বিশেষ প্রতিবেদক(২৪ নভেম্বর) :: কক্সবাজারে পযর্টনশিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহী আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ। এ জন্য তিনি কক্সবাজার-৩ ( রামু-কক্সবাজার সদর) আসন থেকে নৌকার মাঝি হতে ইচ্ছুক। ইতিমধ্যে তিনি দলের ফরমও জমা দিয়েছেন। আশা করছেন তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন।
আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ কক্সবাজার অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়নের জন্য সবসময় আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। বায়ান্নর ভাষা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য। ভাষা শহীদ সালামের দৌহিত্র তিনি । মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে তাঁদের পরিবার কাজ করে গেছে সবসময়।
২০০৪ সাল থেকে মাত্র আটজন কর্মী নিয়ে ‘মারমেইড ইকো টুরিজম লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন তিনি । ২০১৮ সালের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ২,০০০ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এ কারণে তিনি সফল একজন পযর্টন উদ্যোক্তাও ।
কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন আনিসুল হক সোহাগ। কক্সবাজারে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন তিনি। যা কক্সবাজারের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পরিকল্পনাগুলো হচ্ছে :
১. রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের ফলে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে তা দ্রুত পুনরুদ্ধার :
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনে কক্সবাজারের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের যে ক্ষতি সাধন হয়েছে তা বনায়ন ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করবো। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রোহিঙ্গাদের বাঁশ ও সবজি চাষে আগ্রহী করা। বাঁশ ও সবজি চাষে রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি অনেকটা পুনরুদ্ধার সম্ভব। বাঁশ গাছ দ্রুত বাড়ে। এটি ভূমি ধ্বস রোধে সহায়ক, এবং অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক।
২. ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে জেলেদের স্বাবলম্বী করা :
ডিজিটাল প্রযুক্তি তথা জিপিএস ( গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) সিস্টেমের মাধ্যমে জেলেদের জীবনের মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নেবো।
কক্সবাজারে বহু জেলে প্রতি বছর গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ হয়। তাদের হাতে যদি জিপিএস থাকে তাহলে তারা সহজে এই প্রযুক্তির সহায়তার কুলে ফিরতে পারবে। এই প্রযুক্তি মাছ কোন জায়গায় বেশি পাওয়া যায় সেটিও শনাক্ত করতে সক্ষম।
আমি নিজে এই ধরণের একটি যন্ত্র স্থানীয় ইসমাইল নামের একজন জেলের হাতে দিয়েছি। তিনি সেটি ব্যবহার করে লাভবান হয়েছেন। এটির দাম পড়েছিল মাত্র ৬০ ডলার। কোন একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এটি খুব সহজে ও আরও সস্তায় তৈরি করা সম্ভব।
৩. কক্সবাজারকে প্রযুক্তি হাবে রুপান্তরিত করা :
কক্সবাজারকে একটি প্রযুক্তি হাবে পরিণত করা সম্ভব। এরইমধ্যে ডিজিটাল কক্সবাজার গড়তে মহেশখালীতে নানা ধরণের উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। কক্সবাজার হবে একটি অগ্রসর আইটি বা তথপ্রযুক্তি হাব।
৪. কানেক্টিভিটি বা কক্সবাজারের সঙ্গে বাইরের দুনিয়ার যোগাযোগ বাড়িয়ে পর্যটন শিল্পের উন্নতি :
কিছুদিন আগেও ভাবনার বাইরে ছিল। কিন্তু এরইমধ্যে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর তৈরির কাজ প্রায় সম্পন্ন। এর ফলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প লাভবান হবে ব্যাপকভাবে।
চট্টগ্রামের দোহাজারির সঙ্গে কক্সবাজারের সরাসরি ট্রেন যোগাযাগও চালু হচ্ছে খুব শিগগির। এর ফলে দুই ঘন্টায় কক্সবাজার আসা সম্ভব হবে চট্টগ্রাম থেকে। এই নতুন ও দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে পর্যটন সম্ভাবনাকে জোরদার করতে চাই।
৫. পরিবেশ বান্ধব উপায়ে ঘরে ঘরে উন্নয়ন :
পেঁচার দ্বীপ এবং আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ আগে জীবিকার জন্য মাছের পোনা ধরত। যার ফলে মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষতি সাধন হতো। মারমেইড ইকো টুরিজম লিমিটেডে এরকম প্রায় ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। আমরা এরকম পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নে ফর্মুলায় বিশ্বাসী।
৬. রিসাইক্লিং এবং আপসাইক্লিং :
