় ভাসানচরে গিয়ে থাকতে রাজি হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে আরও এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সব প্রস্তুতি স্বাভাবিকভাবে চললে শুক্রবার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু হতে পারে। কক্সবাজারের চেয়ে ভালো পরিবেশ, পরিকল্পিত অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধার কারণে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে প্রথম দফায় প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হতে পারে।

জানা গেছে, ভাসানচরে স্থানান্তরে আগ্রহীদের কক্সবাজার থেকে কভিড পরীক্ষা করিয়ে বাসে করে আনা হবে চট্টগ্রাম। সেখান থেকে জাহাজে করে তাদের স্থানান্তর করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের অংশ হিসেবে ৫০০ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে এই দ্বীপে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬৬ টন খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রী দ্বীপটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।‘১২০টি গুচ্ছগ্রামে প্রায় এক লাখ লোকের আবাসনের জন্য ভাসানচর প্রকল্প প্রস্তুত।

এদিকে, গত রোববার প্রায় ২২ এনজিওর প্রতিনিধিরা দ্বীপটি পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানকার সামগ্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

তারা জানান, দ্বীপটি পুরোপুরি একটি শহরে পরিণত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের বর্তমান জীবনযাত্রার তুলনায় এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো।

পালস বাংলাদেশ সোসাইটির সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী তুহিন সেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা উচিৎ। এখানে অনেক জায়গা। পরিবারগুলোর নিজস্ব জায়গা থাকবে। কক্সবাজারের তুলনায় এই জায়গা নিরাপদ।’

মাল্টি-সার্ভ ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা অস্থায়ী টয়লেট ব্যবহার করছে। সেগুলো অস্বাস্থ্যকর। ভাসানচরে সব টয়লেট স্থায়ী, কংক্রিটের এবং স্বাস্থ্যকর।’

এসএডব্লিউএবির সমন্বয়ক এস এম ইমাদুল ইসলাম কক্সবাজারের ভূমিধ্বসের ঝুঁকির কথা জানান।

‘সুতরাং, এই দ্বীপটিতে বসবাস করা তাদের জন্য আরও নিরাপদ,’ বলেন তিনি।

আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল এনজিও’র মিডিয়া সহকারী এনাম আহমেদ জানান, দ্বীপটিতে দুটি হাসপাতাল আছে এবং জরুরি অবস্থার জন্য সি-অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টার আছে। সুতরাং, এখানকার চিকিত্সা ব্যবস্থা আরও ভালো।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, গত রোববার প্রায় ২১৩ জন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) দ্বীপটিতে গেছেন। এ ছাড়া, প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য সেখানকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখতে কাজ শুরু করেছে, যাদের মধ্যে ১০ জন নারী সদস্যও আছেন।

ভাসানচরের মোট আয়তন প্রায় ১৩ হাজার একর। এর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ৪২৭ একর ব্যবহারযোগ্য। এই আশ্রয়ণ প্রকল্প এক হাজার ৭০২ একর জুড়ে থাকলেও গুচ্ছ গ্রামগুলো প্রায় ৪৩২ একর জমির মধ্যে তৈরি করা হয়েছে।

জানা যায়, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। তবে, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর অনাগ্রহ ও নানা ধরনের বাহানার কারণে এতদিন তাদের সেখানে স্থানান্তর সম্ভব হয়নি।

করোনা মহামারীর শুরুর দিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বরে সরকার ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের অধীনে ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে চার দিনের সফরে ভাসানচর দেখাতে নিয়ে যায়। ভাসানচরে পরিদর্শন শেষে তারা জানিয়েছিলেন, ভাসানচরের সুবিধাদি দেখে ভালো লেগেছে। এরই মধ্যে ২২টি এনজিও থেকে দেওয়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভাসানচরে পৌঁছেছে।

রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের এক সভায় ভাসানচরের জন্য নেওয়া প্রকল্পের খরচ ৭৮৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। মোট ১২০টি ক্লাস্টার এবং ১২০টি শেল্টার স্টেশন নিয়ে গড়ে উঠেছে ভাসানচরের এ আশ্রয়ণ প্রকল্প।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগের ৪ লাখসহ বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করলেও মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরপর দুবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে পাঠানো যায়নি।

এদিকে বুধবার জাতিসংঘের বিবৃতিতে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের সরাসরি কোনো বিরোধিতার কথা স্থান পায়নি। জাতিসংঘ বলেছে, ‘স্থানান্তরের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।’

তবে বাংলাদেশে জাতিসংঘসহ অন্যান্য কূটনৈতিক মিশন রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার বিষয়ে অবগত বলেই জানা গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য কর্মকর্তা লুইজ ডনোভ্যান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ভাসানচরে প্রারম্ভিক স্থানান্তরের কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু করার সম্ভাবনাবিষয়ক কিছু প্রতিবেদন সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত।’

ঢাকার একটি হোটেলে বুধবার সকালে ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা জানতে চান, ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার তাদের জানিয়েছে কি না। জবাবে একজন রাষ্ট্রদূত মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক প্রতিক্রিয়া জানান। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেঞ্চা টিয়েরিংক কোনো মন্তব্য করেননি।

জাতিসংঘ বলেছে, রোহিঙ্গারা যেন প্রাসঙ্গিক, নির্ভুল এবং হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ বরাবরই আহ্বান জানিয়ে এসেছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতেও জাতিসংঘ এই বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করছে।

ভাসানচরে সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি সরেজমিন দেখাতে সরকার গত সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা নেতাদের একটি প্রতিনিধিকে ওই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা সে সময় দ্বীপের সুযোগ-সুবিধার প্রশংসা করেন।

জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘যেসব শরণার্থী ভাসানচরে স্বেচ্ছায় স্থানান্তরিত হতে চাইবেন ওই দ্বীপে তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবিকার নিশ্চয়তা এবং ওই দ্বীপ থেকে মূল ভূ-খণ্ডে চলাচলের স্বাধীনতাসহ সব মৌলিক অধিকার এবং মৌলিক সেবাগুলো নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ গুরুত্বারোপ করছে।’

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জেনোসাইড ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ জাতিসংঘ বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চলাফেরা ও জীবিকার অধিকার নিয়ে যেভাবে গুরুত্বারোপ করে আসছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। তবে জাতিসংঘ বলেছে, ভাসানচর নিয়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। সরকারেরও এ বিষয়ে আপত্তি নেই। বাংলাদেশ মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ারকে ভাসানচরে সরেজমিন পরিদর্শন করিয়েছে।

জাতিসংঘ অবশ্য বলেছে, ‘বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা এবং আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে যে উদারতা এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দিয়েছে তার জন্য জাতিসংঘ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে যে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে তাতে অংশীদারি বজায় রাখার ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি অটুট রয়েছে।’

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা সাময়িকভাবে আশ্রয় পাবে।

505 ভিউ

Posted ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com