আমরা একটি ফেলে দেওয় মূল্যহীন বস্তুকে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে আবার নতুনভাবে কাজে লাগাতে পারি। এটি মারমেইড ইকো টুরিজম লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। এখন এটিকে আমরা আপসাইক্লিংয়ে রুপান্তর করেছি। যার মানে নতুন জিনিসটি হয় আগের জিনিসের চেয়ে বেশি মূল্যবান। এরকম বহু উদাহারণ মারমেইড বীচ রিসোর্টের আনাচে কানাচে খুঁজে পাওয়া যাবে।
৭. বিশে^র বৃহত্তম কচ্ছপ ভাস্কর্য এবং বিরল প্রজাতির কাছিম রক্ষায় জনসচেতনতা :
পেচার দ্বীপ কচ্ছপের চারণভূমি। এখানকার বিরল প্রজাতির কচ্ছপ রক্ষায় সচেতনতার জন্য আমরা তৈরি করেছি ‘গ্রিন টার্টল ভিজিটিং গ্রিন আর্থ’ নামে বিশে^র বৃহত্তম কচ্ছপের ভাষ্কর্য। যেটি এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাচে কক্সবাজরের বড় একটি আকর্ষণ।
৮. কক্সবাজারে ১০ বিলিয়ন ডলারের পর্যটন শিল্প :
আগামী দশ বছরের মধ্যে কক্সবাজারকে ১০ বিলিয়ন ডলারের পর্যটন শিল্পখাত হিসেবে পরিণত করবো।
৯. কক্সবাজারকেন্দ্রিক ১০ লাখ কর্মসংস্থান :
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২১ এর সঙ্গে সমন্বিত করে পর্যটন ও সংশ্লিষ্ট খাতে ২০২১ সালের মধ্যে ৫ লাখ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে প্রায় দশ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো।
১০. বঙ্গবন্ধু পর্যটন বিশ্ববিদালয় স্থাপন :
সুইজারল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার কারিগরি সহযোগিতায় কক্সবাজারে ‘বঙ্গবন্ধু পর্যটন বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করবো।
১১. বিশ্বের সর্বোচ্চ ‘বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য’ :
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য কক্সবাজারের হিমছড়িতে সমুদ্র সৈকতঘেঁষা পাহাড়ের চূড়ায় বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য তৈরি করবো। এটি হবে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভাস্কর্য।
১২. কক্সবাজার হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন নগরী :
১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘতম সৈকতের অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজারকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো।
১৩. আন্তর্জাতিক সম্মেলন নগরী হবে কক্সবাজার :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো, কক্সবাজারকে জেনেভার মতো আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেব।
১৪. কক্সবাজারে আগামী প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধু জাদুঘর স্থাপন:
কক্সবাজারে স্থাপিত হবে একটি আন্তর্জাতিক মানের বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। আগামী দিনের সুনাগরিক গড়ার লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে এমন একটি বিশেষ জাদুঘর নির্মাণই আমার লক্ষ্য।
১৫. কক্সবাজারের প্রতিটি পরিবার হবে পর্যটন পরিবার :
পর্যটন শিল্পের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আমার অন্যতম লক্ষ্য হবে কক্সবাজারের প্রতিটি পরিবারকে ‘পর্যটন পরিবার’ হিসেবে গড়ে তোলা। তারা সুবিশাল পর্যটন শিল্প থেকে কোনো না কোনোভাবে অবশ্যই যুক্ত ও লাভবান হবে।
১৬. দলের ত্যাগী কর্মীদের যথাযোগ্য মূল্যায়ন
দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী কর্মী ও তাদের সন্তানদের চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের যথাযোগ্য মূল্যায়ন করবো।
১৭. কক্সবাজারের মৎস শিল্পকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছানো :
কক্সবাজারের মৎস্য শিল্পকে যথাযথ ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চাই।
১৮. মাদক ও মানবপাচার মুক্ত কক্সবাজার :
পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কক্সবাজারকে মাদক ও মানবপাচারের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত রাখবো।
১৯. শিশুদের স্কুলমুখী করা :
প্রত্যন্ত ও বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় বিদ্যালয় নির্মাণের মাধ্যমে ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলমুখী করবো।
২০. কক্সবাজারে প্রতি ১০ কিলোমিটার অন্তর একটি হাসপাতাল :
কক্সবাজারে প্রতি ১০ কিলোমিটার অন্তর একটি উন্নতমান ও সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা সম্বলিত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবো।
২১. ঐতিহ্যবাহী ভবন সংরক্ষণ ও প্রদর্শন :
কক্সবাজারের সমস্ত প্রতœতাত্ত্বিক ও ঐতিহ্যবাহী ভবনকে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবো। এগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য উচ্চমানের অবকাশ যাপন কেন্দ্রে পরিণত করার উদ্যোগ নেব।
Posted ৬:৪১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta